অমানবিক নির্যাতনের শিকার চার বছরের শিশু. তালা ভেঙ্গে উদ্ধার
Published: 28th, September 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুরে অমানবিক নির্যাতনের শিকার চার (৪) বছর বয়সী হোসেন নামের এক শিশুকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে তালা ভেঙ্গে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত দশটার দিকে ফতুল্লা মডেল থানা সীমান্তের কাশিপুর শান্তিনগর কদম আলী স্কুলের পাশ্ববর্তী সোহেলের বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় পালিয়ে যায় শিশুটির বাবা সোহেল। সোহেল কাশিপুর শান্তিনগরস্থ কদম আলী স্কুলের সংলগ্ন মৃত মোমেন আলীর পুত্র।
উদ্ধার হওয়া শিশুটির বাবা সোহেল একজন মাদকাসক্ত বখাটে বলে স্থানীয়রা জানায়।
দীর্ঘদিন ধরে শিশুটিকে তার বাবা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে বলে জানিয়েছে ফতুল্লা মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম ।
স্থানীয়রা জানায়, ২-৩ বছর পূর্বে শিশুটির বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর শিশুটিকে তার মা নিয়ে যায়। কিন্ত শিশুটির বাবা কয়েক মাস পর জোড়পূর্বক শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে আসে। তখন থেকেই শিশুটিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন
করে আসছিলো বাবা সোহেল। বাসা থেকে বের হলে শিশুটিকে ঘরে তালাবদ্ধ করে চলে যেতো। দিনের অধিকাংশ সময়ই শিশুটিকে অনাহারে থাকতে হতো। কান্না করলে তার ওপর চালতো অমানুষিক নির্যাতন। পিটানো হতো হাত-পা বেধে ঝুলিয়ে।সেই নির্যাতনের চিন্থ শরীররে একাধিক স্থানে স্পস্ট হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় যুবক ও গ্যাস সিলেন্ডার ব্যবসায়ী শাওন জানান,উদ্ধার হওয়া শিশুটির বাড়ীর পাশেই তার দোকান। দুই থেকে তিন মাস পূর্বে তিনি জানতে পারেন যে, চার বছর বয়সী এক শিশুকে তার বাবা সারাদিন ঘরে তালাবদ্ধ করে বাড়ীর বাইরে বের হয়। পেটের ক্ষুদায় কান্না করলেও শিশুটিকে খাবার দেওয়া হতোনা।কখনো কখনো শিশুটিকে জুস বা চিপস কিনে দিতো শিশুটির মাদকাসক্ত বাবা সোহেল। তবে অধিকাংশ সময় শিশুটিকে মারধর করা হতো। শিশুটির বাবা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার হাত-পা বেধে তালা মেরে ঘর থেকে বের হতো। গত দুদিন পূর্বে এক দোকানে শিশুটিকে সহ তার বাবাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয় এক মহিলা বাচ্চার রুগ্নবস্থা দেখতে পেয়ে কারন জিজ্ঞেস করলে তাকেও মারধর করে। এ ঘটনা জানার পর তিনি ভালো করো খোঁজ নিয়ে শিশুটির ওপর অমানুষিক শারিরীক ও মানসীক নির্যাতনের বিষয়ে সত্যতা জানতে পারেন। পরবর্তীতে তিনি অপরিচিতা নামের ঢাকার একটি সামাজিক সংস্থার সাথে কথা বলেন। তারা তাকে স্থানীয় থানাকে অবগত করতে বলেন।
পরে শনিবার বিকেলে তিনি ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম কে বিষয়টি অবগত করেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)শরিফুল ইসলাম জানান,স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় রাত দশটার দিকে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘরের তালা ভেঙ্গে শিশুটি কে উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তাকে হাসোতালে নিয়ে যাওয়া জয় চিকিৎসার জন্য। শিশুটির শরীররে একাধিক স্থানে ক্ষত রয়েছে। কতোটা পাষন্ড হলে একজন পিতা শিশু সন্তানের সাথে এমন করতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। আজ রোববার সকালে জেলা জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে তারা এসে শিশুটিকে নিয়ে যায়। শিশুটির মায়ের সাথে যোগাযোগ করা চেস্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেন নি বলে তিনি জানান।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের শিশু সুরক্ষা সমাজ কর্মী মোসাম্মৎ তাছলিমা আক্তার জানান, চিকিৎসা শেষে শিশুটির বয়সনুযায়ী সরকারি ছোট মনি নিবাসে শিশুটিকে রাখা হবে। শিশুটি বর্তমানে খুবই অসুস্থ। পুস্টিহীনতা এবং শারীরিক ও মানসীক নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুটি বেশ রুগ্ন হয়ে পরেছে। ফলে তার চিকিৎসাটা খুবই জরুরী।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলিমা নাসরিন জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানান। পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। শিশুটি বর্তমানে জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিকট রয়েছে। তার সু চিকিৎসা সহ সর্ব প্রকার ব্যবস্থা নিবে তারা।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ র হওয়
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিপাইনে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯
ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জন হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা আজ বুধবার এ খবর জানান। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও পানি-বিদ্যুতের সংযোগ আবার চালু করার চেষ্টা করছে ফিলিপাইন সরকার।
দেশটির সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা রাফি আলেজান্দ্রো সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার আগে সেবু প্রদেশের উত্তরে বোগো শহরের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়। স্থানীয় হাসপাতালগুলো আহত মানুষের ভিড়ে রীতিমতো উপচে পড়ছে।
আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স দপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা জেন আবাপো বলেন, সেবুর প্রাদেশিক দুর্যোগ দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে নিহত হওয়ার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬৯ জন। অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, আহত হয়েছেন ১৫০ জনের বেশি।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবেরা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
সেবু ফিলিপাইনের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর একটি। সেখানে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষের বসবাস। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ম্যাকতান-সেবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এটা ফিলিপাইনের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সান রেমিগিও শহরটিও। উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য এ শহরে ‘দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে। শহরের ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস বলেন, উদ্ধারকর্মীদের জন্য খাবার ও পানি, সেই সঙ্গে ভারী সরঞ্জাম প্রয়োজন।
স্থানীয় ডিজেডএমএম রেডিওকে আলফি রেইনেস বলেন, ‘ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। আমাদের সত্যিই সহায়তা দরকার। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। ভূমিকম্পে সেখানে সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
আরও পড়ুনফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২৬, চলছে উদ্ধারকাজ৫ ঘণ্টা আগে