শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানো সরকারের মূল দায়িত্ব
Published: 30th, September 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় তিনজন নিহত এবং সেনাসদস্য, পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত রোববার জেলার গুইমারা উপজেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সহিংসতা ও গুলির ঘটনা ঘটে। পরে একদল দুর্বৃত্ত গুইমারার রামেসু বাজারে ঢুকে দোকানপাট ও বসতঘরে আগুন দেয় এবং লুটপাট চালায়।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতা ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনমনে, বিশেষ করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হয়েছে, সেটা প্রশমনের দায়িত্ব সরকারের। এই মুহূর্তে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনাটাই মূল চ্যালেঞ্জ।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২৪ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিন থেকে ‘জুম্ম ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে পাহাড়ি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার ছাত্র-তরুণেরা আন্দোলন করে আসছিলেন। একপর্যায়ে বাঙালি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হওয়ায় সহিংসতার শঙ্কায় প্রশাসন খাগড়াছড়ি সদর ও দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
ধর্ষণ মামলায় এক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পরও কেন কর্মসূচি অব্যাহত থাকল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, সাধারণ পাহাড়িদের পেছন থেকে কোনো গোষ্ঠী উসকে দিয়েছে। পরিস্থিতি অবনতির পেছনে কারও ইন্ধন যদি থাকে, সেটা তদন্ত করে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারহীনতা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে যে উদ্বেগ রয়েছে, সেটা নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটা দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে এক বিবৃতিতে জানাচ্ছে, শুধু খাগড়াছড়িতেই গত এক বছরে সাতজন পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যার একটিরও বিচার হয়নি। ফলে আন্দোলনের পেছনে নারীর নিরাপত্তা ও বিচারহীনতার কারণে পাহাড়িদের ক্ষোভকেও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে একের পর এক ভুয়া ভিডিও, অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেটাও সহিংসতা উসকে দিতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। ভুয়া ভিডিও ও অপতথ্যের উৎস খুঁজে বের করা এবং সেটা বন্ধে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবার ব্যর্থ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য কীভাবে জাতিগত, সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সহিংসতা উসকে দেয়, দেশে-বিদেশে তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত থাকার পরও এটা মোকাবিলায় কার্যকর পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারাটা যারপরনাই দুঃখজনক।
খাগড়াছড়ির কিশোরী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত বাকি দুজনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতা, অগ্নিকাণ্ড, লুটপাটের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা অপতথ্য ছড়িয়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরি। সহিংসতায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো ও যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়াটাও রাষ্ট্র ও সরকারের জরুরি কর্তব্য বলে আমরা মনে করি।
খাগড়াছড়িতে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরাতে ও জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে সব পক্ষের ধৈর্য ও সংযত আচরণ প্রত্যাশিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের সঙ্গে পাহাড়ি ও বাঙালি নেতাদের এখানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-মাদারীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে বিজিবি
ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরের সার্বিক নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে দায়িত্ব পালন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
বিজিবি সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণার নির্ধারিত দিন ছিল ১৩ নভেম্বর। সেদিন ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ৭ নভেম্বর রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়। আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অনলাইনে আবার কর্মসূচির কথা বলছে। এর মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।