প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় যে ৫টি ভুল করা যাবে না
Published: 30th, September 2025 GMT
প্রথমবার আয়কর রিটার্ন দেওয়ার সময়ে একটু সাবধান হতে হবে। অনেকেই প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় সঠিকভাবে দেন না এবং কৌশলী হন না। এ জন্য পরে বিপাকে পড়েন তাঁরা।
প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময়ে অনেকে ভুল করেন। তাঁদের অনেকের কাছেই অজানা যে প্রথম আয়কর রিটার্নে ঠিক কী কী দেখাতে হয়? প্রথমবার ভুল আয়কর রিটার্ন জমা দিয়ে বড় জরিমানার শিকার হন অনেক করদাতা।
মনে রাখবেন, এ বছর আপনি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত আয়–ব্যয়ের বিবরণী দেবেন।
এবার দেখা যাক, প্রথম রিটার্ন দেওয়ার সময় যে পাঁচটি ভুল করা যাবে না।
১.
নগদ টাকা
আপনার হাতে যত নগদ টাকা থাকুক না কেন, এর পুরোটাই দেখিয়ে দেবেন। অনেকে মনে করেন, নগদ টাকা বেশি দেখালে ঝামেলায় পড়তে পারেন। কিন্তু এই ভাবনা ঠিক নয়। আপনার আয় যদি বৈধ হয়, তাহলে দেখালে কোনো ভয় নেই। আয়কর ফরমে ‘ক্যাশ ইন হ্যান্ড’ ঘরে নগদ টাকা দেখিয়ে দেবেন।
২. সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস, শেয়ার
এত দিন আপনার কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ছিল না কিংবা রিটার্নও দেননি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আপনি সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, স্থায়ী আমানত (এফডিআর), শেয়ার ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করেছেন। এবার প্রথম রিটার্ন দিতে যাচ্ছেন, তাহলে রিটার্নে অবশ্য এসব সম্পদ দেখাবেন। এগুলো রিটার্ন ফরমে আর্থিক পণ্য খাতে দেখাতে হবে।
৩. জমি–ফ্ল্যাট
আপনার নিজের নামে যদি জমি, ফ্ল্যাটসহ স্থাবর সম্পত্তি থাকে, তাহলে এনবিআরকে জানিয়ে দেবেন। এমনকি উত্তরাধিকার সূত্রে কিংবা উপহার বা দান সূত্রে পেলেও তা রিটার্নে উল্লেখ করে দেবেন। এখানে মনে রাখা দরকার, যদি আপনার সম্পদের পরিমাণ ৫০ লাখ টাকার বেশি হয়, তাহলে রিটার্নে আলাদাভাবে সম্পদের বিবরণী দিতে হবে। সম্পদের বিবরণী দেওয়ার জন্য আইটি ১০বি ফরম ব্যবহার করতে হবে।
৪. গাড়ি
আপনার নামে কোনো গাড়ি, মোটরবাইক অথবা এ ধরনের সম্পদ থাকে, তাহলে তা অবশ্যই আয়কর নথিতে দেখাতে হবে। কারণ, গাড়ির জন্য প্রতিবছর আপনি অগ্রিম আয়কর দেন, যা বছর শেষে রিটার্ন জমা দিয়ে যখন কর দেবেন, তখন তা সমন্বয় করতে পারবেন। গাড়ি দেখিয়ে দেওয়া লাভও বটে।
৫. স্বর্ণালংকার
প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় নারী–পুরুষ করদাতা নির্বিশেষে স্বর্ণালংকারসহ দামি গয়না দেখিয়ে দেবেন। এমনকি উপহার পেলেও তা দেখাবেন। অনেক নারী করদাতার সোনার গয়নার পাশাপাশি ডায়মন্ডসহ দামি পাথরের গয়না থাকে। প্রথমবার রিটার্ন দেওয়ার সময় এসব দামি গয়না দেখাতে ভুলে যাবেন না।
মনে রাখতে হবেআপনি প্রথমবার আয়কর রিটার্নে নগদ টাকার পাশাপাশি যত সম্পদ দেখাবেন, এসব সম্পদ অর্জনের ব্যাখ্যা যেন থাকে। আয়ের উৎসের ব্যাখ্যাও দিতে হবে। এসব সম্পদের সপক্ষে যথাযথ প্রমাণ সংরক্ষণ করবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আয়কর র ট র ন নগদ ট ক আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
একজন সরকারি চাকরিজীবী কীভাবে আয়করের হিসাব করবেন
সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের প্রতিবছর আয় ও ব্যয়ের খবর জানিয়ে আয়কর রিটার্ন দিতে হয়। দশম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ, রিটার্ন না দিলে বেতন–ভাতা পাওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়।
এমন সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে আয় ও কর হিসাব করবেন, এর একটি উদাহরণ দেওয়া হলো। প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের হিসাব দিতে হয়। চলতি মাসের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত আছে।
জাহিদ কবির একজন সরকারি কর্মচারী। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আগের এক বছরের আয়–ব্যয়ের হিসাব করতে হবে।
জাহিদ কবিরের আয় হলো মাসিক মূল বেতন ২৬ হাজার টাকা; ২৬ হাজার টাকা করে দুটি উৎসব বোনাস ৫২ হাজার টাকা, চিকিৎসার ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা ৫০০ টাকা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া তিনি রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসায় থাকেন।
এ ছাড়া ভবিষ্য তহবিলে জাহিদ কবির প্রতি মাসে ৩ হাজার ২০০ টাকা জমা রাখেন। হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে পাওয়া প্রত্যয়নপত্রে দেখা যায় যে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা প্রদান বাবদ প্রতি মাসে বেতন থেকে কর্তন ছিল যথাক্রমে ১৫০ ও ১০০ টাকা।
করযোগ্য আয় কত২০২৫–২৬ করবর্ষে জাহিদ কবিরের মোট আয় হলো বেতন খাতে মূল বেতন ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা (২৬ হাজার টাকার ১২ মাসের মূল বেতন) ও উৎসব বোনাস ৫২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
জাহিদ কবির চিকিৎসার ভাতা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পেয়েছেন তা তাঁর জন্য প্রযোজ্য চাকরি (ব্যাংক, বিমা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫–এর অন্তর্ভুক্ত। ফলে এসব ভাতার জন্য তাঁকে আয়কর প্রদান করতে হবে না।
কত কর হবে
কর দায় গণনার হিসাব অনুসারে, প্রথম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করহার শূন্য অর্থাৎ কোনো কর দিতে হবে না। তাই জাহিদ কবিরের ১৪ হাজার টাকার ওপর কর বসবে। এই ১
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত কত
জাহিদ কবির ভবিষ্য তহবিলে প্রতি মাসে ৩ হাজার ২০০ টাকা করে চাঁদা দিয়েছেন। সারা বছরে দিয়েছেন ৩৮ হাজার ৪০০ টাকা। কল্যাণ তহবিলে প্রতি মাসে ১৫০ টাকা করে পুরো বছরে দিয়েছেন ১ হাজার ৮০০ টাকা। গোষ্ঠী বিমা তহবিলে প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে পুরো বছরে দিয়েছেন ১ হাজার ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে জাহিদ কবির বিনিয়োগ করেছেন ৪১ হাজার ৪০০ টাকা।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নেওয়ার নিয়ম হলো মোট আয়ের দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ; মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ কিংবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা—এই তিনটির মধ্যে যেটি কম হবে, তাই রেয়াতের পরিমাণ।
জাহিদ কবিরের মোট আয়ের (৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা) দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ হলো ১০ হাজার ৯২০ টাকা; মোট অনুমোদনযোগ্য হলো (৪১ হাজার ৪০০ টাকার ১৫ শতাংশ) ৬ হাজার ২১০ টাকা। বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা ১০ লাখ টাকা। এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে কম হলো ৬ হাজার ২১০ টাকা। এটিই হলো জাহিদ কবিরের প্রাপ্য কর রেয়াতের পরিমাণ।
কর রেয়াত পাবেন কিযেহেতু জাহিদ কবিরের মোট আয়ের ওপর প্রযোজ্য কর ৭০০ টাকা এবং আইনানুগ রেয়াতের পরিমাণ ৬ হাজার ২১০ টাকা। এই ক্ষেত্রে করদাতা কোনো প্রকার কর রেয়াত প্রাপ্য হবেন না। কর রেয়াতের পরিমাণ কখনোই কর দায়ের বেশি হবে না। সেই ক্ষেত্রে জাহিদ কবিরের করের পরিমাণ ৭০০ টাকা।
কিন্তু আয়কর আইন অনুসারে, জাহিদ কবিরকে দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। কারণ, করদাতার অবস্থান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় হলে ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় হলে ন্যূনতম চার হাজার টাকা ও সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় হলে তিন হাজার টাকা দিতে হবে।৪ হাজার টাকার ওপর কর বসবে। হিসাবটি এমন, করের হিসাবের প্রথম স্তরে ১ লাখ টাকার হিসাবে ৫ শতাংশ হারে ৭০০ টাকা কর প্রযোজ্য হবে।