চালু থাকছে লাইফগার্ড সেবা, পর্যটকদের স্বস্তি
Published: 30th, September 2025 GMT
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড সেবা আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যটকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আপাতত লাইফগার্ড সেবা চালু রাখা হবে। এতে পর্যটকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। আজ মঙ্গলবার থেকে লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হওয়ার কথা ছিল।
২০১২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সংস্থা রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউটের (আরএনএলআই) অর্থায়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ড কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। এই সময়ে অন্তত ৮১৭ জন পর্যটককে তাঁরা সাগর থেকে জীবিত উদ্ধার করেছেন। এ ছাড়া স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া অন্তত ৬৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন লাইফগার্ড সদস্যরা।
তহবিল সংকট ও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ থেকে কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও জেলা প্রশাসকের অনুরোধে তা তিন মাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সি-সেফ কর্তৃপক্ষ। এ সময় দুর্গাপূজা, প্রতিমা বিসর্জন উৎসব এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে।
সি-সেফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তহবিল সংকটে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সেবা চালু থাকবে।’ তিনি জানান, বর্তমানে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ছোট-বড় অন্তত ১০-১২টি গুপ্তখাল রয়েছে। এর মধ্যে সিগাল ও লাবণী পয়েন্টে বেশি ঝুঁকি। গত দুই দিনে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
নবাগত জেলা প্রশাসক মো.
সি-সেফের হিসাবে, প্রতিষ্ঠানে ২৭ জন লাইফগার্ডসহ মোট ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন–ভাতা বাবদ মাসে লাগে ১৪ লাখ টাকা, বছরে দেড় কোটি টাকা।
হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, হোটেলমালিকদের ওপর লাইফগার্ড সেবার দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা নেই, আর মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকা বহন করাও সম্ভব নয়। এটি সরকারের উদ্যোগেই পরিচালনা করা উচিত।
আজ দুপুরে সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা যায়, অন্তত ৪০ হাজার মানুষ এক কিলোমিটার সৈকতজুড়ে ভিড় করেছেন। কলাতলী থেকে লাবণী পর্যন্ত চার-পাঁচ কিলোমিটারে আরও ৪০-৫০ হাজার পর্যটক ছিলেন। সি-সেফের অন্তত ১৫ জন লাইফগার্ড নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন।
ঢাকার উত্তরার ব্যবসায়ী জিয়াবুল হাসান বলেন, ‘লাইফগার্ড না থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। শুনলাম সেবা চালু থাকছে, এতে ভরসা পেলাম। কক্সবাজারে গোসল বন্ধ হলে কেউ আর এখানে আসবে না।’
হোটেলমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে ঘুরতে আসেন। হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ১৭টি খাতে ব্যবসা হয় হাজার কোটি টাকার। তবে এত দিনেও সৈকতে সরকারিভাবে একজন ডুবুরি কিংবা জরুরি চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ইফগ র ড স ব পর যটক উদ ধ র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সৌন্দর্যের মায়াবি হাতছানিতে পর্যটকদের কাছে ডাকছে শ্রীমঙ্গল
রোদ ঝলমলে শরতের আকাশ। মাঝে নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। তার নিচে বিছিয়ে দেওয়া কার্পেটের মতো সবুজ চা বাগান। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রকৃতির এমন মায়াবী রূপ মন কেড়েছে পর্যটকদের।
“মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের গল্প অনেক শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখিনি। এখানে এসে মন ভরে গেছে। যে দিকে তাকাই সে দিকেই সবুজ আর সবুজ। এই সৌন্দর্য স্বচক্ষে দেখে মাতোয়ারা হয়ে যাই।” এমনটা বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আব্দুল মজিদ মোল্লা।
ঢাঙ্গাইল থেকে আসা পর্যটক ফারজানা বলেন, “প্রকৃতির অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে এই মৌলভীবাজারে।”
শরতের রোদেলা দুপুরে জেলার ঐতিহ্যবাহী চা কন্যা ভাস্কর্যের কাছে তার সাথে কথা হয়। মৌলভীবাজারের প্রবেশ পথেই পর্যটকদের বিমহিত করে এই দৃশ্য।
দুর্গাপূজার টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে চায়ের রাজ্যখ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় ভিড় জমেছে এখানকার হোটেল-রির্সোট গুলোতে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেশকিছু দর্শণীয় স্থান ঘুরে দেখা যায় দল বেঁধে পর্যটকরা সবুজ প্রকৃতির সাথে মিশে ঘুরাঘুরি করছেন, ছবি তুলছেন। এসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কয়েকজন বিদেশি পর্যটককেরও দেখা পাওয়া গেল।
প্রতি বছর শেষ শরতে এখানে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। একদিকে পর্যটন মৌসুমের শুরু, অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে সরকারি বাড়তি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সারা দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে এসেছেন এই চায়ের রাজ্যে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। ৯০ শতাংশ পর্যটকই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত্রীযাপন করে থাকেন। বাকি ১০ শতাংশ পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করেন।
তারা এখানে অবস্থান করে পুরো জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এবং এ জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগকরেন।
শ্রীমঙ্গল রামনগর রিসোর্টে কর্মরত হিরনময় সিং বলেন, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে এরইমধ্যে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ ৯০% থেকে ৯৫% রিজার্ভ হয়ে গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই হোটেল রিসোর্ট-গুলোতে পর্যটকরা অবস্থান করছেন। যে কোন ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে। আকর্ষণীয় সবুজ চা বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান শ্রীমঙ্গল।”
পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, “ভালো গাইডের অভাবে এখানে পর্যটকরা এসে এলোমেলো হয়ে যান। গাইড লাইন দিয়ে সেবা দিলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারেন। কম সময়ে অনেক স্পট দেখতে পারেন।”
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টার ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, দুদিন ধরে সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত শতাধিক পর্যটক টিকিট নিয়ে লাউয়াছড়া বনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। দেশিয় পর্যটকের পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবাসংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, “মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যে কোনো ছুটি কিংবা উৎসবে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। মৌলভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাত যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল হোটেল-রিসোর্টে বুকিং রয়েছে ৯০% পার্সেন্ট।”
শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে ভাড়া বেশি হওয়ায় পর্যটকরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “হোটেলের মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করেন হোটেল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। আবার কিছু ব্যবসায়ী আছেন মান অনুযায়ী সেবা দেন না বরং বেশি টাকা নিয়ে থাকেন। আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি যেন পর্যটকরা প্রতারিত না হয়।”
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ২০০৮ সাল মৌলভীবাজার পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আবাসন গড়ে ওঠেনি। রাস্তা ঘাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এ পর্যন্ত যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার বেশিরভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় উন্নয়নের গল্প শোনান। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিয়োজিত সিনিয়রট্যুর গাইড সৈয়দ শিপন আলী বলেন, “আমরা যথাযথভাবে পর্যটকদের সেবা দিতে চেষ্টা করি। গতকয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। তবে বিদেশি পর্যটক কম আসছেন। দুই-তিন জন বিদেশি পর্যটকের দেখা মিলেছে গত শুক্রবারে।’’
পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, “টানা ছুটিতে যথেষ্ট পরিমাণ পর্যটক আসছেন। এছাড়া শীতের সময় এমনিতেই পর্যটক আসবেন। বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ পর্যটক আসেন, সে পরিমাণ থাকার হোটেল রিসোর্ট এখানে নেই। বেসরকারিভাবে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় সরকারিভাবে তেমন কিছুই গড়ে ওঠেনি।”
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, “সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা বা সহজে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং আমরা আরো সুন্দরভাবে সাজাতে পারব।”
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, “মৌলভীবাজার অপূর্ব সৌন্দর্যের ক্ষেত্র আমরা পর্যটকদের সুবিদা দিতে প্রস্তুত। টুরিস্টদের জন্য চমৎকার একটা পর্যটন স্পট আমরা সবগুলো ক্ষেত্রে উপহার দিতে পারি।”
ঢাকা/আজিজ/এস