জাতীয় দলের জার্সিতে, লাল সবুজের পতাকাকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ, সময়, সম্ভাবনা এমনিতেই দিনকে দিন কমে যাচ্ছিল সাকিব আল হাসানের। দেশের বাইরে বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে সাকিবের ব্যাট-বল যখন হাসে তখন আবার তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়৷ পাওয়ার আশা জাগে।

যেকোনো বয়সেই সাকিবকে একবার কি আর দেখা যাবে? বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় সুপারস্টারের শেষটা একটুও কি রঙিন হতে পারে। একটু আধটু সম্ভাবনা যা-ও ছিল, সেটাও যেন শেষ হয়ে গেল কথার লড়াইয়ে। সরাসরি কিংবা মুখোমুখি হলেও হতো, ইঙ্গিতপূর্ণ লড়াইয়ে সাকিবের শেষটা লেখা হয়ে গেল নিশ্চিতভাবেই।

ফেসবুক পোস্ট। কার উদ্দেশে বলছেন, কোনো নাম নেই। তবে যারা বোঝার, তারা ঠিকই বুঝছেন, কথাগুলো কাকে নিয়ে বলা। সাকিব আল হাসান ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পোস্ট চলছে এভাবেই।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর, রোববার সাকিব আল হাসানের এক পোস্ট থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। সাকিব ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করেন। যেখানে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাকে দেখা যায়। ছবির ক্যাপশনে সাকিব লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন, আপা।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। সাকিব তখন নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। আরও অনেকের মতো সাকিবের নামেও হত্যা মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ আছে, আছে দুদকের মামলা।

গণ–অভ্যুত্থানের পরপর পাকিস্তান ও ভারতে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে খেললেও দেশের মাটিতে তাকে খেলার অনুমতি দেয়া হয়নি। সাকিব চেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলে অবসর নেবেন। আমেরিকা থেকে দেশের পথে রওনাও দেন। তার চাওয়া ছিল দেশের মাটিতে খেলা ও নিরাপদে দেশ ত্যাগ। কিন্তু বিসিবি সাকিবকে সেই সুযোগ করে দিতে পারেনি। কেন পারেনি সেই উত্তর অজানা ছিল।

সাকিবের জন্মদিনের স্ট্যাটাসের পর ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, `‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। এন্ড অব দ্য ডিসকাশন।’’ সেই একজনটা যে সাকিব আর তাকেই পুনর্বাসনের কথা বলা হয় স্পষ্ট হয়ে যায়।

পাল্টা জবাব দেন সাকিবও, `‘যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তার জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না! ফিরব হয়তো কোনো দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ।’’

এটার জবাব আসিফ মাহমুদ আরও কড়া দিয়েছেন। সঙ্গে কিছুটা বিদ্রূপও, ‘`ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। ইউ নো হু।’ মানে কথাগুলো কার, সেটা আপনারা সবাই-ই জানেন।’’

স্ট্যাটাসের পরের অংশে, ``‘যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফাইন্যান্সিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, ফেস ইট।’’

যতটুকু শোনা যাচ্ছে, সাকিবকে নিষিদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া চলছে। গণমাধ্যমকে আসিফ মাহমুদ বলেন, `‘তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের জার্সির পরিচয় বহন করতে দেয়া, এটা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সুযোগ করে দেয়া সম্ভব না। ইতোপূর্বে এটা আমি বিসিবিকে না বললেও এখন আমার বোর্ডের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে, সাকিব আল হাসান আর কখনও বাংলাদেশ টিমে খেলতে পারবেন না।’’

এদিকে ভার্চুয়াল যুদ্ধের মাঝেই দু;সংবাদ শুনতে হয়েছে সাকিবকে। অর্থ পাচারসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নতুন কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

ঢাকা/ ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ব আল হ স ন স ক বক

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ