ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা গাজা ও পশ্চিম তীরে প্রতিদিন লাখো ফিলিস্তিনির ফোন কলের তথ্য সংগ্রহ করত। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ কথা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রের বরাতে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে মাইক্রোসফট ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, তাদের সেনাবাহিনীর অভিজাত গোয়েন্দা সংস্থা ‘ইউনিট ৮২০০’ কোম্পানির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী মাইক্রোসফটের ‘আজুর’ ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্মে নজরদারির বিশাল ডেটা সংরক্ষণ করেছিল।

ইউনিট ৮২০০ কর্তৃক মাইক্রোসফটের আজুর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার নিয়ে গত মাসে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল গার্ডিয়ান। এই প্রতিবেদনের জেরেই ইসরায়েল সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাটির কিছু প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করল মাইক্রোসফট।

ব্যাপক নজরদারির কর্মসূচি পরিচালনা করতে আজুর ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কীভাবে ফিলিস্তিনিদের যোগাযোগের বিশাল তথ্যভান্ডার সংরক্ষণ ও ব্যবহার করছিল, তা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি মালিকানাধীন সাময়িকী ‘প্লাস৯৭২’ এবং হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম ‘লোকাল কল’ এর সঙ্গে যৌথভাবে তদন্তটি পরিচালনা করেছিল গার্ডিয়ান। মাইক্রোসফট ও ইউনিট ৮২০০ কীভাবে স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্যের বিশাল ভান্ডার আজুরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছিল, তা গার্ডিয়ানের যৌথ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল।

২০২১ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সত্য নাদেলা এবং ইউনিট ৮২০০-এর তৎকালীন কমান্ডার ইয়োসি সারিয়েলের বৈঠকের পর প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল।

গার্ডিয়ানে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের বাইরের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় মাইক্রোসফট। ইউনিট ৮২০০-এর সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনা করতে এই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্ত ফলাফলের ভিত্তিতে কিছু ক্লাউড স্টোরেজ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সেবা বাতিল করেছে মাইক্রোসফট।

আজুরের অসীম তথ্যসংরক্ষণ ও কম্পিউটিং সুবিধা ব্যবহার করে ব্যাপকতর নতুন নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করেছে ইউনিট ৮২০০। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনের পুরো জনগোষ্ঠীর মুঠোফোন কলের তথ্য সংগ্রহ করত। এসব কল তারা পুনরায় চালিয়ে দেখত ও বিশ্লেষণ করত।

মাইক্রোসফট ও ইউনিট ৮২০০-এর প্রকল্পটি ছিল ব্যাপক বিস্তৃত। ইউনিট ৮২০০-এর কয়েকটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটির কাজের ধরন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সমতুল্য। এর ব্যাপ্তি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা বোঝাত ইসরায়েল সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাটির মধ্যে একটি কথা চালু ছিল—‘ঘণ্টায় ১০ লাখ কল।’

আরও পড়ুননজরদারিশিল্পের বিকাশে ফিলিস্তিনিরা যেভাবে গিনিপিগ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ইসর য় ল র নজরদ র কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসব শেষ করার জন্য পুলিশ, র‍্যাব, এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

আরো পড়ুন:

ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা

বুড়িগঙ্গায় চলছে প্রতিমা বিসর্জন

পুলিশ জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা এবং বিসর্জন স্থানসমূহে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। শুধু ঢাকাতেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য এবং অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র‍্যাবের ৯৪টি টহল টিম সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।

বিশেষ নজরদারি
প্রতিমা বিসর্জনের মূল ঘাটগুলো, যেমন—পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাট এলাকায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ঘাটকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত
যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত, বোম ডিসপোজালও কে-নাইন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নৌ-নিরাপত্তা:
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তিদের নৌকায় উঠতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। বিসর্জনস্থলে প্রশিক্ষিত ডাইভার (ডুবুরি দল) প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
শোভাযাত্রার পথ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পূজা কমিটির প্রতি নির্দেশনা:
পূজামণ্ডপগুলোতে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মণ্ডপে ব্যাগ, থলে বা পোঁটলা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর তৎপরতায় প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করা বাংলাদেশিরা নজরদারিতে: আইজিপি