রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা যায়। রোহিঙ্গা সমস্যাকে মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কারের ওপর ফেলে রাখা উচিত হবে না।

আজ মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিয়ে আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ওই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের সভাপতি জার্মান কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ আনালিনা বায়েরবক।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের অধিবেশনকক্ষে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার ওই আলোচনায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী এবং রোহিঙ্গাদের কয়েকজন প্রতিনিধি বক্তৃতা করেন।

জাতিসংঘ আয়োজিত সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করা, সংকটের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধরে রাখা, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা, মানবাধিকার ইস্যুসহ সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা করা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আট বছর আগে মিয়ানমারে গণহত্যা শুরু হলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সংকট সমাধানে যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, আর আন্তর্জাতিক সহায়তাও মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকারের পাশাপাশি আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎস মিয়ানমার আর এর সমাধানও সেখানে নিহিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করে এবং দ্রুত তাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে। এটিই সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান। মিয়ানমারের বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কারের কাছে জিম্মি করে এ প্রক্রিয়াকে ফেলে রাখা চলবে না।

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমে যাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কমছে। তাই একমাত্র শান্তিপূর্ণ ও টেকসই পথ হলো প্রত্যাবাসন শুরু করা। দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক সুরক্ষার তুলনায় প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়ায় অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন হবে। রোহিঙ্গারা নিজেরাই বারবার দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। জরুরি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যারা সাম্প্রতিক সংঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে, তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা উচিত।

বাংলাদেশ এই সংকটের শিকার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের বিশাল আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত চাপ বহন করতে হচ্ছে। রাখাইন হয়ে মাদকের প্রবাহসহ অপরাধমূলক তৎপরতা আমাদের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে। দারিদ্র্য, বেকারত্বসহ আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয়।’

সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে সাত দফার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, একটি টেকসই সমাধানের জন্য আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো প্রস্তাব করছি:

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও অন্য সংখ্যালঘুদের নিয়ে আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে দর্শক সারিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব র ওপর ইউন স সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার

দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।

পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ