নাইট্রোজেন–সমৃদ্ধ বামন গ্রহের খোঁজ
Published: 27th, September 2025 GMT
হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে একটি সাদা বামন গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের তথ্যমতে, প্লুটোর মতো বরফ গ্রহটিতে অত্যন্ত ঘন আঠালো বস্তু রয়েছে। এই আঠালো বস্তু ধীরে ধীরে গ্রহটিকে গ্রাস করছে। সাদা বামন গ্রহটি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত হওয়ায় মহাজাগতিক দিক থেকে তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি অবস্থান করছে গ্রহটি। এর ভর সূর্যের প্রায় ৫৭ শতাংশ।
ব্ল্যাকহোলের মতো ঘন না হলেও শ্বেত বামনরা মহাবিশ্বের সবচেয়ে ঘন বস্তুর মধ্যে একটি। সূর্যের ভরের আট গুণ বেশি ভরের তারা শেষ পর্যন্ত শ্বেতবামন হয় বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। জ্বালানি হাইড্রোজেন ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এরপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তাদের কাঠামো ভেঙে ফেলে। একপর্যায়ে গ্রহের বাইরের স্তর উড়িয়ে গেলে গ্রহের কেন্দ্র শ্বেতবামন হিসেবে অবস্থান করে।
আমাদের সূর্য কোটি কোটি বছর পর এমন একটি শ্বেতবামন হিসেবে তার শেষ সময় পার করবে। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বেতবামন কোনো নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশ, যা সূর্যের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ভরের বলে অনুমান করা হচ্ছে। নতুন সন্ধান পাওয়া সাদা বামনের ব্যাস প্রায় পৃথিবীর সমান। যদিও আমাদের গ্রহের চেয়ে সম্ভবত ১ লাখ ৯০ হাজার গুণ বেশি ভর আছে সাদা বামনের। বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপ ব্যবহার করে শ্বেতবামনের পৃষ্ঠের বিভিন্ন বস্তু কীভাবে তৈরি হয়, তার উপাদান শনাক্তের কাজ করছেন।
ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী স্নেহলতা সাহু বলেন, শ্বেতবামন সম্ভবত প্লুটোর মতো কোনো বরফজগতের ভূত্বক ও আবরণ থেকে টুকরা টুকরা উপাদান সংগ্রহ করেছে। অন্য কোনো বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে কোনো বিচ্ছিন্ন একটি টুকরা হতে পারে বামন গ্রহটি। অস্বাভাবিকভাবে বেশি নাইট্রোজেন রয়েছে সেখানে। প্লুটোর পৃষ্ঠকে প্রভাবিত করে, এমন নাইট্রোজেন–সমৃদ্ধ বরফের সঙ্গে মিল আছে বামন গ্রহের। হাবলের কসমিক অরিজিনস স্পেকট্রোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে নাইট্রোজেন শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। নতুন পর্যবেক্ষণ প্রমাণ দেয়, আমাদের সৌরজগতের মতো বরফের বস্তু অন্যান্য গ্রহব্যবস্থায়ও থাকতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ইট র জ ন গ রহ র আম দ র অবস থ গ রহট
এছাড়াও পড়ুন:
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি।
পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।
আরো পড়ুন:
রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ
আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।
চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”
তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”
যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।
৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত
তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।
তৌকির বিশ্বাস করেন, “স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”
তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।
তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।
তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন
ঢাকা/মাসুদ