পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কারাক জেলার দারশাখেল এলাকায় শাহ সেলিম থানার কাছে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে ওই যুবক নিহত হন। অভিযানে মোট ১৭ জনকে হত্যা করে পাক সেনাবাহিনী। 

রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম সামা টিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

আরো পড়ুন:

গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন পাকিস্তানি অভিনেতা ফাহাদ?

ঢাবিতে দুই জায়ান্ট স্ক্রিনের সামনে হাজারো দর্শক

প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে পাকিস্তানি সেনারা যে  ১৭ জনকে হত্যা করেছেন, তার মধ্যে একজন বাংলাদেশি রয়েছেন। তার কাছ বাংলাদেশি পরিচয়পত্র, টাকা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র উদ্ধারের পর কর্মকর্তারা এই পরিচয় শনাক্ত করেন।

সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্বৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, নিহত ওই ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধারকৃত জিনিসপত্রের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ও মুদ্রা রয়েছে, যা ওই ব্যক্তির বিদেশি যোগসূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনা আবারো এই অঞ্চলে সক্রিয় জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোতে বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতির বিষয়ে সামনে এনেছে। 

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এর আগেও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আরো দুই থেকে তিন বাংলাদেশি নিহত হন। তারা ধর্মীয় শিক্ষা নেওয়ার অজুহাত দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন এরপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেও দাবি করেছে তারা। 

শনিবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, সেনাবাহিনী খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় গোয়েন্দা তথ্য-ভিত্তিক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর সাথে যুক্ত ১৭ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।

নিরাপত্তাবাহিনীর একটি সূত্র সামা টিভিকে জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রত্যন্ত দারেশক অঞ্চলে মোল্লা নাজির গ্রুপের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর এই অভিযান চালানো হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী, স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপ (এসএসজি) এবং কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) যৌথভাবে এই অভিযানে অংশ নেয়।

দুই দিন ধরে চলা এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী একটি কঠিন পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদের ঘিরে ফেলে। অভিযান শেষে ১৭ জন সন্ত্রাসী নিহত এবং ১০ জনেরও বেশি গুরুতর আহত হয়। অভিযানে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্যও আহত হন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সন ত র স

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ