বিশ্বকাপে ইসরায়েলের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করবে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 26th, September 2025 GMT
চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন বলেছিল, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। এরপরই জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খেলাধুলায় নিষেধাজ্ঞার দাবি তোলেন। স্পেনের সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপাত্র পাতচি লোপেস বলেন, ইসরায়েল খেললে স্পেন বিশ্বকাপ ফুটবল বয়কট করার কথা বিবেচনা করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ বিশ্বকাপে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার কোনো প্রচেষ্টা সফল হতে দেবে না।
আগামী বছর যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি স্পোর্টকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের জাতীয় ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার কোনো চেষ্টা যেন সফল না হয়, সে জন্য আমরা অবশ্যই কাজ করব।’
ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা খুব শিগগির ইসরায়েলকে সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিষয়ে বৈঠক করতে পারে বলে খবর পাওয়া গেছে। উয়েফার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, উয়েফার শীর্ষ নেতৃত্ব এবার কোনো পদক্ষেপ নিতে চায়। এখনো কিছু নিশ্চিত হয়নি, তবে এক মাস আগের তুলনায় অনেক দেশের পক্ষ থেকে নতুন চাপ তৈরি হয়েছে।’
আরও পড়ুনবিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন: রাশিয়া কেন নিষিদ্ধ, ইসরায়েল কেন নয়২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ইসরায়েল আগামী ১১ অক্টোবর অসলোয় নরওয়ের বিপক্ষে এবং ১৪ অক্টোবর উদিনেসেতে ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে। নরওয়ের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি লিসে ক্লাভেনেস সম্প্রতি বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের অংশগ্রহণ মেনে নিতে হচ্ছে, তবে গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর অমানবিক আক্রমণ উপেক্ষা করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
ইসরায়েল বর্তমানে উয়েফা আয়োজিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের গ্রুপে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়, শীর্ষে থাকা নরওয়ের চেয়ে তারা ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে, আর দ্বিতীয় দল খেলবে প্লে-অফে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাধুলায় পুতিনের রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হলেও নেতানিয়াহুর ইসরায়েলকে করা হয়নি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র ব শ বক প ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলকে কি নিষিদ্ধ করবে উয়েফা, ভোটাভুটি হতে পারে এ সপ্তাহেই
কেউ বলছেন, ইসরায়েলকে উয়েফার প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হোক। কেউ আবার আন্তর্জাতিক খেলাধুলা থেকেই ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। আপাতত পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তা হলো, খেলাধুলা থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি ধীরে ধীরে জোরালো হচ্ছে।
সর্বশেষ এ দাবি তুলেছেন নরওয়ে ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি লিসু ক্লাভেনেস। তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েল ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই সপ্তাহে ভোটাভুটির আয়োজন করতে পারে উয়েফা।
সম্ভাব্য এই ভোটাভুটি সামনে রেখে নরওয়ের পডকাস্ট ‘পপ অ্যান্ড পলিটিকস’-কে ক্লাভেনেস বলেছেন, ‘আদর্শিক জায়গা থেকে আমি বিষয়টি দেখছি। আমরা নিজেরা (ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচ) বয়কট করব না। বয়কট করলে আমাদের বদলে ইসরায়েল বিশ্বকাপে যাবে। আমরা ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে কাজ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, তাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত, আর বিষয়টি হলো নিয়মকানুন অটুট রাখার। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি, (ইউক্রেনে হামলা করায়) রাশিয়া যেহেতু নিষিদ্ধ, তাই ইসরায়েলেরও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। ফুটবল সভাপতি হিসেবে ব্যক্তিগত মত থাকতেই পারে এবং আমার সেটা আছে।’
আগামী ১১ অক্টোবর অসলোয় নরওয়ের বিপক্ষে এবং ১৪ অক্টোবর উদিনেতে ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ খেলবে ইসরায়েল। উয়েফার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ‘আই’ গ্রুপে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ইসরায়েল। শীর্ষে থাকা নরওয়ের চেয়ে তারা ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে, দ্বিতীয় দল যাবে প্লে-অফে।
নরওয়ে ফুটবল সভাপতি ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলার আগে এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন অনেকেই। ৫০ জন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড় মিলে সই করা একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফায়। দাবি একটাই—উয়েফার প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করা হোক। এ খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন ফ্রান্সের ফুটবল তারকা পল পগবা থেকে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেট অলরাউন্ডার মঈন আলী।
আরও পড়ুনকাইরাত-রিয়াল মাদ্রিদ: চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে অসম লড়াই১১ ঘণ্টা আগেশুধু তাই নয়, এর আগে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ইসরায়েলকে খেলাধুলায় নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন। তুরস্ক ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম হাজিওসমানোউলুও ফিফা, উয়েফা ও জাতীয় ফুটবল সংস্থাগুলোর প্রধানদের কাছে চিঠি লিখে ইসরায়েলকে ফুটবল প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠার কারণও নিশ্চয়ই সবার জানা? চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন বলেছিল, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। ইসরায়েল অবশ্য নিয়মিতভাবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল সামরিক বাহিনী। এর পর থেকে গাজায় অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
অবশ্য ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়ানোর দেশও আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন সুরে কথা বলছে। গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানায়, ২০২৬ বিশ্বকাপে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা ঠেকাতে তারা কাজ করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বিবিসি স্পোর্টসকে বলেন, ‘ইসরায়েলের জাতীয় ফুটবল দলকে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করার কোনো চেষ্টা যেন সফল না হয়, সে জন্য আমরা অবশ্যই কাজ করব।’
রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলকে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করতে এ সপ্তাহে জরুরি ভোটাভুটির প্রস্তুতি নিচ্ছে উয়েফা। কিন্তু একই দিন স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ জানায়, এ মুহূর্তে সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিনের নেতৃত্বে উয়েফার নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সূচি নেই। তবে এ বিষয়টি গত কয়েক দিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একই গ্রুপে পড়া নরওয়ে ও ইতালি ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার।
আরও পড়ুনআলভারেজদের কাছে রিয়াল মাদ্রিদের বিধ্বস্ত হওয়ার ৪ কারণ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫