কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন ভাইরাস তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও আর্ক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ভাইরাস তৈরির জন্য প্রথমে বেশ কিছু ভাইরাল জিনোমের নকশা করা হয়। এরপর সেই জিনোমগুলোকে ভাইরাস হিসেবে বিকশিত করা হয় গবেষণাগারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি ভাইরাস সফলভাবে ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রমিত করেছে। জেনারেটিভ এআই মডেল ব্যবহার করে কার্যকরী জেনেটিক উপাদান তৈরির ক্ষেত্রে এই ঘটনাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন হেলথের জীববিজ্ঞানী জেফ বোকে জানান, এই ভাইরাস নতুন জিন, সংক্ষিপ্ত আকারের জিন বা প্রাকৃতিক সংস্করণের তুলনায় ভিন্ন জিন বিন্যাস প্রদর্শন করেছে। ভাইরাস তৈরিতে ব্যবহৃত এআই সিস্টেম ইভো মূলত চ্যাটজিপিটির মতো একটি এলএলএম মডেল। এই মডেল ব্যবহার করে ৩০২টি পূর্ণ জিনোমের নকশা করার পর তা ই-কোলাই সিস্টেমে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৬টি নকশা কার্যকরী ব্যাকটেরিওফাজ তৈরি করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি ভাইরাস প্রতিলিপি তৈরি করতে ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সক্ষম।

আর্ক ইনস্টিটিউট ল্যাবের প্রধান ব্রায়ান হি বলেন, গবেষণাগারে ব্যাকটেরিয়া মারা যাওয়ার ঘটনা স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল। এটি বেশ অসাধারণ ঘটনা ছিল। গবেষণার অংশ হিসেবে এআইকে প্রায় ২০ লাখ ব্যাকটেরিওফাজের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফাইএক্স১৭৪ নামের ব্যাকটেরিওফাজের তথ্য বেশি দেওয়া হয়। এটি ৫ হাজার বেস ও ১১টি জিনসহ একটি ছোট ডিএনএ ভাইরাস। জেনেটিক প্যাটার্ন ও জিনের বিন্যাস বিশ্লেষণ করে এআই নতুন জিনোমের নকশা তৈরি করেছে।

সিনথেটিক বায়োলজির পথিকৃৎ জে ক্রেইগ ভেন্টার এই কৃত্রিম জিনোম বহনকারী কোষ তৈরিতে কাজ করেছেন। তিনি এই পদ্ধতিকে ভুল ও সংশোধনমূলক পরীক্ষার একটি দ্রুত সংস্করণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আগে এ ধরনের কাজ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করতে হতো। নতুন প্রযুক্তির বড় সুবিধা হচ্ছে গতি। ফলে এআই দ্রুত প্রোটিনের গঠন ও জিনোমের নকশা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি নতুন ওষুধ আবিষ্কার, জৈবপ্রযুক্তি ও ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসায় ভালো কাজ করবে।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত প্রধান বিজ্ঞানী স্যামুয়েল কিং বলেন, এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা অনেক। তবে এই প্রযুক্তির অপব্যবহার হলে তা ভবিষ্যতে বিপজ্জনক হতে পারে। আর তাই ঝুঁকি কমাতে এআইকে প্রশিক্ষণের সময় মানব-সংক্রমণকারী ভাইরাসের তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ গুটিবসন্ত বা অ্যানথ্রাক্সের মতো ভাইরাস নিয়ে কাজ করেন, তবে তা হবে বেশ উদ্বেগজনক।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত জ ন ম র নকশ কর ছ ন ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ