Risingbd:
2025-10-03@02:40:33 GMT

টি এস এলিয়ট কেন পড়ব?

Published: 26th, September 2025 GMT

টি এস এলিয়ট কেন পড়ব?

শিরোনাম পড়ার সাথে সাথে পাঠকের উল্টোও মনে হতে পারে— কেন এলিয়ট পড়ব না? একবিংশ শতাব্দীতে তিনি কি অপ্রাসঙ্গিক? আমাদের বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তিনি কি সাহিত্য সমাজের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছেন?

T S Eliot at 101 প্রবন্ধে আমেরিকার কথাসাহিত্যিক সিনথিয়া ওজিক যখন বলেন, ‘প্রতিক্রিয়াশীল এলিয়টকে অস্বীকার করা এখন আমাদের আবশ্যিক কর্তব্য‘, তখন কি আমাদের সবার মতামত ওজিকের অনুগামী হয়? এই আহ্বানের পর ৩৫ বছর পার হয়ে গেছে। এলিয়টকে সেভাবে বর্জনের সুনির্দিষ্ট কোনো আলামত লক্ষ্য করা গেছে কি? অ্যান্থনি জুলিয়াস কিংবা হ্যারল্ড ব্লুমরাও এলিয়টের তীব্র সমালোচক ছিলেন। ব্লুমতো ওয়ালেস স্টিভেন্সকে এলিয়টের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছেন। কিন্তু শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে কখনোই একজন আরেকজনের বিকল্প হয়ে ওঠেন না। এলিয়টকেও তাই অন্য কোনো সাহিত্যিক দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায়নি; সম্ভব ছিল না। 

শতবর্ষ আগে কবিতার যে বাক্ভঙ্গি তিনি নির্মাণ করেছিলেন তা প্রচলিত কাব্যের খোলনলচে বদলে দিয়েছিল। নতুন কবিরা দারুণভাবে তাঁর কবিতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন যার প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঙালি মননেও তার প্রভাব অধরা থাকেনি। তাঁর ‘সংবেদনশীলতার বিচ্ছিন্নতা’র ধারণা শিল্পে চিন্তা ও অনুভূতির বিভাজনকে তুলে ধরে মহৎ সৃষ্টির জন্য তাদের সংযুক্তির প্রয়োজনিয়তার পক্ষে মত দেয়। তিনি কাব্যের প্রচলিত সীমানা ভেঙে দিয়ে নতুন এক জগতের সন্ধান দেন, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল নতুন প্রজন্মের কবিদের ওপর এবং এখনো তা বলবৎ আছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সূচনা পর্বে মানুষের চিন্তা ও অনুভূতি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। শিল্পীরা ক্রমাগত হয় মস্তিষ্ক, নয়তো শুধু হৃদয় দিয়ে নিজেদের প্রকাশ অব্যাহত রাখেন, কিন্তু একসঙ্গে দুটোর প্রকাশ ঘটাতে ব্যর্থ হন। আবার ভিন্নমতও রয়েছে এবং তা অন্তত আমাদের শিল্পসৃষ্টির কৌশল নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করে।

আমেরিকা থেকে ইংল্যান্ডে অভিবাসী এক তরুণ কবি ২০১৫ সালে The Triumph of Bullshit নামের কবিতা ছাপার জন্য প্রগতিশীল এক পত্রিকা সম্পাদকের দপ্তরে জমা দিয়ে নিরাশ হন। লেখা ছাপতে না পারার কারণ হিসেবে সম্পাদক 'Bullshit’ শব্দটির অপরিচিতির উল্লেখ করেন। এটা আমেরিকা থেকে আমদানি করা শব্দ হিসেবে চিহ্নিত হয়, কারণ এর আগে ইংল্যান্ডে কেউই এই শব্দটি শোনেনি। তবে একই বছর আমেরিকায় একটি পত্রিকার শেষের দিকে The Love of J.

Alfred Prufrock ছাপা হয়। কবিতাটি ছাপার ব্যাপারে সম্পাদকের যত্নের অভাব ছিল তা নিশ্চিত। কিন্তু আজ সবার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার যে, বিংশ শতাব্দীতে ওই কবিতার মধ্য দিয়েই আধুনিক কবিতার বাকবদল শুরু হয়েছিল। এরপর তাঁর হাত দিয়ে বের হয়েছে The Waste Land এর মতো কবিতা। পাঠক পেয়েছেন সৃজনশীল ও মননশীল সৃষ্টির সমৃদ্ধ এক ভাণ্ডার। 

তাঁর রচনা এখনো কেন জরুরি? এলিয়টের অপরিহার্যতা কোথায়? যুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক পরিবেশে মানবিক বিপর্যয়ের যে চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন তার প্রাসঙ্গিকতা কি হারিয়ে গেছে? এসব নানা প্রশ্ন আছে পাঠকের মনে। তবে মানতে হবে যে, তাঁর খ্যাতি ও প্রভাব আগের মতো নেই। কোনো কোনো সমালোচক অনেক বেশি নির্মম। তারা মনে করেন, তিনি সাহিত্যের এক পতিত প্রতিমূর্তি হিসেবে টিকে আছেন। কিছু প্রচলিত ও পরিচিত উদ্ধৃতির চর্বিতচর্বণ, শিক্ষায়তনিক পাঠ্যসূচিতে কিছু রচনার অন্তর্ভুক্তি, আর ব্যক্তিজীবনের মুখরোচক আলোচনার মধ্যে এলিয়ট-চর্চা সীমিত হয়ে পড়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি ভিন্নভাবে ধরা পড়েছেন। তারা মনে করেন, কাব্য ও অন্যান্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি-সমাজের যে স্বপ্ন  এলিয়ট দেখেছেন, তা নির্মাণ করা অসম্ভব। 

অনেকের মতে, এলিয়ট সাহিত্যে যে আসন লাভ করেছিলেন তা জোসেফ কনরাডের 'Heart of Darkness’-এর কুর্টজের চরিত্রের মতই রহস্যময়, যাকে তিনি তাঁর The Hollow Men-এর এপিগ্রাফে স্মরণ করেছেন। সাহিত্যে তাঁর উচ্চ আসন লাভ ও অবনমন― দুটোই বিস্ময়কর। উইলিয়াম এম্পসন মন্তব্য করেছেন, ‘একদা সাহিত্যে তাঁর উপস্থিতিকে অগ্রাহ্য করা যেত না’ (এখনও যায় কি?) তাঁর প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী ছিল যে কেবল কবি হিসেবে নয়, সামাজিক ভাষ্যকার হিসেবেও তাঁর মতামত বিশেষ গুরুত্ববাহী ছিল।
সাহিত্য সমালোচক এডমান্ড উইলসন তাঁর কবিতায় অদ্ভুত এক আবেগগত স্পন্দন খুঁজে পান যার মাঝে জীবনের কৌতূহল লুকিয়ে আছে, আর তা লেখকের জীবন থেকে আলাদা। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন যে প্রফ্রক, জেরনশন, হলোমেন বা ওয়েস্ট ল্যান্ডের চরিত্রগুলো যে বাস্তবতা জাগিয়ে তোলে তা আমাদের, নাকি আমাদের নয়? এদের আধ্যাত্মিক ও ঐহিক অস্তিত্বের লড়াই তাহলে কাদের? Objective correlative বা Dissociation of sensibility-র মতো স্মরণীয় পরিভাষাসমূহ কি সাহিত্যে নতুন সংযুক্তি নয়? ‘শিল্পীর বিকাশ ক্রমাগত আত্মত্যাগ ও ক্রমাগত বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে’― সেকথা এলিয়টই আমাদের প্রথম জানিয়েছিলেন। এগুলো একসময় সাহিত্যে নতুন সমালোচনার সূচনা করেছিল এবং সংস্কৃতির প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছিল।

অনেকের মতে, কবি হিসেবে তাঁর মর্যাদা যদি বৃহৎ হয়ে থাকে, সামাজিক-নৈতিক-ধর্মীয় কথক হিসেবে সে মর্যাদা বৃহত্তর। তবে ভিন্ন মতও রয়েছে। সাহিত্য, ধর্ম ও শিক্ষায়তনিক বিষয়ের ওপর লিখিত তাঁর প্রবন্ধের প্রভাব প্রচণ্ড মুগ্ধ করার মতো নয়। এই মতদ্বৈধতার লড়াইয়ে জয়-পরাজয়ের কোনো বিষয় নেই। বুদ্ধিবৃত্তিক মতবিরোধের দুটো দিকই রয়েছে, আর দু’ধরনের মতামতই তৈরি হতে থাকে। হয়তো এলিয়টের সাহিত্য কর্তৃত্বকে হালকাভাবে নেওয়া যেতেই পারে। প্রত্যেকর বিবেচনা ও সমালোচনার নিজস্ব মাপকাঠি রয়েছে। সেখানে কাউকে মহৎ আবার কাউকে ন্যূন করে তোলা যায়। সাহিত্যিকের মূল্যায়নে তাঁর ব্যক্তিজীবন অনিবার্যভাবে এসে পড়ে। সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা ঘাটায় অনেকে পারদর্শিতা দেখান। এলিয়টের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ঘটেনি। 

আমেরিকার সেইন্ট লুইসে জন্মগ্রহণকারী এলিয়ট মা-বাবার সপ্তম সন্তান যিনি জর্জ সান্তায়ানা ও আরভিং ব্যাবিটের সাথে হার্ভাডে পড়েছেন; বার্টান্ড রাসেল কিছু সময়ের জন্য তাঁর শিক্ষক ছিলেন; ইংরেজ দার্শনিক এফ এইচ ব্রাডলির ওপর গবেষণার মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন; ইংল্যান্ডে এসে দীর্ঘসময় লয়েড ব্যাঙ্কে চাকরি করেছেন। এর মাঝ দিয়েই চলেছে লেখালেখির কাজ। প্রথম স্ত্রী ভিভিয়েন হেইউডকে নিয়ে তাঁর শারীরিক-মানসিক অশান্তির অন্ত ছিল না। এক পর্যায়ে বিয়ের ১৩ বছর পর এলিয়ট চার্চে গিয়ে কৌমার্যব্রত'র শপথ নেন। ভিভিয়েনের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে এবং মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ভিভিয়েন ১৯৪৭ সালে এক মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মৃত্যুবরণ করেন। এরই মাঝে আমেরিকায় এমিলি হেলের সাথে এলিয়টের ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৫৭ এর মাঝে তিনি তাঁকে ১,১৩১টি পত্র লেখেন যা প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ছিল এবং শর্তানুযায়ী হেলের মৃত্যুর ৫০ বছর পর ২০২০ সালে তা পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

মজার ব্যাপার এলিয়ট দীর্ঘ সময় ধরে হেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে গেলেও ১৯৫৭ সালে হঠাৎ করেই তাঁর একান্ত সচিব ভেলেরি ফ্লেচারকে বিয়ে করেন। হেলের সাথে পত্র যোগাযোগেরও সমাপ্তি ঘটে। এমন অদ্ভুত ও নাটকীয় জীবন পাঠককে টেনে থাকে। ব্যর্থ যৌনজীবন সাহিত্যের কোথাও কোথাও প্রতিফলত হয়েছে তার অনুসন্ধানও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। লেখকের ব্যক্তিজীবন তার সাহিত্য জীবন থেকে কম আকর্ষণীয় নয়। খ্যাতির স্থিতির জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। হিংসুটে সমালোচকেরা সাহিত্যিক খ্যাতিকে অগ্রাহ্য করতে না পারলে সে বিষয়ে নিশ্চুপ থেকে ব্যক্তিজীবনের ত্রুটি খুঁজে বের করতে প্রবল উদ্দীপনা ও শ্রম ব্যয় করতে কুণ্ঠিত হন না। এতে সাহিত্যের লাভ না হলেও সমালোচক ও সাহিত্যিক দুজনই আলোচনায় থাকেন।

১৯৬৫ সালে এলিয়ট মৃত্যুবরণ করেন। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়েও তাঁর প্রভাব ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর প্রতিক্রয়াশীল চরিত্রের প্রসঙ্গটি সামনে আসতে থাকে। ’সাহিত্যে ধ্রুপদবাদী, রাজনীতিতে রাজতন্ত্রী ও ধর্মে অ্যাংলো-ক্যাথলিক' হিসেবে নিজের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছিলেন তিনি। তাঁর বড় শত্রুও কি তাঁর বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড় অভিযোগ আনতে পারত? ১৯৬০-এর মাঝামাঝি সময় থেকে সাহিত্যে বিষয়ীকেন্দ্রিকতা, সাম্যবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষ রোমান্টিকতার ধারণাটি প্রাধান্য পাচ্ছিল। ফলে এলিয়টের অনুরাগীর সংখ্যা বাড়ছিল―এমন দাবি করা কঠিন। ১৯৪৮ সালে নোবেল পাওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখি ছিল বলা যায় যদিও এর মাঝেই তাঁর খ্যাতি হ্রাসের কারণ নিহিত ছিল। মৃত্যু খ্যাতি হ্রাসের কারণে যেমন হয়, পাশাপাশি তা মৃত সাহিত্যিকের কর্মের পুনর্মূল্যায়নের সূত্রপাতও করে থাকে। কিন্তু সেই মূল্যায়নের ধারাটি বেশিমাত্রায় নেতিবাচক। তাঁকে নিয়ে উদযাপন চলে, আবেগমথিত স্মৃতিতর্পণ ও নানা সংকলন প্রকাশিত হয়, কিন্তু তার মাঝে ধ্বনিত প্রধান সুরটি খুব প্রশংসার নয়।

সমালোচনা সাহিত্যের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু তা হতে হয় গঠনমূলক। অযথা নিন্দা করা সমালোচনা নয়, কিংবা মতের অমিল হলেই খারিজ করে দেওয়ার প্রবণতা সাহিত্য বা সমাজ কারো জন্যই সুখকর নয়। এলিয়টের কবিতা অসংখ্য সাহিত্যপ্রেমিককে আকর্ষণ করেছিল। প্রচলিত জর্জিয়ান কাব্যরুচিকে ক্ষুব্ধ করে তিনি আধুনিক নগর জীবনের যে খণ্ডচিত্র এঁকেছিলেন তাকে কীভাবে অবজ্ঞা করা যায়! একটি সংবেদনশীল হৃদয় কি তা পারে? ‘আমি খোঁজ পেয়েছি গৃহকর্মীদের সজল হৃদয়ের/একরাশ হতাশা নিয়ে রোজ যারা জড়ো হয় মহল্লার দোরে' ― এভাবে তাঁর আগে কি কেউ বলতে পেরেছেন? গৃহকর্মীদের বেদনা কি কেউ উপলব্ধি করেছেন? তাঁর প্রথম দিককার কবিতাগুলো নিয়ে মানুষ যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল ’ওয়েস্ট ল্যান্ড’র ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সমালোচকরা তাঁকে ‘সময়ের সংশয়বাদী’, ‘একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মের মুখপাত্র‘ ইত্যাদি নানা অভিধায় চিহ্নিত করতে লাগলেন। কিন্তু এলিয়ট খুব সচেতনভাবে নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখলেন। তবে পাউন্ড বলেছিলেন যে এলিয়টের এই একটি কবিতাই অন্য কবিদের চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এলিয়ট আমাদের মনোযোগ কাড়ার যোগ্য। কারণ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, কিংবা নারীকেন্দ্রিক বিষয়াবলী সম্পর্কে তাঁর মতামতের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি বা না করি তা খুব মুখ্য ব্যাপার নয়। কিন্তু আমাদের দেখা বিষয়কে তিনি নতুনভাবে দেখতে শিখিয়েছিলেন। আর সেগুলোকে আত্মজৈবনিক আখ্যা দিয়ে অন্যদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কহীন প্রতিপন্ন করাও সম্ভব নয়। ’আজ রাতে স্নায়ু খুব দুর্বল মনে হচ্ছে/ খুব, খুবই, আমার সাথে থাকো, কথা বলো, কথা বলো না কেন?’ এ পঙ্‌ক্তিগুলোতে মানসিক রোগী, প্রথম স্ত্রী ভিভিয়েন হেইউড-এর সঙ্গে তাঁর যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতার ছায়া রয়েছে এমন মনে করা যেতেই পারে। বার্টান্ড রাসেলের সাক্ষ্য সে অনুমানকে আরও সুদৃঢ় করে। তবে এলিয়টের মন্তব্য ছিল ভিন্ন। তিনি মনে করতেন, কবিতা কেবল জীবনীমূলক শিল্পকর্ম নয়। ’কবিতা শুধু আবেগের প্রকাশ নয়, বরং আবেগ থেকে মুক্তি; ব্যক্তিত্বের প্রকাশ নয়, ব্যক্তিত্ব থেকে সরে আসা। তবে যাদের ব্যক্তিত্ব ও আবেগ আছে তারাই কেবল উপলব্ধি করতে পারবেন এ থেকে মুক্তি চাওয়ার অর্থ কী’। এলিয়ট পাঠকের মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন তার মূল কারণ তাঁর লেখার মৌলিকত্ব, মান ও সক্ষমতা। 

এলিয়টের কবিতায় বিষাদ, বিচ্ছিন্নতা ও হতাশার অনুভূতি পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় উদ্বেগের সাথে মিশে যায়। তারপরও এলিয়ট পাঠে এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনাপূর্ণ প্রাণশক্তির অনুভূতি পাওয়া যায়। সর্বত্রই এলিয়ট আবিষ্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পরিভ্রমণ করেছেন। ওয়াল্টার প্যাটার বা ম্যাথু আর্নল্ডের নান্দনিকতার সমালোচনা থেকে শুরু করে নিজের ধর্মীয় অবস্থান পর্যন্ত প্রতিটি পর্বেই এলিয়টের বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। তবে সেই অগ্রগতিও সমালোচনা-নিরপেক্ষ নয়। তাঁর এই সাহিত্যিক পরিভ্রমণে বাস্তবতার প্রতি আকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি আর যে কোনো নান্দনিক বিকল্প গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। A Dialogue on Dramatic Poetryতে বলেছেন, ‘আমরা যত বেশি জানি, তত কম বিশ্বাস করি। ইহকাল বা পরকালে, একটি আরেকটির বিকল্প নয়। আমি যা পাবার আকাঙ্ক্ষা করি তার কিছু কিছু যা পেতে পারি না, তার চেয়েও মূল্যবান।’ 

এলিয়ট বাস্তবতার প্রতি আচ্ছন্ন ছিলেন। কবি হিসেবে তাঁর সামর্থ্য ও সমালোচক হিসেবে তাঁর কর্তৃত্বের মূল উৎসই এটা। সংস্কৃতি, মানবতা বা ধর্ম কোনো কিছুর বিকল্পই তিনি স্বীকার করতেন না। আর এ বিষয়টিই ধার্মিক এলিয়টকে আধুনিকতার প্রতি অনুগত করে তোলে! ‘Burnt Norton’-এ তিনি লিখেছিলেন, ‘মানবজাতি বাস্তবতা খুব বেশি সহ্য করতে পারে না।’ এমন বাস্তবতার কথা যিনি আমাদের অনবরত স্মরণ করিয়ে দেন, তাঁর কাছে তো আমাদের বারংবার ফিরে যেতেই হবে। সব গ্রহণ করব না, আবার একবারে খারিজও করব না।  
 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব কল প র প রক শ ব স তবত র মত মত প রচল ত জ বন র কর ছ ল কর ছ ন এর ম ঝ র জন য ণ কর ছ অন ভ ত এল য ট জন য ত আম দ র আম র ক প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সকালে এক গ্লাস নাকি চার গ্লাস পানি পান করা ভালো

সকালে খালি পেটে পানি পান করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়, একথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কত গ্লাস পানি পান করা ভালো সে কথা জানেন?  সেই প্রসঙ্গে আসছি, তার আগে বলে নেই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে পানি পান করলে  ঠিক কোন কোন উপকার পাওয়া যায়।  অল্প কিছু বিষয় মেনে চললে সকালে খালি পেটে পানি পান করে সুস্থ-সবল থাকার পথে একধাপ এগিয়ে যেতে পারেন। জেনে নিনি বিস্তারিত—

এক. সকালে পানি পান করলে পাকস্থলী পরিষ্কার হয়। এই অভ্যাস অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়। পরিপাকক্রিয়া থেকে সঠিকভাবে নানা পুষ্টি উপাদান গ্রহণে শরীরকে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে পানি পান করলে হজমশক্তি বাড়ে। আর এটা তো জানা কথা, হজমশক্তি ভালো হলে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাই দূর হয়।

আরো পড়ুন:

যেসব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস জীবন বদলে দিতে পারে

লিভার ডিটক্সিফিকেশনের জন্য সাপ্লিমেন্ট খাওয়া কী জরুরি?

দুই. সকালে খালি পেটে  পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর থাকে। রক্ত থেকে ‘টক্সিন’ বা বিষাক্ত নানা উপাদান দূর করে পানি।নতুন রক্ত কোষ এবং পেশি কোষ জন্মানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

তিন. খালি পেটে পানি পান করলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

যেভাবে পুরোপুরি সুফল পাবেন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে পানি পান করার পারেই খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়।

মনে রাখবেন,  প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানি পান করেই অনেক উপকার পেতে পারেন। আরও ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন সকালে গড়ে চার গ্লাস পানি (প্রায় এক লিটার) পানি পান করতে পারেন।

প্রথম দিকে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে একটু সমস্যা হতে পারে। তবে চেষ্টা করলে  এটা অনেক কিছুদিনের মধ্যে এই অভ্যাস আয়ত্বে চলে আসবে। এবং এর নানা উপকারিতাও বুঝতে পারবেন।

সূত্র: ওয়েবএমডি

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ