শরতেও ফুটেছে বাসন্তীলতার ফুল
Published: 26th, September 2025 GMT
শারদ সকালের কোমল রোদটা পড়েছে এক ঝোপ লতানো গাছের সবুজ পাতার ওপরে। পাতাগুলোর গাঢ় সবুজ রং তাতে চিকচিক করছে। সেসব পাতার ঝোপের মাঝে মাঝে ফুটে রয়েছে ফানেল আকৃতির কয়েকটা উজ্জ্বল হলুদ ফুল। রমনা উদ্যানের এই একটিমাত্র স্থানেই এ গাছের দেখা পেলাম। লতানো সে গাছ একটা লোহার খিলানের ওপর জেঁকে বসেছে, উদ্ভ্রান্ত ডালপালাগুলোকে সেই খিলানটা শাসন করে ধরে রেখেছে। গাছটার ইংরেজি নাম ক্যাট’স ক্ল ভাইন, বাংলা নাম বাসন্তীলতা।
রমনায় যে গাছটি আছে, তা জানতে পেরেছিলাম সৌরভ মাহমুদের শ্যামলী রমনা বইটি থেকে। সে বইটিতে রমনা উদ্যানের ২৮টি লতানো গাছের উল্লেখ রয়েছে। সে তালিকায় রয়েছে ক্যাট’স ক্ল ক্রিপার গাছটি। তিনি একে শরতের ফুল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রমনায় যে এ গাছ আছে, তা তিনি লিখেছেন, সঙ্গে ছবিও দিয়েছেন। কিন্তু গাছটি ঠিক কোথায়, সেটি নিশ্চিত করতে অনেক দিন কেটে গেছে। ফুল-ফলবিহীন শুধু গাছ বা পাতা দেখে কেবল অভিজ্ঞজনেরাই বুঝতে পারেন। যে গাছ কখনো চোখে দেখা হয়নি, তাকে শুধু ছাপানো ছবির ওপর নির্ভর করে সঠিকভাবে শনাক্ত করা অত্যন্ত মুশকিল।
সে ফুলগুলোকে ঠিক বসন্তদূত হিসেবে স্বীকার করে নিতে পারছিলাম না। কিছু ছবি তুলে চলে এলাম, তবু মনে একটা আনন্দের সুর ভেসে বেড়াতে লাগল এই ভেবে যে অন্তত গাছটার অবস্থানটা নিশ্চিত করা গেছে।অবশেষে সে গাছে প্রথম ফুলের দেখা পেলাম এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি—বসন্তকালে। সে সময় শীতে কাবু গাছটার পাতাগুলো ছিল ম্লান, হাড়গোড়ের মতো বেরিয়ে পড়েছিল পাতাখসা লতাগুলো। লতায় ঘণ্টার মতো ফুলগুলো ঝুলে ছিল, ফুলের রংও ছিল
ফ্যাকাশে ম্লান বা ফিকে হলুদ। সে ফুলগুলোকে ঠিক বসন্তদূত হিসেবে স্বীকার করে নিতে পারছিলাম না। কিছু ছবি তুলে চলে এলাম, তবু মনে একটা আনন্দের সুর ভেসে বেড়াতে লাগল এই ভেবে যে অন্তত গাছটার অবস্থানটা নিশ্চিত করা গেছে।
এ বছর কয়েকবারই গ্রীষ্মের পর সে গাছের কাছে গিয়েছি। ফুল না দেখে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি। অবশেষে ভাদ্রের এক সকালবেলায় সে গাছে ফুলের দেখা পেলাম। তখনকার ফুলগুলোর চেয়ে এ সময়ে ফোটা ফুলগুলোকে মনে হলো বেশি লাবণ্যময়ী, হলদে রংটা আরও উজ্জ্বল। পাতাগুলোও বর্ষার জল খেয়ে বেশ তাগড়া হয়ে উঠেছে।
প্রকৃতিবিষয়ক লেখক মোকারম হোসেনের বাংলাদেশের পুষ্প-বৃক্ষ-লতা-গুল্ম বইয়ের ১৭২ পৃষ্ঠায় অবশেষে এর বাংলা নাম পেলাম বাসন্তীলতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এ গাছ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ বইয়ে এ গাছের কোনো নামগন্ধ পেলাম না। অন্য কোনো বইয়েও পেলাম না। সন্দেহ রয়ে গেল মনে, তাহলে কি গাছটি সপুষ্পক উদ্ভিদের তালিকায় নেই? বইটির সপ্তম খণ্ডে বিগ্নোনিয়েসি গোত্রে বাংলাদেশের ১৬টি উদ্ভিদ প্রজাতির নাম থাকলেও এ প্রজাতির নাম নেই। গাছটি দেশের আরও দু-এক জায়গায় থাকতে পারে, তবে তা সুলভ যে নয়, তা বলা যায়।
এবার শরতেও দেখলাম সে গাছে ফুল ফুটছে। ফুলে ঘ্রাণ নেই। এককভাবে বা দুই থেকে তিনটি ফুল গুচ্ছাকারে ফোটে। ফুল শেষে ফল হয়, ফল লম্বা, চ্যাপটা ও ক্যাপসুল আকৃতির।অবশেষে অন্তর্জালে এর কিছু বিবরণ পেলাম। এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Dolichandra unguis-cati ও গোত্র বিগ্নোনিয়েসি। আরোহী লতা হিসেবে এ গাছ দ্রুত বেড়ে সে জায়গা দখলে নিয়ে নিতে পারে। এ জন্য কোনো কোনো দেশে এটি আগ্রাসী আগাছা, আমাদের দেশে সুদর্শন উদ্ভিদ হিসেবে দেখা হয়। গাছ আধা পাতাঝরা স্বভাবের, অর্থাৎ শীতে পাতা ঝরলেও সম্পূর্ণ নিষ্পত্র হয় না। লতা থেকে কিছু সরু বায়ব মূল জন্মে, যা খানিকটা আঁকড়ির কাজ করে। পাতা গাঢ় সবুজ, দ্বিপত্রিক, অগ্রভাগ সূক্ষ্ম, কিনারা ঢেউখেলানো। মাটির নিচে শিকড়গুলো আলুর মতো ফুলে কন্দ গঠন করে। ফুল হলুদ, ফানেল বা সরু ঘণ্টাকৃতির, পুষ্পনলের মুখে পাঁচটি পাপড়ি গোড়ার দিকে যুক্ত থাকলেও মুখের দিকে পাঁচটি খাঁজ থাকে। সাধারণত বসন্ত-গ্রীষ্মে ফুল ফোটে। এবার শরতেও দেখলাম সে গাছে ফুল ফুটছে। ফুলে ঘ্রাণ নেই। এককভাবে বা দুই থেকে তিনটি ফুল গুচ্ছাকারে ফোটে। ফুল শেষে ফল হয়, ফল লম্বা, চ্যাপটা ও ক্যাপসুল আকৃতির। প্রতিটি ক্যাপসুল বা প্রকোষ্ঠে ১০০ থেকে ২০০টি বীজ থাকে। মাটির নিচে থাকা কন্দ থেকে বংশবৃদ্ধি ঘটে।
লোকচিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। এ গাছের ঔষধি গুণ নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। গাছটি সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।এ ফুলের গাছ এ দেশে এসেছে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। লোনা মাটি ছাড়া আর প্রায় সব মাটিতেই এ গাছ হয়। রোদেলা জায়গায় গাছ ভালো হয়। বিভিন্ন উদ্যান ও পথের ধারে এ গাছ লাগানো যায়। গাছ দ্রুত বাড়ে, গাছের জন্য অবলম্বন দরকার। না হলে মাটিতেই লতা শায়িত হয়ে বাড়তে থাকে। এ গাছের কিছু ঔষধি গুণ আছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বাতব্যথা, আমাশয়, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগের লোকচিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। এ গাছের ঔষধি গুণ নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। গাছটি সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্মানসূচক অস্কার পেলেন টম ক্রুজ
ফিল্ম আইকন টম ক্রুজকে সম্মানসূচক অস্কার প্রদান করা হয়েছে। রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে গভর্নর্স অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চে এই পুরস্কার টম ক্রুজের হাতে তুলে দেন মেক্সিকান নির্মাতা আলেহান্দ্রো জি. ইনারিতু।
তাছাড়া একই সম্মানসূচক পুরস্কার পেয়েছেন কোরিওগ্রাফার ও অভিনেত্রী ডেবি অ্যালেন, মিউজিক আইকন ডলি পার্টন এবং প্রোডাকশ ডিজাইনার উইন থমাস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য হলিউড রিপোর্টার এ খবর প্রকাশ করেছে।
আরো পড়ুন:
কনসার্টে গায়ক একনের পরনের প্যান্ট নিয়ে টানাটানি
চতুর্থ সন্তানের মা হলেন কার্ডি বি
টম ক্রজ বলেন, “সিনেমা আমাকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে। ভিন্নবিষয়কে উপলদ্ধি করা ও সম্মান করতে এটি আমাকে সাহায্য করে। পৃথিবীর যেখান থেকেই আসি না কেন, থিয়েটারে আমরা একসঙ্গে হাসি, একসঙ্গে অনুভব করি, একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি। আর এটাই এই শিল্পের শক্তি। এ কারণেই এটি গুরুত্বপূর্ণ, এ কারণেই এটি আমার কাছে অর্থবহ। তাই চলচ্চিত্র তৈরি করা শুধু আমার কাজ নয়, আমি কে, এটি তারই অংশ।”
অ্যাকাডেমির সভাপতি জ্যানেট ইয়াং প্রেস বিজ্ঞপ্তি বলেন, “অ্যাকাডেমির বোর্ড অব গভর্নর্স এই মেধাবি শিল্পীদের সম্মান জানাতে পেরে গর্বিত। ডেবি অ্যালেন একজন পথপ্রদর্শক কোরিওগ্রাফার এবং অভিনেত্রী; যার কাজ প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করেছে; বিভিন্ন ধারার সীমানা অতিক্রম করেছে। টম ক্রুজের চলচ্চিত্র, থিয়েট্রিক্যাল অভিজ্ঞতা এবং স্টান্ট আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে।”
চলচ্চিত্র শিল্প ও এমন ব্যক্তিকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়, যার মানবিক প্রচেষ্টা মানবকল্যাণে উন্নতী এবং বৈষম্য দূরীকরণে অবদান রেখে শিল্পের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
ঢাকা/শান্ত