Prothomalo:
2025-10-02@23:49:16 GMT

পূজায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট

Published: 1st, October 2025 GMT

‘দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্তোঃ/স্বস্থৈঃ স্মৃতা মতিমতীব শুভাং দদাসি/ দারিদ্র্যদুঃখভয়হারিণি কা ত্বদন্যা/ সর্বোপকারকরণায় সদার্দ্রচিত্তা।’ অর্থ হলো মা দুর্গে, সংকটকালে আপনাকে স্মরণ করলে আপনি সবার ভয় দূর করেন। বিবেকিগণ আপনাকে চিন্তা করলে আপনি তাঁদের শুভবুদ্ধি প্রদান করেন। দুঃখ, দারিদ্র্য ও ভয়হারিণী হে দেবী। আপনি ছাড়া অন্য আর কে আছে যে সবার মঙ্গলের জন্য সদাই দয়ার্দ্র থাকে?

সংসার আশ্রমে অনিশ্চয়তা নিত্যসঙ্গী। দারিদ্র্য, অসুস্থতা, দুঃখ ইত্যাদি বহু নেতিবাচক শক্তির সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধ করতে হয় মানুষকে। আবার সম্মিলিত নেতিবাচক শক্তির প্রভাবে কখনো কখনো মানবজীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। জীবনযাত্রার এই নিত্যযুদ্ধে মানুষ শক্তি ও সামর্থ্যের আরাধনা করে। বিপদ থেকে অব্যাহতি পেতে মানুষের যে একাগ্রতা ও সামাজিক ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টা, তা এই পূজা অনুষ্ঠানে দৃঢ়তা লাভ করে।

শব্দকল্পদ্রুম-এ আছে, ‘দুর্গো দৈত্যে মহাবিঘ্নে ভববন্ধে চ কুকর্মণি/ শোকে দুঃখে চ নরকে যমদণ্ডে চ জন্মনি/ মহাভয়ে চাতিরোগে চাপ্যাশব্দো হন্তৃবাচকঃ/ এতান্ হন্ত্যেব যা দেবী সা দুর্গা পরিকীর্তিতা।’ অর্থ হলো দুর্গা শব্দের বাচ্য দুর্গনামক দৈত্য মহাবিঘ্ন, ভববন্ধন, কুকর্ম, শোক, দুঃখ, নরক, যমদণ্ড, জন্ম, মহাভয় এবং অতিরোগ। আ শব্দ হন্তুবাচক। এসব যে দেবী হনন করেন, তিনিই দুর্গা নামে প্রতিভাত।

দুর্গাপূজা জনসম্পৃক্ত পূজা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সার্থক হয় পূজা অনুষ্ঠান। এটি শুধু সামাজিক ঐক্যের ধাপ নির্মাণ করে না, এই ধাপ নির্মাণে প্রায়োগিক মেধা চর্চাকেও কাজে লাগায়।

ছাত্র ও যুবকেরা, যাঁরা তাঁদের অধীত বিষয়ের হাতে-কলমে প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক, তাঁরা নিঃশঙ্ক চিত্তে দুর্গাপূজার ‘শিক্ষানবিশি’ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে নিজেদের মেধা ও বুদ্ধি খাটিয়ে জুতসই কৌশল রপ্ত করে নিতে পারেন।

ব্যবস্থাপনার নানা রকম পদ্ধতি হরেক অবয়বে এই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বর্তমান সময়ে মানুষ বিশেষত ছাত্রছাত্রীরা আগের মতো মুক্তাঙ্গনে ঘোরাঘুরির পরিবর্তে বাসাবাড়িতে বা মোবাইল ফোনে আবদ্ধ থাকতে অভ্যস্ত। ফলে তাদের অনেক সৃজনশীলতাই সুযোগের অভাবে যথাযথভাবে বিকশিত হয় না। দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান সেই সুযোগের দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

জটিল ও ভারাক্রান্ত জীবনের বোঝাও এই অনুষ্ঠান অনেকাংশে হালকা করে দিতে সক্ষম।

দৃষ্টৈব কিং ন ভবতি প্রকরোতি ভস্ম/ সর্বাসুরানরিষু যৎ প্রহিণোষি শস্ত্রম/ লোকান্ প্রয়ান্তি রিপবো হোऽপিহি শস্ত্রপূতাঃ/ ইত্ত্বং মতির্ভবতি তেষ্বপি তে’তিসাধ্বী।’ (শ্রীশ্রী চণ্ডী: ৪ /১৯) অর্থ: ‘হে দেবী, তোমার অস্ত্র যখন অসুরদের আঘাত করে, তখন তারা সঙ্গে সঙ্গে ভস্মীভূত হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, যখন তারা মৃত্যুবরণ করে, তখনো অস্ত্রস্পর্শে পবিত্র হয়ে লোকান্তরে গমন করে। এমনকি শত্রুদের প্রতিও তোমার মন এইভাবে করুণাময় ও মহত্ত্বপূর্ণ।’

শ্রীশ্রী চণ্ডীর এই ভাষা বিশ্বজনীন ভাষা হিসেবে আদৃত। অপরাধীকে হত্যা করাই অপরাধ নিবৃতির একমাত্র পথ নয়। বরং অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে তাকে অপরাধ পরিত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে উত্তম জীবনযাপনের আকর্ষণে অনুগ্রহ করাই দেবীর ঔদার্য।

এই ঔদার্য মানুষের মাঝে সঞ্চারিত হলে একটি আধুনিক সহনশীল সমাজ গঠন বেগবান হবে। এর আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করতে পারেন তরুণ ও যুবারা। তরুণ ও যুবাদের কাছে এই বার্তার অভিগম্যতা যাতে সহজ হয়, তার জন্য সচেষ্ট হতে হবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের পূজা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের। পূজা অনুষ্ঠানের কমিটিগুলোতে তরুণ ও যুবদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি ও তাঁদের মতপ্রকাশের পর তা যৌক্তিক বিবেচনাভুক্ত করা হলে তরুণ ও যুবারা উৎসাহিত হবেন, সন্দেহ নেই।

তরুণ ও যুবারা নতুন কিছু করতে আগ্রহী। কিন্তু তাঁদের আগ্রহ বাস্তবসম্মত নয়—এমন অনুমিত হলেও আলোচনাভুক্ত করে তা তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। বয়স ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি বিবেচনায় তরুণ ও যুবদের তাঁদের উপযোগী কাজ সম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হলে তা বাস্তবায়ন সহজ হবে।

বিশ্বজুড়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এখন স্বীকৃত পেশা। আগে যে পেশা সাধারণ কর্মজীবী মানুষের বিচ্ছিন্ন অংশগ্রহণে পরিচালিত হতো, সেই পেশা এখন সম্মিলিত আয়োজনের ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে আয়োজকেরা তাঁদের প্রত্যাশা জানান। ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিতরা সঠিক পরিকল্পনা করে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। নানামুখী অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ ও কৌশলের সমন্বয়ে একটি সার্থক অনুষ্ঠানের আয়োজন সম্ভব হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ সব ধরনের আয়োজন ও কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুর্গাপূজার বড় পরিসরের অনুষ্ঠান আয়োজনে তরুণ ও যুবারা নতুন দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হতে পারেন।

ধর্মীয় প্রভাব ও শুদ্ধ মনের সংশ্লেষ মানুষকে সৎ পথ অনুসরণ করতে সহায়তা করে থাকে। দুর্গাপূজায় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার এই শ্লোক প্রণিধানযোগ্য হয়ে ওঠে: ‘পিতাহমস্য জগতঃ মাতা ধাতা পিতামহঃ/বেদ্যং পবিত্রম্ অংকার ঋক্ সাম যজুরেব চ।’ (অধ্যায় ৯.

শ্লোক ১৭) অর্থ: ‘আমি এই জগতের পিতা, মাতা, বিধাতা, পিতামহ; যা কিছু জ্ঞেয় এবং পবিত্র বস্তু তা আমিই। তামি, ব্রহ্মবাচক ওঙ্কার, আমিই ঋক্, সাম ও যজুর্বেদস্বরূপ।’

যিনি শক্তির আধার। গণমানুষের আশ্রয়স্থল তিনি। বিপদ, ভয়, কষ্টে তাঁর আশ্রয় লাভের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি রাখা অত্যাবশ্যক। দুর্গাপূজায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেই প্রস্তুতির পাঠ শুরু করা যায়। আর এই প্রস্তুতিকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তরুণ ও যুবারা নিজেদের দক্ষতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারেন, যা নৈতিক শিক্ষার সঙ্গে প্রায়োগিক শিক্ষার সার্থক মেলবন্ধন ঘটাতে পারে।

প্রণব চক্রবর্তী অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও উপদেষ্টা পুরোহিত, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পূজামণ্ডপ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তর ণ ও য ব র অন ষ ঠ ন র র জন য অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কয়েকটি অপরাধপ্রবণ এলাকায় বুধবার দিনভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, দুটি ধারালো চাকু, দুটি লোহার রড, একটি সাইকেল ও ৩০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিত মামলা, মাদক মামলা, পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন হীরা (১৯), রফিক (২১), আবদুর রহমান (৩৯), নাবিদ হাসান ওরফে চয়ন (২৬), খোকন (৩১), মনসুর (৩৫), জুয়েল (৩২), সানজু (২২), মিলন (৪২), শাওন (৩৬), নোয়াজ শরীফ (২৮), সেলিম (৩৪), আসাদুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), আনোয়ার হোসেন (৩৬), সজল (৩০), বরকত গাজী (২৮), জুয়েল (৩৮), আরমান (৩০), বাদল (৩৮), কোরবান (২৮), নয়ন (২৭), মাসরুফ (২৩), আল আমিন (২৭), রাকিব (১৮), মিলন (২৫), ওয়াজিদ (৩৬), এরশাদ (২৫), ছালাম ওরফে সামাদ (৩৭) ও দিলসার (৩০)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ