৪৬% মানুষ এমএফএস সেবার বাইরে
Published: 25th, September 2025 GMT
দেশে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ভালো সম্ভাবনা থাকলেও সহায়ক নীতিমালার অভাব, ব্যবহারকারীদের আস্থাহীনতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়হীনতা, ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির উচ্চমূল্যের কারণে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) আয়োজনে ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা হয়।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ২০১১ সালে দেশে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) চালু হলেও বর্তমানে প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ এই সেবা ব্যবহার করছে। সেই হিসাবে এখনো ৪৬ শতাংশ মানুষ এই সেবার বাইরে রয়েছে। এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ডিজিটাল সেবা আরও সাশ্রয়ী করা, আর্থিক ও ডিজিটাল দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ডেটা নিবন্ধনের প্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়া ৫ কোটি নাগরিকের ডেটা ডার্ক ওয়েবে পাওয়া গেছে। তাই ডেটা এনক্রিপশনের প্রক্রিয়া যথাযথ হওয়ার পাশাপাশি নজরদারি জোরদার করতে হবে। সরকার ব্যক্তিগত ডেটা সংরক্ষণ অর্ডিনেন্স করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা আগামী এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো.
দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বাজার ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে রবি আজিয়াটার হেড অব কমার্শিয়াল পার্টনারশিপ সানজিদ হাসান। তিনি মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘আমাদের গতানুগতিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের বিষয়ে অনেকের আস্থার অভাব থাকায় সেখানে ডিজিটাল কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে। ডিজিটাল লেনদেনকে নিরাপদ করতে হলে একটি সমন্বিত সাইবার নিরাপত্তা ইকোসিস্টেম চালু করা দরকার। অন্যথা বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ইলিয়াস জিকো বলেন, আর্থিক খাতে ডিজিটাল ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসংখ্য গ্রাহক প্রতারিত হচ্ছেন। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব খোলার পর নবায়নের পদ্ধতি চালুর বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। তিনি জানান, প্রতিদিন প্রায় ১০-২০ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, আর্থিক খাতে ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কারণে খেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই আর্থিক অনিয়মের বিচার কার্যক্রমের সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তার অভাব। এ ছাড়া দেশের প্রথাগত ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে কোনো রূপকল্প বা রোডম্যাপ না থাকাটাও একটা সমস্যা।’
ওমেগা এক্সিমের পরিচালক রেজওয়ান আলী বলেন, ‘আমাদের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের বেশির ভাগই প্রথাগত পদ্ধতিতে চলছে। এই কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা কষ্টসাধ্য নয়। এখানে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বেটলস্ সাইবার সিকিউরিটির প্রধান সাইবার কার্যক্রম কর্মকর্তা শাহী মির্জা বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্যবহৃত কম্পিউটারের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিতের পাশাপাশি আর্থিক ডিজিটাল সেবা প্রদানে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ আর থ ক সমন ব ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি হলেও এখানে পেশা হিসেবে নার্সদের অমর্যাদাসম্পন্ন একটা অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নার্সদের ডাক্তারি ব্যবস্থার অধীন একটা পেশা হিসেবে যে দেখা হয়, আমরা মনে করি এটা ভুল। এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। নার্স সেবাটা স্বাস্থ্যসেবার একটা মৌলিক দিক। ফলে তাঁদের স্বাধীনভাবে এই পেশাকে চর্চা করবার সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বাস্থ্য আন্দোলন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।
সরকার স্বাস্থ্যকে এখন আর জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকার করছে না বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যকে অধিকার নয়, বাজারজাত পণ্য বানানো হয়েছে। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে নয়।’
নার্সদের স্বাধীন পেশাগত চর্চা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সদেরকে ডাক্তারদের হুকুমমতো চলতে হবে—এই ধারণা ভাঙতে হবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, প্রতিরোধও একটি বড় দিক। নার্সদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার এক মৌলিক দিক। কিন্তু আমাদের সমাজে চিকিৎসাকে ডাক্তারিকরণ বা মেডিক্যালাইজেশন করা হয়েছে। অনেক রোগে ডাক্তার কিংবা ওষুধের প্রয়োজনই হয় না। এ জায়গায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম। এক মাসের মধ্যে নার্সিং কমিশন গঠনের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিএনএর সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন তমাল। এতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন জরিনা খাতুন, সহসভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী।