চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। জনগণের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হয়, দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা ভেঙে রাষ্ট্র গণতন্ত্রের পথে হাঁটবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন কতটা ঘটছে? আজও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে না। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ বাস্তবতারই প্রতিফলন ঘটেছে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৬০তম অধিবেশনে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো মতপ্রকাশ ও তথ্যের স্বাধীনতার অধিকার সুরক্ষিত নয়। বিশেষ করে নির্বাচন সামনে রেখে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ, যেমন সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করা হলেও নতুন খসড়া আইনগুলোর মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিসর আবারও সংকুচিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

এসব আইন প্রণয়নের ফলে সাধারণ নাগরিকের বাক্‌স্বাধীনতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে, কনটেন্ট অযথা মুছে ফেলার প্রবণতা বাড়তে পারে, বেআইনি নজরদারি ও স্বচ্ছতার ঘাটতি তৈরি হতে পারে। গণতন্ত্রের প্রাণ হলো মুক্তভাবে সব নাগরিকের মতপ্রকাশ অথচ গণ–অভ্যুত্থানের পর সংস্কার ও পুনর্গঠনের এ পর্যায়ে সেটার ঘাটতি থেকে গেছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গণহারে একই ধরনের মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি নিয়ে গত এক বছর সমালোচনা তৈরি হয়েছে। 

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে সাংবাদিকদের হত্যা বা নির্যাতনের ব্যাপারে দায়মুক্তির সংস্কৃতি লক্ষ করা গেছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের এক দশক পেরোলেও কোনো কার্যকর তদন্ত হয়নি। আন্তর্জাতিক মহল বহুবার বিচারের আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু ফল শূন্য। সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন ও খন্দকার শাহ আলম খুন হওয়ার ঘটনাও সেই দায়মুক্তির দৃষ্টান্তকেই শক্তিশালী করেছে। এ ধরনের ধারাবাহিকতা শুধু সাংবাদিকদের নয়, গোটা সমাজকেই ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়।

আর্টিকেল নাইনটিন যথার্থভাবেই উল্লেখ করেছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। এ জন্য নিরপেক্ষ, পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্তপ্রক্রিয়া চালু করতে হবে। পাশাপাশি নারী সাংবাদিকদের জন্য আলাদা সুরক্ষাব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে। কর্মক্ষেত্রে হয়রানি থেকে শুরু করে অনলাইনে যৌন হুমকি, এমনকি শারীরিক আক্রমণের মুখে তাঁরা দ্বিগুণ ঝুঁকি বহন করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

আজকের বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতটা কার্যকরভাবে রক্ষা করা যায়, তার ওপর। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাফল্য শুধু নির্বাচনী আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষ কতটা মুক্তভাবে কথা বলতে পারে, সাংবাদিকেরা কতটা নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন, সেটিই হবে প্রকৃত পরীক্ষার মানদণ্ড।

সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খসড়া আইন সংস্কার করা হোক। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সব হামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হোক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া হয়রানিমূলক মামলা–গ্রেপ্তারের সংস্কৃতির অবসান হোক। এটি মুক্ত সাংবাদিকতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছে। আমরা কোনোভাবেই পুরোনো পথে ফিরে যেতে চাই না এবং ভবিষ্যতের জন্যও অনিশ্চয়তার পথ উন্মুক্ত হোক চাই না। আমাদের মনে রাখতে হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত না করলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শামীম ওসমান দিনের পর দিন না’গঞ্জবাসীর সাথে  প্রতারণা করেছে: কম. সাঈদ

নারায়ণগঞ্জ- ৫ আসনে শক্তির জানান দিলেন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কমরেড সাঈদ আহমেদ। সদর-বন্দরবাসী কাছে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করে নগরীতে শোডাউনের মাধ্যমে ধানের শীষের প্রচারণা করলেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ এই নেতা।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর)  বিকেলে শহরের আমলাপাড়াস্থ নিজ কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু সড়কজুড়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের প্রধান এই নেতা।

মিছিল ও ধানের শীষের প্রচারণা শেষে কমরেড সাঈদ আহমেদ বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বহু দুঃখজনক ও বিতর্কিত ঘটনা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রশক্তির অপব্যবহার ও দমন পীড়নের অভিযোগ যেভাবে উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর স্মৃতি আজও জাতির মনে গভীর ক্ষত হিসেবে রয়ে গেছে।

১৯৭৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজশাহীতে আমাদের দলের ৪৪ জন নেতাকে হত্যার অভিযোগ, কিংবা ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম পাহাড়তলী থেকে সিরাজ শিকদারকে আটক করে পরে হত্যার ঘটনাকে ঘিরে উত্থাপিত বিভিন্ন দাবি এসবই ইতিহাসে গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একইভাবে, তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহিন আলীর মৃত্যুকেও অনেকেই রাজনৈতিক নিপীড়নের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাগুলো আমরা ইতিহাসের দাবি হিসেবে তুলে ধরি জবাবদিহির প্রয়োজন থেকে, সত্য উন্মোচনের প্রয়োজন থেকে। কারণ যদি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অতীত ও কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে শুরু করি, তবে তা একদিনে শেষ করা যাবে না।

দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যেভাবে দমন-পীড়ন হয়েছে অনেকে মনে করেন, তার নজির পৃথিবীর ইতিহাসেই খুব কম রয়েছে। আর ঠিক সেই কারণেই আমরা, দেশ ও জনগণের স্বার্থে, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্দেশনায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।

কমরেড সাঈদ আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষের সাথে শামীম ওসমান প্রতারণা করেছেন এ অভিযোগ জনগণের মুখেই শোনা যায়। প্রেসিডেন্টের গাড়ি থামিয়ে স্মারকলিপি দেয়ার ঘটনায় তিনি নিজেকে যুক্ত করার চেষ্টা করলেও, সেদিন ওই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

তিন জানান, নারায়ণগঞ্জকে জেলা করা এবং তুলারাম কলেজকে সরকারি করার দাবিতে সেই স্মারকলিপি তিনি নিজেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে প্রদান করেছিলেন সেই সময় শামীম ওসমানের রাজনৈতিক অস্তিত্বই ছিল না।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের জনগণ যেভাবে প্রতারণার জবাব দিয়েছে, ভবিষ্যতেও ঠিক সে ভাবেই দেবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, তালবাহানা, কিংবা অগ্নিসংযোগ বা কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা কোনোটাই বরদাস্ত করা হবে না। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, এবং জনগণের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালে যেভাবে অরজগতা সৃষ্টি করেছিল (১১ ডিসেম্বরে) আমাদের পার্টির ৪৪ জন নেতাকে রাজশাহীতে হত্যা করেছিল রক্ষী বাহিনীর মঞ্জুরের নেতৃত্বে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, ১৯৭৫ সালের (২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম পাহাড়তলী থেকে সিরাজ শিকদারকে ধরে এনে ঢাকা সাভারে নিয়ে শেখ মুজিবের রকিবাহিনী হত্যা করেছিল, আরো হত্যা করেছিল পার্লামেন্টে শাহিন আলিকে শেখ মুজিব নিজ হাতে, 

তিনি আরও বলেন, যদি আমরা শেখ হাসিনার ইতিহাস বলতে চাই, বলে শেষ করা যাবে না বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম নৃশংস গণহত্যা পৃথিবীর বুকে আর কোন স্বৈরাচার করে নাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছে সারা পৃথিবীর বুকে নজির হয়ে থাকবে, আমরা চাই দেশ এবং জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশের আপোসিন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সাথে শামীম ওসমান প্রতারণা করেছে, প্রেসিডেন্টের গাড়ি সে থামিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল, শামীম ওসমান মিথ্যা কথা বলেছে, সেই দিন শামীম ওসমান কোনভাবেই এর সাথে জড়িত ছিল নাভ

ঐদিন আমি নিজে জিয়াউর রহমান কে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলাম নারায়ণগঞ্জ কে জেলা করার জন্য, তোলারাম কলেজকে সরকারি করার জন্য, সেই সময় শামীম ওসমানের অস্তিত্ব ছিল না, নারায়ণগঞ্জের মানুষের সাথে যেভাবে প্রতারণা করেছে নারায়ণগঞ্জের জনগণ ঠিক ওইভাবেই তাকে এর জবাব দিয়ে দিয়েছি, আমরা নারায়ণগঞ্জের জনগণকে নিয়ে কোন তালবাহানা কোন অগ্নিসংযোগ যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটাতে চায় তাহলে আমরা কোন ছাড় দিব না।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম-এল এর) পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড মেহেবুব, কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড নওশাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি কমরেড নুরুলদীন ঢালী, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা কমরেড সুমন হাওলাদার, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক কমরেড জাকির শিকদার, আহবায়ক নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমরেড গোলজার প্রধান, সদস্য সচিব নারায়ণগঞ্জ জেলা কমরেড শাকিল ও সভাপতি বন্দর থানা ইরফান খন্দকার ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভ্রান্তি-হতাশা-অনিশ্চয়তার মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে: ফখরুল
  • নানা দাবির নামে নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা চলছে: মির্জা ফখরুল
  • বিএনপির নতুন স্লোগান ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ’: আমীর খসরু
  • সেই গণতন্ত্র যেন আর কোন ফ্যাসিবাদের জন্ম না দেয় : মামুন মাহমুদ
  • পারভেজের কথায় ‘বিজয় নেবে ধানের শীষ’
  • শামীম ওসমান দিনের পর দিন না’গঞ্জবাসীর সাথে  প্রতারণা করেছে : কম. সাঈদ
  • শামীম ওসমান দিনের পর দিন না’গঞ্জবাসীর সাথে  প্রতারণা করেছে: কম. সাঈদ