আপনার ফেসবুক বা ইউটিউবের স্ক্রল থামিয়ে দেওয়া একটি ভিডিও। একদল যুবক, পরনে লোগো-আঁকা টি-শার্ট। তাদের ঘিরে ক্যামেরা, মোবাইল। মাঝখানে অসহায়, বিবস্ত্র এক মানুষ—হয়তো মানসিক ভারসাম্যহীন, হয়তো কোনো সাধু, কিংবা জীবনের ভারে ন্যুব্জ কোনো ভবঘুরে।

যুবকদের হাতে কাঁচি আর ক্ষুর কিংবা ইলেক্ট্রিক চুল কাটার মেশিন। তারা পরম উৎসাহে সেই মানুষটির জটা, দীর্ঘ চুল কেটে ন্যাড়া করে ফেলছে। এরপর গায়ে সাবান ডলে গোসল করিয়ে একটি টি-শার্ট পরিয়ে দিচ্ছে। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক প্যাকেট খাবার। ক্যামেরা জুম ইন করে সেই ‘পরিচ্ছন্ন’ মুখের ছবি তুলছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে করুণ সুর। ভিডিওর ক্যাপশন: ‘আসুন মানবিক হই’। 

লাখ লাখ ভিউ, হাজার হাজার শেয়ার, প্রশংসার বন্যা। এই দৃশ্যটি এখন আমাদের ডিজিটাল জগতের এক পরিচিত অধ্যায়। কিন্তু পর্দার পেছনের গল্পটা কী? এটি কি সত্যিই সমাজসেবা, নাকি ভিউ বাণিজ্যের এক নির্দয়, অমানবিক রূপ? এই ‘পরিচ্ছন্নতা অভিযান’-এর নামে যা চলছে, তা কি মানবতা নাকি ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর এক নৃশংস আক্রমণ?

যারা এই কাজ করছেন, তাদের উদ্দেশ্য হয়তো মহৎ—অন্তত তারা তাই দাবি করেন। তারা বলেন, পথের এই মানুষগুলোকে পরিচ্ছন্ন করে সমাজে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার শরীরে হাত দেওয়া, জোর করে তার চুল বা দাঁড়ি কেটে ফেলা—এসব কি সেবা হতে পারে?

ভিডিওগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, অসহায় মানুষটি কাঁদছেন, অনুনয় করছেন, কিংবা ভয়ে চুপ করে থাকছেন। তার চোখে থাকে অপমান আর লজ্জা। তার দীর্ঘদিনের জটা, যা হয়তো তার আধ্যাত্মিক বিশ্বাস বা ব্যক্তিগত পরিচয়ের অংশ, তা কেটে ফেলার সময় তার আর্তনাদ কি ক্যামেরার পেছনের মানুষগুলোর কানে পৌঁছায় না?

সামাজিক মাধ্যমে একজন যথার্থই লিখেছেন, ‘এটা অত্যাচার ছাড়া কিছু নয়। এরা এত ভালো কাজ করতে চাইলে রাস্তার আবর্জনা পরিষ্কার করে না কেন? বস্তির মানুষের বাড়িঘর পরিষ্কার করতে যায় না কেন?’ প্রশ্নটি যৌক্তিক। কারণ আবর্জনা পরিষ্কার করলে বা বস্তিতে কাজ করলে হয়তো এত সহজে ভাইরাল হওয়া যায় না। 

একজন অসহায়, প্রতিরোধে অক্ষম মানুষকে নিয়ে নাটকীয় কনটেন্ট তৈরি করা অনেক সহজ। এখানে মানুষটি সেবাগ্রহীতা নন, তিনি হয়ে ওঠেন কনটেন্ট তৈরির একটি ‘উপকরণ’ মাত্র। দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর ‘On Liberty’ গ্রন্থে ‘Harm Principle’-এর কথা বলেছেন। একজন মানুষের স্বাধীনতা ততক্ষণ পর্যন্ত নিরঙ্কুশ, যতক্ষণ না তা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়। পথের কোনো মানুষের জটাধারী চুল বা ময়লা পোশাক আপনার বা আমার কোনো ক্ষতি করছে না। সুতরাং, তার ব্যক্তিগত পছন্দে হস্তক্ষেপ করার অধিকার সমাজ বা কোনো গোষ্ঠীর নেই। এই ‘পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ মিলের এই নীতির সরাসরি লঙ্ঘন।

জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট শিখিয়েছেন, কোনো মানুষকে কখনো ‘উপায়’ বা means হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ প্রত্যেক মানুষই নিজে একটি ‘উদ্দেশ্য’ । কিন্তু এই ভিডিওগুলোতে অসহায় মানুষগুলোকে ভিউ, লাইক আর সাবস্ক্রিপশন বাড়ানোর ‘উপায়’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল পণ্য। এটি কান্টের নৈতিক দর্শনের পরিপন্থী।

এই কাজটি এক ধরনের ‘প্যাটার্নালিজম’ বা ‘অভিভাবকত্ববাদী’ মানসিকতার প্রকাশ। যেখানে একদল লোক মনে করছে, ‘আমরা জানি তোমার জন্য কোনটা ভালো’। তারা ধরেই নিচ্ছে, ওই ভাসমান মানুষটি নিজের ভালো-মন্দ বোঝে না এবং তাদের ওপর যে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু একজন মানুষের মানসিক অবস্থা যাই হোক না কেন, তার মানবিক মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিককে জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। জোরপূর্বক কারও চুল কেটে দেওয়া, তাকে জনসমক্ষে বিবস্ত্র করে গোসল করানো—এই কাজগুলো তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সম্মানের ওপর চরম আঘাত। এটি সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনও এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর। জাতিসংঘের ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা’ (UDHR) এবং ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি’ (ICCPR) ব্যক্তির শারীরিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানানোর কথা বলে। বিশেষ করে, মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে তৈরি ‘CRPD’ সনদে বলা হয়েছে, তাদের সম্মতির ভিত্তিতেই যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ এই সকল আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। ফলে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু অমানবিকই নয়, বরং বেআইনিও।

দুঃখজনকভাবে, এই ডিজিটাল ভিজিল্যান্টিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ফলে, এই ‘নতুন কালচার’ এক সামাজিক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে সুফি, বাউল, সাধু, সন্ন্যাসীদের দেশ। জটা রাখা, বিশেষ পোশাক পরা—এগুলো অনেকের কাছে আধ্যাত্মিক সাধনার অংশ। পথের এই মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই হয়তো সেই ধারার অনুসারী। তাদের জটাকে ‘অপরিচ্ছন্নতা’ বলে কেটে ফেলা কেবল তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপরই নয়, বরং তাদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ওপর একটি নির্লজ্জ আক্রমণ। 

জটাধারী নজরুলকেও হয়তো এরা ‘অপরিচ্ছন্ন’ বলে চুল কেটে দিত! সামাজিক মাধ্যমের এক মন্তব্যকারী যেমন বলেছেন, ‘এরা তো কাজী নজরুলকে পেলেও অপদস্থ করত।’ ইসলামের দৃষ্টিতেও এই কাজটি গর্হিত। ইসলামে ‘মাজনুন’ বা মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির ওপর শরিয়তের বিধান কার্যকর হয় না। বরং সমাজকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের প্রতি সদয় হতে। 

সুফি দর্শনে ‘মজ্জুব’ বা আল্লাহর প্রেমে পাগল ব্যক্তিকে উচ্চ আধ্যাত্মিক স্তরের অধিকারী মনে করা হয়। জোর করে তাদের ‘স্বাভাবিক’ বানানোর এই প্রবণতা এক ধরনের উগ্র সালাফি চিন্তার প্রতিফলন, যা ইসলামের মূল উদারনৈতিক ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো তাঁর ‘Discipline and Punish’ গ্রন্থে ‘প্যানঅপটিকন’ নামক এক কারাগারের মডেলের কথা বলেছেন, যেখানে কয়েদিরা সবসময় নজরদারির অধীনে থাকে এবং ধীরে ধীরে নজরদারির এই ধারণাকে আত্মস্থ করে নিজেদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে। আজকের সোশ্যাল মিডিয়া যেন এক ডিজিটাল প্যানঅপটিকন। এই ভিডিও নির্মাতারা সমাজের ‘স্বাভাবিকতা’র এক মানদণ্ড তৈরি করছে। যারা এই মানদণ্ডের বাইরে—অর্থাৎ ভবঘুরে, জটাধারী বা মানসিক ভারসাম্যহীন তাদের ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারপর ক্যামেরার সামনে তাদের জোর করে ‘স্বাভাবিক’ বানানো হচ্ছে, যা দেখে দর্শক (আমরা) সেই মানদণ্ডকে সমর্থন করছি। এখানে অসহায় মানুষটি শুধু ভিকটিম নয়, সে একটি প্রদর্শনী বস্তু। তার অপমানকে পণ্য করে আমরা বিনোদন কিনছি। এই নজরদারি এবং সামাজিক পুলিশি ব্যবস্থা আমাদের সমাজকে আরও অসহিষ্ণু করে তুলছে। 

সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওর শেষে দেখা যায়- এক বৃদ্ধ, যার চুল জোর করে কেটে দেওয়া হয়েছে, অসহায়ভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে আর্তনাদ করে বলছেন, ‘‘আল্লাহ তুই দেখিস.

..’’। এই একটি বাক্যই এই পুরো অমানবিকতার সারমর্ম। মজলুমের এই আর্তনাদ আমাদের সভ্যতার গালে এক বিরাট চপেটাঘাত। এই ভিউ ব্যবসায়ীদের তৈরি করা ‘মানবিক’ গল্পের আড়ালে লুকিয়ে আছে শোষণ, নিপীড়ন আর চূড়ান্ত অপমান। তাদের দেওয়া একটি টি-শার্ট বা একবেলার খাবার কখনোই কেড়ে নেওয়া আত্মসম্মানের মূল্য হতে পারে না।ৎ

প্রশ্ন হলো, দর্শক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কী? আমাদের দায়িত্ব হলো এ ধরনের কনটেন্ট প্রত্যাখ্যান করা। লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করে এই অমানবিক বাণিজ্যকে সমর্থন না করা। সম্ভব হলে, এই ভিডিওগুলোকে রিপোর্ট করা এবং এদের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সোচ্চার হওয়া। যদি সত্যিই সমাজসেবা করতে হয়, তাহলে ক্যামেরা বন্ধ করে কাজ করুন। এই মানুষগুলোর জন্য স্থায়ী আশ্রয়, চিকিৎসা এবং খাবারের ব্যবস্থা করুন। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করুন। তাদের আত্মসম্মানকে সম্মান জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। তা না করে, ক্যামেরার সামনে অসহায় মানুষের চুল কেটে যে ‘হিউম্যান সার্ভিস’ দেখানো হচ্ছে, তা আদতে ‘অ্যানিমেল ইনস্টটিংট’ বা পাশবিক প্রবৃত্তিরই নামান্তর। 

আসুন, এই ডিজিটাল কসাইখানা বন্ধ করি। নইলে সেই বৃদ্ধের আর্তনাদের দায় আমাদের প্রত্যেককে নিতে হবে। কারণ, আল্লাহ নিশ্চয়ই দেখছেন।
 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অসহ য় ম ন ষ স ব ধ নত ব যবস থ র জন য এই ম ন এই ক জ ক জ কর জ র কর আম দ র ম নব ক র ওপর ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।

‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?

উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’

জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’

জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?

জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’

আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?

সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।

বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’

সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?

‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।

আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’

আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫

পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?

মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’

আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র
  • সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ