দেশজুড়ে মাজার ভাঙা, ফকির-সাধু ব্যক্তিদের জোর করে চুল কেটে দেওয়া, নারীদের প্রতি আক্রমণ বা হেনস্তার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার যথার্থ বলেছেন, মাজার ভাঙার ঘটনায় সরকার অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছে, এমন প্রমাণ নেই (প্রথম আলো, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫)। এ কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েই চলেছে।

সরকারের নির্লিপ্ততা ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রধানতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অপরাধীদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তারা বেশ অনুকূল সরকার পেয়েছে। সরকার এসব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা জানানোই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে।

ইতিমধ্যে সরকারের প্রেস সচিব বলেছেন, সরকারের নিন্দা জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব (ঢাকা ট্রিবিউন; ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫)। মনে রাখতে হবে, নিন্দা জানানোর মধ্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ‘সরকারের নিন্দা’ জনগণের কাছে এক নতুন রাজনৈতিক অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মনে হচ্ছে মানবাধিকার সুরক্ষায় জনগণ এক নির্লিপ্ত বাংলাদেশ দেখছে!

আরও পড়ুন‘আল্লাহ তুই দেহিস’: চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার এই জুলুম কে থামাবে২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মানবাধিকার সামষ্টিক এবং ব্যক্তিক অধিকার বটে। কোটি মানুষের মানবাধিকার এবং একজন ব্যক্তির মানবাধিকার সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেই অর্থে নুরাল পাগলা বা ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দের মানবাধিকারও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নুরাল পাগলার চিন্তাচর্চায় যদি কোনো আপত্তি থাকে, তবে তা উন্নত চিন্তা দিয়ে কাউন্টার করতে হবে। তাই বলে বহু চিন্তার বিনাশ কিছুতেই কাম্য নয়। এসব ঘটনা সমাজের ক্ষয় ও ক্ষরণের রুগ্ণ চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।

ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দের চুলগুচ্ছ তাঁর বিশেষ চিহ্ন, বিশেষ পরিচয় ও চর্চার ধারক। জোর করে হালিম উদ্দিন আকন্দের চুল কাটা, তথাকথিতভাবে তাঁকে স্বাভাবিক অবয়বে আনার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। হালিম উদ্দিন আকন্দ বা নুরাল পাগলার যে পছন্দ, সেটিই তাঁদের মানবাধিকার। ব্যক্তির আত্মমর্যাদা ও পরিচয় কেউ নির্মাণ করে দেয় না। সুতরাং তা কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। মূলকথা হলো অন্যরা যা দেয় না, তা কেড়ে নিতে পারে না।

এ দেশের মানুষ ঘনসমাজে বাস করে। ফলে যারা এসব অপকর্ম করছে, তারা খুব অপরিচিত নয়। কিন্তু এদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না বা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি দেখে ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়ার আশাও উবে যাচ্ছে। ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দকে বলতে হচ্ছে ‘আল্লাহ, তুই দেহিস’। এই গভীর আস্থাহীনতা ভঙ্গুর শাসনব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করছে।

সাংবাদিক জাহিদ নেওয়াজ খানের কাছে শোনা একটি উদাহরণ এ ক্ষেত্রে বেশ প্রাসঙ্গিক। একজন যৌনকর্মীকে এক সংঘবদ্ধ চক্র জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনা প্রকাশ পেলে সাংবাদিকেরা ওই ভুক্তভোগীর কাছে যান। ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যৌনকর্মী ১০ টাকায় কাম করি, আমাকে জোর করল ক্যান?’ ব্যক্তির এই যে পছন্দ বা সিদ্ধান্ত, সেটিই মানবাধিকার। মানবাধিকার সবার জন্য, সবখানে, সমানভাবে। মানবাধিকার অবিভাজ্য ধারণ। ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে কিন্তু ভিন্নমত চর্চার অধিকার বাধাগ্রস্ত হবে, তা হয় না। মানবাধিকার সব অধিকারের সমষ্টি।

ফকির–সাধুদের চুলগুচ্ছ বা মাজার যে বিশাল শক্তির আধার, তা আজ প্রমাণিত হচ্ছে। এটি প্রমাণ করছে দঙ্গল বাহিনীর বিশেষ তৎপরতা। ফকির–সাধুদের চুলগুচ্ছ অন্যদের জন্য আতঙ্কের প্রতীক হয়ে উঠছে। ক্ষুর, কাঁচি আর ট্রিমার নিয়ে নেমে পড়েছে চুল নিধনে। তাদের দোসর আনুগত্যশীল সরকার। এ বিশেষ বাহিনীর ফকির–সাধুদের কেবল দৃশ্যমান চুলে অস্বস্তি, অদৃশ্য চুলের প্রতি কোনো মনোযোগ নেই!

হালে আরেকটি খবর চাউর হয়েছে। কিছু সংগঠন ও উদ্যোক্তা নাকি চুল কেটে তার ভিডিও প্রচার করছে ভিউ–বাণিজ্যের আশায়। ফ্যাক্টচেকাররা বলছেন, এর ভেতর রয়েছে ভিউ–বাণিজ্যের বিশেষ দিক।

এ দেশের মানুষ ঘনসমাজে বাস করে। ফলে যারা এসব অপকর্ম করছে, তারা খুব অপরিচিত নয়। কিন্তু এদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না বা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি দেখে ভুক্তভোগীদের বিচার পাওয়ার আশাও উবে যাচ্ছে। ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দকে বলতে হচ্ছে ‘আল্লাহ, তুই দেহিস’। এই গভীর আস্থাহীনতা ভঙ্গুর শাসনব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করছে।

সিনিয়র সাংবাদিক মীর মাসরুর জামানের কাছে শোনা একটি গল্প। তিনি মানবাধিকারের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গল্পটি শেয়ার করেন। তা হলো রাম বনবিহারে বেরিয়েছেন। পথের মধ্যে তাঁর পিপাসা পেল। হাতে রাখা ফলাটি মাটিতে গেঁথে ঝরনায় গেলেন পানি পানের জন্য। ফিরে এসে ফলাটি তুললেন। দেখলেন, অগ্রভাগে এক ফোঁটা রক্ত। রক্ত দেখে রাম আহত হলেন। মাটি খোঁড়া শুরু করলেন। দেখলেন মাটির নিচে ছোট্ট একটি ব্যাঙাচি।

রাম বললেন, ‘তুমি বললে না কেন যে এখানে আছ?’ ব্যাঙাচি বলল, ‘আমরা যখন বিপদের আশঙ্কা করি, তখন রামকেই স্মরণ করি। স্বয়ং রাম যখন ফলা গাঁথছেন, তখন কার কাছে সাহায্য চাইব!’ অর্থাৎ একটি নির্লিপ্ত সরকারের পদক্ষেপহীনতা যখন অপরাধীদের উৎসাহিত করছে, তখন বাউল ফকিরেরা কার কাছে প্রতিকার চাইবেন? এমন পরিস্থিতিতে ফকির হালিম উদ্দিন আকন্দকে নৈরাশ্যের পথ দেখতে হচ্ছে।

পৃথিবীতে প্রতিটি সত্তা স্বতন্ত্র। এ স্বাতন্ত্র্যের ভেতর ঐক্য থাকে, যাকে তাত্ত্বিক রেমন্ড উইলিয়াম বলেছেন ফিলিং স্ট্রাকচার মানে বিনি সুতার মালা। এ বিনি সুতার মালা দিয়ে মানুষে মানুষে সম্পর্কগুলো তৈরি ও বাঁধা। মানুষ রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মবিশ্বাসসহ নানা পরিচয় নিয়ে এক সমাজে বাস করে। সমাজ হয়ে ওঠে বহুমুখিতার সমষ্টি। কিন্তু বহুত্ববাদের অভ্যস্ততায় মানুষ যখন অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে, তখন সমাজে বিপদ নেমে আসে। আজকের সমাজ সেই অন্ধকারের অভীমুখীন।

অন্যের বিশ্বাস সবচেয়ে অনুন্নত ও অপরিশুদ্ধ, এ সনদ কে দিল? বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠত্ববোধ অবৈধ কর্তৃত্ব তৈরি করে। এ অবৈধ কর্তৃত্ব জন্ম দেয় একদল শাখামৃগের। যারা এক হৃদয়হীন সত্তা। সমাজে সেই অবৈধ কর্তৃত্বের স্বরূপ দৃশ্যমান হচ্ছে। তারা অন্যদের নিজেদের বিশ্বাসের উপযোগী করে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছে। সবাইকে নিজেদের আদলে সাজাতে চাইছে। ভিন্নমত বা আদর্শ তাদের কাছে অস্বস্তিকর।

এর কারণ, ফকির–সাধু ব্যক্তিদের লম্বা চুল, জটবাঁধা চুল তাদের অস্বস্তি উৎপাদন করে। তারা ফকির–সাধক ব্যক্তিদের পরিশুদ্ধ করতে চায়, নিজেদের বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে চায়। সমাজে এ দঙ্গলের সংখ্যা কম নয়।

এসব ভয়ংকর দঙ্গলের শাসনে পড়েছে ভিন্নমতাদর্শ, চিন্তা ও চর্চাকেন্দ্র। ভিন্নমতাদর্শ বা চর্চার কেন্দ্রগুলোর সংখ্যা খুব বেশি নয়। কিন্তু ছোট সংখ্যা দেখে তারা ভয় পাচ্ছে। আমেরিকান তাত্ত্বিক অর্জুন আপাদুরাই তাঁর ফেয়ার অব স্মল নম্বর গ্রন্থে বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। মতাদর্শিক পরিশুদ্ধকরণ বা বড়করণ প্রক্রিয়ায় বড়রা ছোটদের দেখে বেশি ভয় পায়। সংখ্যায় নগণ্য মাজার, বাউল ফকির ও সাধকেরা তাদের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে উঠছে।

মানবাধিকার জিতলে সবাই জিতে যায়, যেমন মুসলিম, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, সাদা-কালো, ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ। সমস্যা হলো মানুষ একাই জিততে চায়, কখনো কখনো গোষ্ঠী বা বিশ্বাস নিয়ে জিততে চায়। মোদ্দা কথা, সবাই জিততে না পারলে এককভাবে কেউ জিততে পারে না। সেই অর্থে মানবাধিকার পৃথিবীর অন্যতম মৌলিক দর্শন। মানবাধিকার সব সত্তাকেই ধারণ করে। মানুষের মর্যাদাপূর্ণ জীবনের জন্য যা প্রয়োজন, তার সবই মানবাধিকারের অংশ।

মানুষকে খেয়ে ফেলার সবচেয়ে উর্বর সময় চলছে পৃথিবীজুড়ে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ সভায় ভাষণে বলেছেন, দুনিয়াজুড়ে স্বচ্ছতার পরিধি কমে আসছে আর বাড়ছে কবরের পরিধি। দুনিয়াজুড়ে শাসকগোষ্ঠী মানুষের সক্রিয় অস্তিত্বকে, ভিন্নমত বা আদর্শকে ভয় পাচ্ছে।

কথা হলো স্পিরিচুয়ালি মানুষকে নিঃশেষ করা যাচ্ছে না। জীবনের অধিকার, মানবিক মর্যাদার অধিকার আজ প্রণিধানযোগ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মানবাধিকারের ধারণা বিকশিত, সুরক্ষিত এবং পূর্ণতা পেলেই নাগরিক অধিকার অর্জিত হবে। মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রের ভূমিকাই মুখ্য। প্রতিটি মত, বিশ্বাস, ধর্ম, নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যসহ সব পরিচয়ের মানুষের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। দোহাই, কানে পানি তুলুন, নাগরিক অধিকার সুরক্ষা করুন।

খান মো.

রবিউল আলম যোগাযোগ পেশাজীবী ও শিক্ষক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র স র ম নব ধ ক র অপর ধ দ র র স রক ষ ভ ন নমত সরক র র বল ছ ন র জন য এমন প

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ