সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো নিয়ে মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে সিলেটের পাথর কোয়ারি এলাকাগুলো আগের রূপে ফিরিয়ে আনা ও মহাপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর, জাফলংসহ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন। তাঁরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। এ সময় কমিটির সভাপতি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ন ম বজলুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া সিলেটের জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, বন বিভাগের প্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও পর্যটন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শনকালে আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষিত রেখে স্থানীয়রাদের সম্পৃক্ত করে আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। যাতে আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা উন্নত অভিজ্ঞতা পান। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন, পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই এ মহাপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।’

আরও পড়ুনছুটিতে সিলেটের আকর্ষণীয় জায়গাগুলো যেভাবে ঘুরে দেখতে পারেন০২ এপ্রিল ২০২৫

কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটি দ্রুতই কাজ শুরু করতে চাচ্ছে।

মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, পর্যটকদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকবে। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো তৈরি এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে উপস্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ‘ইকো-ট্যুরিজম’ ও ‘কমিউনিটি-বেইজড ট্যুরিজম’ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দারা সরাসরি উপকৃত হন।

আরও পড়ুনটানা বৃষ্টিতে আরও মোহনীয় সিলেটের সাদা পাথর, বেড়েছে পর্যটক০৪ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

পূজার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড়

চারপাশে সবুজ পাহাড়, আঁকাবাঁকা পথ আর পাহাড়চূড়ায় ভেসে থাকা মেঘ যেন প্রকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর এক ক্যানভাস। বর্ষা মৌসুমে এ দৃশ্য আরো মোহনীয় হয়ে ওঠে। আকাশ আর পাহাড়ের মিলনে সৃষ্টি হয় অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যপট, যা ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে ওঠে। এই সৌন্দর্যের টানেই ছুটে আসেন হাজারো মানুষ পাহাড়কন্যা বান্দরবানে।

এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে টানা চার দিন সরকারি ছুটির দ্বিতীয় দিনেও বান্দরবানে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। হোটেল, রিসোর্ট, কটেজ কোথাও সিট খালি নেই। শহরের প্রতিটি হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, সম্প্রতি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে সহিংসতার কারণে পর্যটকরা সেদিক থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে, বিকল্প হিসেবে নিরাপদ ও মনোরম পর্যটন স্পট বান্দরবানই হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম পছন্দ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর উৎসবের উচ্ছ্বাস মিলে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।

বান্দরবান শহরের আশপাশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। নীলাচল, শৈলপ্রপাত, গোল্ডেন মন্দির এবং মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খোলা জিপে (চাদের গাড়ি) বা বন্ধুদের সাথে মোটরসাইকেলে চেপে ছুটে যাচ্ছেন গন্তব্যের পথে। পাহাড়ের চূড়ায় গোল টেবিলে বসে কেউ কেউ আড্ডায় মেতে উঠেছেন। স্মরণীয় মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে দর্শনার্থীরা স্মৃতি হিসেবে তা ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন।

বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন স্পটে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সময় পেলেই আমি বান্দরবানে ছুটে আসি। প্রকৃতির যে অপরূপ সৌন্দর্য এখানে, না এলে কেউ তা উপলব্ধি করতে পারবেন না। সত্যিই বাংলাদেশের প্রকৃতির আসল রূপ লুকিয়ে আছে এই পাহাড়ে। আমার মনে হয়, পাহাড়ে ঘুরতে চাইলে বান্দরবানই সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা।

আরেক পর্যটক রফিকুল আলম বলেন, এখনো বর্ষার রঙে রঙিন পাহাড়। ভরে আছে সবুজে। পাহাড় একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে। ঝর্ণাগুলোও দারুণ। রুপালি ঝর্ণা ও শৈলপ্রপাত দেখছি। স্রোতের মতো পানি ওপর থেকে টুপটাপ নেমে আসছে। এমন মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো সত্যিই অসাধারণ। 

খুলনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক নজরুল ইসলাম বলেন, পূজার ছুটিতে পরিবারকে নিয়ে প্রথমবারের মতো বান্দরবান ভ্রমণে এসেছি। পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে, আমার ছোট ছেলে পাহাড়ঘেরা এই মনোরম পরিবেশে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। তার উচ্ছ্বাস আর হাসিখুশি মুখ দেখে আমারও মন ভরে যাচ্ছে।

বান্দরবান জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, গত ৬ জুন রুমার বগা লেক এবং থানচির তিন্দু ও তুমাতুঙ্গি এলাকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। কেওক্রাডং খোলার পর পর্যটক আরো বেড়েছে।

তিনি আরো জানান, দুর্গাপূজার ছুটিতে প্রচুর পর্যটক বান্দরবানে এসেছেন। হোটেল-মোটেলগুলো ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত শতভাগ বুকিং হয়েছে। 

থানচির নাফাখুম পর্যটকদের জন্য দ্রুত উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন।

পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বান্দরবান জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, শারদীয়া দুর্গাপূজার ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। বান্দরবানের মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টহল অব্যাহত রয়েছে। সাদা পোশাকেও তদারকি চলছে।

তিনি বলেন, বান্দরবানে কিছু দুর্গম অঞ্চল আছে। সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আশা করছি, যারা বান্দরবানে ঘুরতে আসছেন, তারা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারবেন।

ঢাকা/চাইমং/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পর্যটকে পরিপূর্ণ কুয়াকাটা
  • পূজার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড়
  • ইউনেসকো–ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে কোনগুলো পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি টানে
  • উন্মুক্ত কেওক্রাডং, স্বস্তিতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা 
  • চালু থাকছে লাইফগার্ড সেবা, পর্যটকদের স্বস্তি