১৮৯৫ সালের দিককার কথা। মঙ্গল রাম সরকার নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি করেন শ্রীশ্রী মঙ্গলভবন পূজামণ্ডপ। ১৩০ বছর ধরে সেখানে আয়োজিত হয়ে আসছে শারদীয় দুর্গোৎসব। আয়োজকদের দাবি, মাঝখানে শুধু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আয়োজনটি বন্ধ ছিল।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহরের খালভাঙ্গা এলাকার পালপাড়ায় এই পূজামণ্ডপ অবস্থিত। জেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন এই পূজামণ্ডপকে ঘিরে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ একটু বেশিই। প্রতিবছরই পূজামণ্ডপটিতে ঐতিহ্য মেনে দেশীয় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।

আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯৫ সালে শুরুতে স্বল্প পরিসরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হলেও কালক্রমে এটি আরও বৃহৎ আকারে অনুষ্ঠিত হতে থাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুধু একবার এর আয়োজন বন্ধ ছিল। এর বাইরে প্রতিবছরই সেখানে সাড়ম্বরে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়ে আসছে।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পূজামণ্ডপটিতে বিভিন্ন বয়সী ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় বিকেলের পর থেকে। গতকাল সোমবার দুপুরে সেখানে কথা হয় সুবর্ণ পাল (২৮) নামের এক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পূজায় এক দিনের জন্য হলেও আমরা এই মণ্ডপে আসি। এখানে প্রসাদ না খেলে পূজা অসম্পূর্ণ মনে হয়। এখানে বাঙালি ঐতিহ্যের ছোঁয়া আছে।’ একই সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিমা দর্শনের জন্য আসেন রনি বর্ধন (২২)। তিনি বলেন, ‘নবমী পূজার বিকেলে এখানে প্রসাদ না খেলে পূজা অসম্পূর্ণ মনে হয়।’

গৃহিণী বিউটি রানী সাহা (৫০) জানান, নালিতাবাড়ীতে তাঁর বিয়ের ৩০ বছর হয়েছে। প্রতিবছরই পরিবারের সঙ্গে এই মণ্ডপটিতে আসেন। যত জায়গায়ই যান না কেন, এখানে না এলে পূজায় ঘোরাঘুরি পরিপূর্ণ হয় না। এই পূজা দেখতে আসা নিয়ে পরিবারের সবারই বেশ আগ্রহ থাকে।

বাঙালি ঐতিহ্য ধরে রাখতে পূজামণ্ডপটিতে প্রতিবছরই দুর্গাপূজার সময় পালাগান, যাত্রা, রাম মঙ্গলসহ নানান আয়োজন করা হতো বলে জানান আয়োজক পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সদস্য শুভ্র প্রকাশ পাল (২৮)। তিনি বলেন, ‘তবে কালের বিবর্তনে অনুষ্ঠানে পরিবর্তন এলেও আমরা নতুন প্রজন্ম ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।’

পূজামণ্ডপটির তত্ত্বাবধায়ক বিশ্বনাথ পালের দাবি, কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন থেকে ‘উদ্বোধন’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সেই পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, সিলেটের পাঁচগাঁওয়ে একটি পূজামণ্ডপ রয়েছে, যা প্রায় ১৭৮ বছরের পুরোনো। আর দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন পূজামণ্ডপ হচ্ছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের খালভাঙ্গা এলাকার মঙ্গলভবন পূজামণ্ডপ।

১৩০ বছরের ঐতিহ্য রক্ষার ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে সফলভাবে দুর্গাপূজা আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মঙ্গলভবন পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার

দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।

পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ