ট্রাম্প আবার যেভাবে মোদিকে ধোঁকা দিলেন
Published: 27th, September 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে তাঁর ৭৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তাঁদের কথোপকথনকে ‘অদ্ভুত সুন্দর’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এই কথোপকথন আশা জাগিয়েছিল যে গত ২৭ আগস্ট ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের জের ধরে দুই দেশের মধ্যে চলা উত্তেজনা কমতে পারে।
কিন্তু তাঁদের সম্পর্কের নরম ভাব মাত্র তিন দিনের মধ্যেই উবে যায়। ১৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে এইচ–১বি ভিসার জন্য বার্ষিক এক লাখ ডলার ফি আরোপ করেন, যার ৭০ শতাংশই ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর পাশাপাশি ট্রাম্প চাবাহার বন্দরের ইরানি প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সুবিধা বাতিল করেন। এ ছাড়া ট্রাম্প ভারতকে ‘মুখ্য মাদক পরিবহন বা অবৈধ মাদক উৎপাদনকারী দেশ’–এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর কয়েক দিনের মধ্যে ট্রাম্পের নেওয়া এসব ঘোষণা ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের বিস্মিত করেছে। লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এটিকে মোদির ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্প ভারতকে প্রলোভন দেখিয়েছেন—আমেরিকার উৎপাদন চীন থেকে ভারতের দিকে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু তিনি চুপিচুপি ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছেন এবং ভারতের ওপর ইরান থেকে তেল আমদানি কমানোর চাপ দিয়েছেন।প্রশ্ন হলো, যেসব পদক্ষেপ ট্রাম্প নিয়েছেন, সেগুলো কি তিনি ব্যক্তিগতভাবে মোদিকে আঘাত করার জন্য নিয়েছেন? নাকি এগুলো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুযায়ী ভারতকে বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়ে ছাড় দিতে বাধ্য করার কৌশল?
তবে যেভাবেই হোক, এই ঘটনাগুলো দেখাচ্ছে, ভারত আমেরিকার ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। এটি দিল্লির কৌশলগত অবস্থানকে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
ট্রাম্পের কৌশল এখন অনেকের কাছে পরিচিত। তাঁর কূটনীতির ধরন হলো—প্রথমে প্রশংসা, তারপর হঠাৎ চাপ। এটি ‘ভালো পুলিশ, খারাপ পুলিশ’ ধাঁচের মতো। এটি প্রশংসা দিয়ে শুরু হয় এবং হঠাৎ চমক দিয়ে শেষ হয়। এতে অপর পক্ষ সব সময় অসুবিধায় থাকে এবং সন্তুষ্ট করতে আগ্রহী হয়।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কেও এই ধরন দেখা গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ—২০১৯ সালে টেক্সাসে ‘হাউডি মোদি’ এবং পরের বছর মোদির রাজ্য গুজরাটে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ দেখা গেছে। ওই সময় দুই নেতাই একে অপরের প্রশংসায় উদ্দীপ্ত ছিলেন।
ট্রাম্প ভারতকে প্রলোভন দেখিয়েছেন—আমেরিকার উৎপাদন চীন থেকে ভারতের দিকে স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু তিনি চুপিচুপি ভারতের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছেন এবং ভারতের ওপর ইরান থেকে তেল আমদানি কমানোর চাপ দিয়েছেন।
আরও পড়ুনশেষ হাসি কে হাসবেন, মোদি নাকি ট্রাম্প১৪ আগস্ট ২০২৫ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে একই ঘটনা আবারও ঘটেছে। আগস্টের শেষের দিকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এটিকে মূলত ভারতের সস্তা রাশিয়ান তেল কেনার জন্য ‘শাস্তি’ হিসেবে ধরা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর জন্মদিনের উষ্ণ শুভেচ্ছা জানানোর পর ১৯ সেপ্টেম্বর এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানো, চাবাহার বন্দরের বিশেষ সুবিধা বাতিল এবং ভারতকে মাদক পরিবহনকারী দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার মতো তিনটি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এইচ–১বি ভিসার এক লাখ ডলারের ফির কথা ভাবুন। ভারতীয় নাগরিকেরা এই ভিসার প্রায় ৭৩ শতাংশ ধরে রেখেছে। এটি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিস, ইনফোসিস এবং উইপ্রো-এর মতো কোম্পানিগুলোকে এখন অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহন করতে হবে; তাদের নতুন নিয়োগ সীমিত হবে এবং অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যের ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বার্ষিক রেমিট্যান্স ঝুঁকির মুখে পড়বে।
অর্থনৈতিক প্রভাব ছাড়াও এই নীতি ভারতের আমেরিকান প্রবাসীদের মধ্যে মোদির জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ট্রাম্প আশা করেন, তাঁরা এসবের জন্য মোদির ওপর দোষ চাপাবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর আম র ক র জন য ভ রতক র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে