Prothomalo:
2025-10-02@23:51:18 GMT

মাতৃরূপে ঈশ্বরের উপাসনা

Published: 30th, September 2025 GMT

ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব ও নৃতত্ত্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের গবেষণা, যা–ই বলুক না কেন, সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হয়, সভ্য মানুষ যখন প্রথম ঈশ্বরের কল্পনা করেছিল, অথবা মানুষ যখন তার চেয়ে উচ্চতর বা ঊর্ধ্বতর কোনো অলৌকিক অথবা অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রথম কল্পনা করেছিল, তখন সে ঈশ্বরকে অথবা সেই অতিমানবিক শক্তিকে নারী হিসেবেই ভেবেছিল। আমাদের মনে হয়, মানবেতিহাসে ঈশ্বর–ধারণার সে–ই সূচনা৷

বলা বাহুল্য, মানুষের মানসচক্ষে ঈশ্বরের যে রূপটি তখন ভেসে উঠেছিল, তা ছিল স্বাভাবিকভাবেই তার আপন গর্ভধারিণীরই এক মহত্তর, আদর্শায়িত রূপকল্প। অর্থাৎ সভ্য মানুষের চিন্তায় ঈশ্বর সম্ভবত মাতৃরূপেই প্রথম কল্পিত হয়েছেন।

আমরা নিছক কল্পনার ডানায় ভর করে এ কথা বলছি তা নয়। আমাদের ধারণার ভিত্তি অবশ্যই আছে। মানবসভ্যতার প্রাচীনতম সাহিত্য বা মানুষের প্রাচীনতম ‘লিপিবদ্ধ ইতিহাস’ ঋগ্‌বেদে আমরা এর সমর্থন পাচ্ছি। ঋগ্‌বেদের দশম মণ্ডলের দশম অনুবাকের ১২৫তম সূক্তটি ‘দেবীসূক্ত’ নামে প্রসিদ্ধ।

মানবসভ্যতার প্রভাতে উচ্চারিত এই সূক্তে আমরা ঋষি অম্ভৃণের কন্যা ঋষি বাকের উপলব্ধির সঙ্গে পরিচিত হই। ঋষি বাক উপলব্ধি করেছিলেন: জগৎ-প্রপঞ্চের পেছনে জগৎ-কারণরূপে যিনি অবস্থান করছেন, যাঁর অঙ্গুলি হেলনে বা ইচ্ছানুসারে সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র প্রভৃতি পরিচালিত হচ্ছে; যাঁর প্রভাব ব্যতীত রুদ্র তাঁর ধনুকে জ্যা বসাতে অসমর্থ; ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর মধ্যে যিনি ওতপ্রোতভাবে অনুস্যূত ও পরিব্যাপ্ত এবং তার বাইরেও যিনি বিদ্যমান, তিনি একজন নারী। তিনিই জগতের ঈশ্বরী, আদ্যাশক্তি। দেবীসূক্তের পরেই ‘রাত্রিসূক্ত’। ঋগ্‌বেদের দশম মণ্ডলের দশম অনুবাকের ১২৭তম সূক্তটিই প্রসিদ্ধ ‘রাত্রিসূক্ত’।

এই সূক্তে তৎকালীন মানুষের যে পরিচয় আমরা পাই, সে মানুষ হিংস্র প্রাণী ও দুর্ধর্ষ দস্যুর পীড়নে আর্ত ও সন্ত্রস্ত; শত্রুর (অসুরের?) আক্রমণের আশঙ্কায় সদা উদ্বিগ্ন। শঙ্কাহীন, নিরুদ্বেগ জীবন ও শত্রুনাশের জন্য তারা তাই ব্যাকুলভাবে প্রার্থনায় রত।

স্মরণাতীতকালে আমাদের এই অগ্রজদের প্রার্থনা কার কাছে? কার উদ্দেশে তাঁরা নতজানু? রাত্রিসূক্তের ঋষি কুশিকের ভাষায়—তিনি হলেন সর্বব্যাপিনী, বিশ্ববিধাত্রী, বিশ্বত্রাত্রী, বিশ্বপ্রসবিত্রী, জগৎ-প্রকাশিকা আদ্যাশক্তি। ঋষি তাঁকে ‘রাত্রি’ নামে অভিহিত করেছেন।

ভাষ্যকারদের মতে, ‘রাত্রি’ শব্দের অর্থ ‘অভীষ্টদাত্রী’। শুধু ঋগ্বেদেই নয়, সামবেদেও ‘রাত্রিসূক্ত’ আছে। সেখানেও দেখা যায়, আদ্যাশক্তির আদেশে সূর্য, বায়ু, বরুণ ও পৃথিবী নিজ নিজ ভূমিকা পালন করছেন। অসুরবধের জন্য, অমঙ্গলনাশের জন্য তিনি বারবার পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।

যজুর্বেদ ও অথর্ববেদেও বিভিন্ন স্ত্রী-দেবতার উল্লেখ রয়েছে। বেদের আরণ্যক, ব্রাহ্মণ ও উপনিষদ অংশেও বহু স্ত্রী দেবতার নাম পাওয়া যায়। পণ্ডিতদের মতে, দেবীসূক্তের বাক্ এবং রাত্রিসূক্তের রাত্রি–পরবর্তীকালে যথাক্রমে সরস্বতী ও কালীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।

ঋগ্‌বেদের পরিশিষ্টভুক্ত ‘শ্রীসূক্ত’-এর মধ্যে ঋগ্‌বেদের শেষের দিকের শক্তিভাবনার উল্লেখ পাওয়া যায়। পণ্ডিতদের মতে, ‘শ্রীসূক্ত’-এর শ্রী পরবর্তীকালে লক্ষ্মীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।

বৈদিক যুগের পর মহাভারত ও পুরাণে স্ত্রী-দেবতার আরাধনা এক উল্লেখযোগ্য আকার ধারণ করে। পাশাপাশি বিশাল তন্ত্রসাহিত্যের মধ্যেও শাক্ত আরাধনা প্রবলভাবে বিকশিত হয়। ‘তন্ত্রসাহিত্য’ বলতে বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত ধর্মীয় সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারাকে বোঝানো হলেও, ‘তন্ত্র’ বলতে সাধারণত শাক্ত ধর্মীয় সাহিত্যকেই বোঝায়। তবে শাক্ত তন্ত্রসাহিত্য বা তান্ত্রিক ধারার কাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

কেউ কেউ তন্ত্রকে বৈদিক যুগের সমসাময়িক, এমনকি তারও প্রাচীন বলে মতপ্রকাশ করেছেন। তবে তন্ত্রসাহিত্যের কাল সম্ভবত অতটা প্রাচীন নয় এবং বহু তন্ত্র-গ্রন্থই পরবর্তীকালে রচিত। তা সত্ত্বেও ধর্মীয় সাহিত্য হিসেবে তন্ত্র সুপ্রাচীন না হলেও ধর্মীয় পদ্ধতি হিসেবে তন্ত্র যে যথেষ্টই প্রাচীন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তন্ত্রসাহিত্যের সূচনা যখনই হোক না কেন, অন্তত দেড় হাজার বছর আগে হিন্দুদের ধর্মসাহিত্য ও ধর্মসাধনা প্রধানত বৈদিক ও তান্ত্রিক—এই দুই ধারায় বিভক্ত ছিল।

শুধু বৈদিক যুগেই নয়, প্রাক্-বৈদিক যুগেও মানুষ ঈশ্বরকে মাতৃরূপে উপাসনা করত। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষ থেকে আবিষ্কৃত সুপ্রাচীন (পৃথিবীর সভ্যতাগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম?) সিন্ধুসভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে প্রমাণিত হয় যে ওই দুই প্রাচীন নগরের অধিবাসীদের প্রধান উপাস্য ছিলেন স্ত্রী দেবতারা।

তান্ত্রিকপদ্ধতির বীজ কি সেখানেই নিহিত ছিল? কে জানে! তবে সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোতে যেসব স্ত্রী দেবতার মূর্তি পাওয়া গেছে, সেগুলোকে নিঃসন্দেহে পরবর্তীকালের শক্তিমূর্তিগুলোর আদিরূপ বলা যেতে পারে। নৃতত্ত্ববিদদের মতে, ওই মূর্তিগুলো প্রধানত শস্য, প্রাণশক্তি ও প্রজননশক্তির প্রতীকস্বরূপিনী মাতা বসুন্ধরা বা পৃথিবীর প্রতিমূর্তি।

শুধু ভারতের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার ইতিহাসই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বিচার-বিশ্লেষণ করলেও স্পষ্ট বোঝা যায়, ঈশ্বরকে মাতৃরূপে উপাসনা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা থেকেই উদ্ভূত।

‘স্বাভাবিক প্রবণতা’ কেন বলছি? পৃথিবীর আলোয় মানুষ প্রথম যাঁকে দেখে, তিনি মা। তাই বোধ হয় আমাদের কণ্ঠ-উৎসারিত প্রথম শব্দটিও ‘মা’। একমাত্র মায়ের সঙ্গেই মানুষের ‘নাড়ি’র সম্পর্ক। এই সম্পর্ক যেমন জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) অর্থে সত্য, তেমনি মানসিক (মেন্টাল), মনস্তাত্ত্বিক (সাইকোলজিক্যাল) এবং আধ্যাত্মিক (স্পিরিচুয়াল) অর্থেও সত্য। সব অর্থেই মানুষ মায়ের সঙ্গেই সর্বাপেক্ষা নিকট–সম্পর্কযুক্ত।

সে কারণেই জন্মলগ্ন থেকেই মানুষের চরিত্রে মায়ের প্রভাব—জ্ঞাতসারে অথবা অজ্ঞাতসারে, সবচেয়ে বেশি ক্রিয়াশীল থাকে। শিশুর সবচেয়ে বড় নির্ভরতা মা-ই, মা-ই তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত জন। যখন সে ভয় পায়, তখন মায়ের কোলেই আশ্রয় খোঁজে; যখন আনন্দ পায়, তখন সবার আগে মাকেই সেই আনন্দের ভাগীদার করতে চায়।

দুঃখ বা আনন্দে, ভয় কিংবা উদ্বেগে—মাকেই সে প্রথম খোঁজে। মায়ের সঙ্গে এই সম্পর্কের কারণেই দেখা যায়, মা যখন শিশুসন্তানকে দুষ্টুমির জন্য মারেন, তখন এক হাতে চোখের জল মুছতে মুছতে অন্য হাতে শিশুটি মাকেই জড়িয়ে ধরে। কারণ, জন্মলগ্ন থেকেই তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে—যে হাত তাকে আঘাত করেছে, সেই হাতই পরক্ষণে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে; আর যে চোখ ও মুখ এতক্ষণ ক্রোধে জ্বলছিল, সেই চোখই কয়েক মুহূর্ত পরে জলে ভাসবে এবং সেই মুখই তার অশ্রুলিপ্ত মুখকে চুম্বনে ভরিয়ে দেবে।

বস্তুত, মানুষ যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে বা শ্রদ্ধা করে, অথবা যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা অর্পণ করতে চায়, তার মধ্যে সম্ভবত সে অজ্ঞাতসারে নিজের মাকেই দেখতে চায়। এটিই মানুষের সহজাত মনস্তত্ত্ব। সভ্য মানুষ যখন ইতিহাসের উষালগ্নে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয়েছিল, তখন তার ভাবনায় বোধ হয় এই মনস্তত্ত্বই ক্রিয়াশীল ছিল।

যাহোক, ঈশ্বরের মাতৃরূপের এই ভাবনা ভারতবর্ষে প্রাক্-বৈদিক, বৈদিক, তান্ত্রিক ও পৌরাণিক—এই চার প্রধান ধারায় অভিব্যক্ত হয়েছে। বৈদিক ভাবনা পরবর্তীকালে উপনিষদে ক্রমবিবর্তিত হয়ে যে রূপ লাভ করেছিল, তারই উত্তরোত্তর প্রকাশ দেখা গেছে রামায়ণ, মহাভারত এবং পুরাণ ও উপপুরাণগুলোতে। পাশাপাশি প্রাক্-বৈদিক যুগে দেবীভাবনার ধারণা একটি স্বতন্ত্র ধারায় বিকাশ লাভ করছিল।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আমরা যাকে ‘তন্ত্র’ বলে জানি, তার উৎস নিহিত আছে প্রাক্-বৈদিক যুগের দেবীভাবনায়। সুপ্রাচীনকাল থেকেই কিন্তু আরেকটি ধারা ছিল। সেটি হলো আদিবাসী, উপজাতি ও সমাজের নিম্নবর্ণের মধ্যে প্রচলিত লোকায়ত ধারা। পরবর্তীকালে প্রতিটি ধারাই একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, একের মধ্যে অন্যের চিন্তাভাবনা ও পদ্ধতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ভারতের সর্বত্রই এই সংমিশ্রণ ও পারস্পরিক প্রভাব কমবেশি ঘটেছে।

বৈদিক সাহিত্যে দেবীকে অদিতি, উষা, অম্বিকা, উমা, সরস্বতী, দুর্গা, সাবিত্রী, পৃথিবী প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হলেও ‘কালী’ ও ‘চণ্ডী’ নাম দুটি কোথাও পাওয়া যায় না। ‘কালী’ নামটি প্রথম পাওয়া যায় মুণ্ডক উপনিষদে, তবে সেখানে এটি কোনো স্ত্রী দেবতার নাম নয়; সেখানে ‘কালী’ অগ্নির সপ্ত জিহ্বার একটি নাম। স্ত্রী দেবতা হিসেবে ‘কালী’ নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। আর ‘চণ্ডী’র প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে পৌরাণিক দেবীরূপে সাহিত্যে। ‘চণ্ডী’ বা ‘চণ্ডিকা’ নামে তাঁকে সর্বাধিক অভিহিত হতে দেখা যায় মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত ‘দেবীমাহাত্ম্যে’, যা ‘চণ্ডী’ বা ‘দুর্গাসপ্তশতী’ নামে প্রসিদ্ধ।

‘কালী’ নামটিও সেখানে উল্লেখযোগ্যভাবে এসেছে। ক্রমে দুর্গা ও কালীকে সেখানে একই মহাদেবীর বিভিন্ন রূপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী কালে দুর্গা, কালী প্রভৃতি পরিচিত নামের পাশাপাশি অন্যান্য পুরাণ ও উপপুরাণে ‘চামুণ্ডা’, ‘উগ্রচণ্ডী’, ‘উগ্রচণ্ডিকা’ প্রভৃতি নাম আদ্যাশক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে থাকে। ধীরে ধীরে ‘চণ্ডী’ হয়েছেন ‘মঙ্গলচণ্ডী’—যিনি মানুষের সকল অশুভ ও অমঙ্গল নাশ করেন। তবে চণ্ডীর মঙ্গলচণ্ডী হয়ে ওঠা এক দিন বা এক যুগে হয়নি। এই বিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বৈদিক, প্রাক্-বৈদিক, তান্ত্রিক, পৌরাণিক ও লোকায়ত ঐতিহ্যের পারস্পরিক ক্রিয়া ও বিক্রিয়ার দীর্ঘ পর্ব।

এভাবে পৌরাণিক ধারা ও লোকায়ত ধারার মধ্য দিয়ে দেবী হয়ে উঠেছেন আমাদের পরিবারের অঙ্গ, আমাদের একান্ত কাছের মানুষ। দেবী ও মানবী ভাব মিশে আমাদের দেবীভাবনায় যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা। অবশেষে হিন্দুর শক্তিভাবনায় দুটি নাম প্রধান স্থান লাভ করেছে দুর্গা ও কালী। এই দুই মায়ের মধ্যেই হিন্দুর ধর্মভাবনায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের উপাসনা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আজ এই দুই দেবীর পূজাই ভারতবর্ষে, বিশেষত বঙ্গদেশে, হিন্দুদের সর্বাধিক জনপ্রিয় মাতৃপূজা।

স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ অধ্যক্ষ ও সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরবর ত ক ল যত র প র র জন য আম দ র তত ত ব কর ছ ল ত হয় ছ ভ বন য় হয় ছ ন উল ল খ প রথম সবচ য় র দশম

এছাড়াও পড়ুন:

তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল এলাকায় জমি বিরোধের জেরে দুইপক্ষের দ্বন্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে চাঁদাবাজি মামলার আসামি হয়েছেন মোল্লা ফারুক হাসান নামে এক সাংবাদিক।

তবে থানা পুলিশ অভিযোগের তদন্ত না করেই মামলাটি এজাহারভূক্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী। এ ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতিকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ

‘সিভিক ডিফেন্ডারস অব বাংলাদেশ’ ওয়েব পোর্টাল উদ্বোধন

ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক খোলা কাগজ পত্রিকা এবং সময়ের কন্ঠস্বর অনলাইন নিউজ পোর্টালের স্থানীয় প্রতিনিধি।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী মোল্লা ফারুক হাসান অভিযোগ করে বলেন, “গত কয়েকদিন আগে কটকস্থল বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন আরিফ ফিলিং স্টেশনের সামনে স্থানীয় হারুন-অর রশিদ বেপারী ও মো. হিরা মাঝি গংদের মধ্যে উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন থানা পুলিশ। এরপর সেখানে আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাই। পরবর্তীতে পুরো ঘটনা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।”

তিনি বলেন, “ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হারুন-অর রশিদ বেপারী তার প্রতিপক্ষ মো. হিরা মাঝিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে ওই অভিযোগের মধ্যে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারনে থানা পুলিশ ওই অভিযোগের কোনো তদন্ত না করেই আমাকে আসামি করে ফিলিং স্টেশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে এজাহারভূক্ত করেন।”

তিনি আরো বলেন, “যেখানে সাধারণত হুমকি-ধামকির বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে আগে তদন্ত প্রসঙ্গটি উত্থাপণ করে থানা পুলিশ। সেখানে ঘটনার সময় থানা পুলিশ ওই ফিলিং স্টেশনে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও মনগড়াভাবে হামলা, ভাঙচুর ও চাঁদা দাবির লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত ছাড়া তড়িঘড়ি করে আমাকে জড়িয়ে মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ রহস্যজনক।” মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে তিনি (সাংবাদিক) সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে মামলার বাদি হারুন-অর রশিদ বেপারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

সাংবাদিককে আসামি করার বিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “একটা মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, “পেট্রোল পাম্প নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ সংবাদকর্মীদের দিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এবং গৌরনদী থানার ওসির বিরুদ্ধে মিথ্যা মনগড়া সংবাদ প্রকাশিত করিয়েছে। একটি পক্ষ ওই ঘটনা নিয়ে প্রথমে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটির এজাহার দায়ের করা হয়।”

তিনি বলেন, “তদন্ত করার আগেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার কারণে মামলাটি এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে এক সাংবাদিক রয়েছে বলে জানা গেছে। সাংবাদিক মোল্লা ফারুক যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকে, তাহলে তার কিছুই হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “ওই সাংবাদিক (মোল্লা ফারুক) আমার কাছে এসেছিল। তাকে আমি বলেছি, আপনি যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকেন, তাহলে আপনাকে পুলিশ খোঁজবেও না, আপনি নিশ্চিত থাকেন।”

অপরদিকে, তদন্ত ছাড়া গৌরনদী প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক মোল্লা ফারুক হাসানকে মামলায় আসামি করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর ও বরিশাল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশ, সাধারণ সম্পাদক শাহিন হাসানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। তারা অনতিবিলম্বে ওই সাংবাদিককে মামলা থেকে অব্যাহতি ও দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।

এছাড়াও পৃথক বিবৃতিতে একই দাবি করেছেন বাংলাদেশ গ্রামীণ সাংবাদিক সংগঠন, গৌরনদী প্রেসক্লাব, কালকিনি সাংবাদিক ফোরাম, আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাব ও রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দরা।

ঢাকা/পলাশ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনসিপিকে প্রতীক বাছাইয়ে সময় বেঁধে দিল ইসি
  • প্লাস্টার খোলার পর গুরুত্ব ফিজিওথেরাপির
  • স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা-পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে সন্তান না নেওয়া ভালো
  • বিয়ের আগেই দুই সন্তানের মা, আলোচিত এই দক্ষিণি অভিনেত্রীকে কতটা চেনেন
  • ঢাকায় সর্বোচ্চ ২০৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড
  • গাজীপুরে নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানায় অভিযান
  • বিশেষ বিবেচনায় চবির হলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমালোচনা
  • তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিককে মামলায় জড়ালো পুলিশ
  • গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে চান ট্রাম্প