রাজনৈতিক সহিংসতায় সেপ্টেম্বরে ৯ জন নিহত, গণপিটুনিতে ২৪
Published: 30th, September 2025 GMT
সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে ৩৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২৬৮ জন। এ সময় গণপিটুনিতে ২৪ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।
আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশকেন্দ্রিক সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকে কেন্দ্র করে এসব রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
এইচআরএসএসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা আগস্টের তুলনায় কিছুটা কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। আগস্ট মাসে ৬৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয়; আহত হন ৫১৪ জন। সেখানে সেপ্টেম্বরে ৩৭টি সহিংসতায় ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ২৪টি সহিংসতায় ৭ জন মারা গেছেন। আর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সাতটি সংঘর্ষে একজন এবং বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন।
এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় ৩০টির বেশি বাড়িঘর, যানবাহন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক কার্যালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে দেশে সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল হতাশাজনক। মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) সহিংসতা, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, শ্রমিকদের ওপর হামলা, পাহাড়ে সহিংসতা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর, মাজারে হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আটটি হামলায় ২০টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ঘিরে সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এ ঘটনায় সেনা, পুলিশ সদস্যসহ ১৬ জন আহত হন।
সেপ্টেম্বরে ৩২টি ঘটনায় ৪২ জন সাংবাদিক হামলা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দুই সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এতে বলা হয়, এ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে চারজন এবং গুলিতে আরও চারজন নিহত হয়েছেন। শ্রমিক আন্দোলনে সেনা ও পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। কারাগারে মারা গেছেন পাঁচজন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মামলায় সেপ্টেম্বরে অন্তত ৮০১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী। যৌথ বাহিনীর অভিযানে আরও ১১ হাজার ৬০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে কমপক্ষে ১৫৯ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৫ জন ধর্ষণ ও ১০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে দুজন আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জনকে। ১৩২ জন বাংলাভাষীকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। এ সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বঙ্গোপসাগর থেকে ৪০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ ক র হয় ছ স প ট ম বর ম নব ধ ক র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫