কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত রাখলেন লাদাখের নেতারা
Published: 30th, September 2025 GMT
লাদাখের আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করে দিলেন। তাঁরা বলেছেন, ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার জন্য কারা দায়ী, তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। সেই তদন্তের ভার দিতে হবে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতিকে।
একই সঙ্গে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ম্যাগসাইসাই পুরস্কারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সোনম ওয়াংচুকসহ গ্রেপ্তার করা সবার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
সোনম ওয়াংচুককে কেন্দ্রীয় সরকার ‘পাকিস্তানি চর’ বলেছে। বলেছে, জনতাকে তিনিই সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন। তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
লেহ্ অ্যাপেক্স বডির (ল্যাব) চেয়ারম্যান থুপস্টান ছেওয়াং ও কো-চেয়ারম্যান শেরিং দোরজি গতকাল সোমবার আলোচনা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও গ্রেপ্তার করা সবাইকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন না।
লাদাখের দুটি জেলা। লেহ ও কারগিল। ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এ ধূসর পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা বৌদ্ধ ও মুসলমান। জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ। পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার দাবিতে দুই সম্প্রদায়ই একমত।বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী–অধ্যুষিত লেহ্র আন্দোলনকারী নেতাদের এ সিদ্ধান্তকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন মুসলিমপ্রধান কারগিলের নেতারা। কারগিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (কেডিএ) নেতা সাজ্জাদ কারগিলি একই দিন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, ল্যাবের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাঁরা সম্পূর্ণ একমত। তাঁদেরও দাবি, ওয়াংচুকসহ গ্রেপ্তার করা সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
সাজ্জাদ কারগিলি বলেন, পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত করার দাবি নিয়ে কোনোরকম আপস সম্ভবপর নয়। ল্যাব ও কেডিএ এই বিষয়ে অনড় থাকবে। দাবি না মেটা পর্যন্ত তাঁরাও আলোচনা স্থগিত রাখার পক্ষে।
লাদাখের দুটি জেলা। লেহ্ ও কারগিল। ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এ ধূসর পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা বৌদ্ধ ও মুসলমান। জনসংখ্যা মাত্র তিন লাখ। পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত হওয়ার দাবিতে দুই সম্প্রদায়ই একমত। এ ছাড়া তাঁরা চান স্থানীয় লোকজনের চাকরির জন্য এক পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন ও লোকসভায় আরও একটি আসন বৃদ্ধি। বর্তমানে গোটা লাদাখের জন্য লোকসভায় আসন রয়েছে একটি।
ল্যাবের সিদ্ধান্ত ও তাকে কেডিএ সমর্থন জানানোর পর গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, আলোচনার জন্য সরকারের দরজা খোলা থাকছে। কেন্দ্রীয় সরকারের গড়ে দেওয়া উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সঙ্গে আলোচনায় ইতিমধ্যে অনেক বিষয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। সরকার চায়, আলোচনা অব্যাহত থাকুক।
আগামী ৬ অক্টোবর সেই আলোচনার পরবর্তী দিন। কিন্তু ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু, বহু মানুষের আহত হওয়া ও সোনম ওয়াংচুকসহ অনেকের গ্রেপ্তার পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে। লেহ্তে এখনো কারফিউ চলছে। যদিও কয়েক ঘণ্টার জন্য তা শিথিল করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার সোনম ওয়াংচুক, লাদাখে উত্তেজনা২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ল্যাব নেতা থুপস্টান ছেওয়াং ও শেরিং দোরজি এবং কেডিএ নেতা সাজ্জাদ কারগিলি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, এত দিন ধরে চলা আন্দোলন একমুহূর্তের জন্যও অশান্ত হয়নি। সোনম ওয়াংচুকের আন্দোলনের শক্তি শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহ, অনশন। তিনিও সব লাদাখির মতোই শান্তিপ্রিয় মানুষ, গান্ধীবাদী। কাজেই ২৪ সেপ্টেম্বর সহিংসতার জন্য কারা প্রকৃত দায়ী, তা জানা দরকার।
লেহ্র সড়কে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা। অদূরে অগ্নিসংযোগ করা পুলিশের গাড়ি থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর স প ট ম বর ক রগ ল র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।
বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।
এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’
বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।
গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।