খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় তিনজন নিহত এবং সেনাসদস্য, পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত রোববার জেলার গুইমারা উপজেলায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সহিংসতা ও গুলির ঘটনা ঘটে। পরে একদল দুর্বৃত্ত গুইমারার রামেসু বাজারে ঢুকে দোকানপাট ও বসতঘরে আগুন দেয় এবং লুটপাট চালায়।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতা ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনমনে, বিশেষ করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি হয়েছে, সেটা প্রশমনের দায়িত্ব সরকারের। এই মুহূর্তে সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা এবং জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনাটাই মূল চ্যালেঞ্জ।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২৪ সেপ্টেম্বর ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ার পর অভিযুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেদিন থেকে ‘জুম্ম ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে পাহাড়ি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার ছাত্র-তরুণেরা আন্দোলন করে আসছিলেন। একপর্যায়ে বাঙালি সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হওয়ায় সহিংসতার শঙ্কায় প্রশাসন খাগড়াছড়ি সদর ও দুই উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

ধর্ষণ মামলায় এক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পরও কেন কর্মসূচি অব্যাহত থাকল, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, সাধারণ পাহাড়িদের পেছন থেকে কোনো গোষ্ঠী উসকে দিয়েছে। পরিস্থিতি অবনতির পেছনে কারও ইন্ধন যদি থাকে, সেটা তদন্ত করে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারহীনতা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে যে উদ্বেগ রয়েছে, সেটা নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটা দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে এক বিবৃতিতে জানাচ্ছে, শুধু খাগড়াছড়িতেই গত এক বছরে সাতজন পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যার একটিরও বিচার হয়নি। ফলে আন্দোলনের পেছনে নারীর নিরাপত্তা ও বিচারহীনতার কারণে পাহাড়িদের ক্ষোভকেও সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেভাবে একের পর এক ভুয়া ভিডিও, অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে, সেটাও সহিংসতা উসকে দিতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। ভুয়া ভিডিও ও অপতথ্যের উৎস খুঁজে বের করা এবং সেটা বন্ধে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবার ব্যর্থ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপতথ্য কীভাবে জাতিগত, সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সহিংসতা উসকে দেয়, দেশে-বিদেশে তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত থাকার পরও এটা মোকাবিলায় কার্যকর পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারাটা যারপরনাই দুঃখজনক।

খাগড়াছড়ির কিশোরী ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত বাকি দুজনকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতা, অগ্নিকাণ্ড, লুটপাটের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা অপতথ্য ছড়িয়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরি। সহিংসতায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো ও যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়াটাও রাষ্ট্র ও সরকারের জরুরি কর্তব্য বলে আমরা মনে করি।

খাগড়াছড়িতে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরাতে ও জনজীবনে স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে সব পক্ষের ধৈর্য ও সংযত আচরণ প্রত্যাশিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের সঙ্গে পাহাড়ি ও বাঙালি নেতাদের এখানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপতথ য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফের পাহাড়ে পাচারের উদ্দেশ্যে জিম্মি রাখা আরও ২১ নারী ও শিশু উদ্ধার

সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার গহিন পাহাড়ে জিম্মি রাখা নারী, শিশুসহ ২১ জনকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ দল।

কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, গতকাল বুধবার মধ্যরাতে বাহারছড়া ইউনিয়নের করাচিপাড়া ঘাটসংলগ্ন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। পাচারের জন্য নারী, শিশুসহ কয়েকজনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল—এমন খবর পেয়ে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অভিযান চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। পরে আস্তানাটি তল্লাশি করে ২১ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিক।

উদ্ধার হওয়াদের টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখান থেকে তাঁদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।

এর আগে ১ অক্টোবর বাহারছড়ার জুম্মাপাড়া পাহাড়সংলগ্ন এলাকা থেকে আটজন নারী ও শিশুকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে একই এলাকার পাহাড় থেকে তিন দালালসহ তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর কচ্ছপিয়া এলাকার পাহাড় থেকে পাঁচ অপহৃতকে উদ্ধার এবং দুই মানব পাচারকারীকে আটক করা হয়। এর আগের দিন র‍্যাব ও বিজিবি অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তিন পাচারকারীকে গ্রেপ্তার ও ৮৪ জনকে উদ্ধার করে। ১৮ সেপ্টেম্বর কোস্টগার্ড ৬৬ জনকে উদ্ধার করে। ১৬ সেপ্টেম্বর বিজিবি ১২ পাচারকারীকে আটক ও ১১ জনকে উদ্ধার করে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে টেকনাফ থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার এবং ২০১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। শীত মৌসুমে সাগরপথে মানব পাচারের প্রবণতা বাড়ে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর বলেন, বুধবার উদ্ধার হওয়া সাত রোহিঙ্গা নারী ও একজন শিশুকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আরও ২১ নারী ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের আগামীকাল শুক্রবার আদালতে পাঠানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৈরী আবহাওয়ায়ও উৎসবের আমেজ, এক ঘণ্টায় ১২৭ প্রতিমা বিসর্জন
  • টেকনাফের পাহাড়ে পাচারের উদ্দেশ্যে জিম্মি রাখা আরও ২১ নারী ও শিশু উদ্ধার
  • অনীষাদের পূজার আনন্দ বাড়িয়ে দিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী
  • চার দিন পর স্বাভাবিক যান চলাচল, জনজীবনে স্বস্তি
  • পূজামণ্ডপের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা জানতে ও ব্যবস্থা নিতে ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপ’ চালু এনটিএমসির
  • দুর্গাপূজা যাতে শান্তিপূর্ণ না হতে পারে, সে জন্যই খাগড়াছড়ির ঘটনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • খাগড়াছড়িতে আজও অবরোধ চলছে, স্থবির জনজীবন
  • খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করছে বিজিবি
  • `কিছুই নাই, সব ছাই, ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে'