পরিবেশবান্ধব হোগলাপাতার পাটি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো পূজামণ্ডপ। মাঝে বাঁশ আর বেত দিয়ে বানানো হয়েছে বিভিন্ন সাজ। মণ্ডপের বিভিন্ন স্থানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মাটির টেরাকোটার শিল্পকর্ম, যা সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়েছে। মণ্ডপে আশা দর্শনার্থীদের কেউ নান্দনিক সৌন্দর্যের ছবি তুলছেন, কেউ কেউ ব্যতিক্রমী এ মণ্ডপের ভিডিও চিত্র ধারণ করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার মহাষ্টমীর রাতে কুমিল্লা নগরের দিগম্বরীতলায় শ্রীশ্রী গুপ্ত জগন্নাথমন্দিরে প্রবেশ করতেই এমন নান্দনিক সাজ দেখা গেল। ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শারদীয় দুর্গোৎসব করা হয়। এবারের দুর্গাপূজায় মণ্ডপের নান্দনিক কাজ দেখে সবাই মুগ্ধ হচ্ছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী ও দর্শনার্থীরা বলছেন, প্রাকৃতিক কাঁচামালের ব্যবহার যেমন সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, তেমনি পরিবেশের জন্যও তৈরি করেছে ইতিবাচক এক দৃষ্টান্ত।

কুমিল্লা নগরে এবার ৬৮টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নান্দনিক সাজের কারণে জগন্নাথমন্দিরের দুর্গাপূজা ব্যতিক্রমী এক আবহ তৈরি করেছে। মণ্ডপটির পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব মণ্ডপ তৈরির ইচ্ছা থেকেই এবার পুরো মণ্ডপকে ভিন্নরূপে সাজানো হয়েছে। মণ্ডপ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে গ্রামীণ জীবনের পরিচিত বেশ কিছু উপাদান, যার বেশির ভাগই হোগলাপাতার পাটি। এ ছাড়া বাঁশ, বেত ও মাটির টেরাকোটার শিল্পকর্ম দৃষ্টিনন্দন করেছে মণ্ডপটিকে।

হ্যাপি কর্মকার নামের এক দর্শনার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারের পূজায় কুমিল্লার অনেক মণ্ডপে ঘুরেছি, অনেক আনন্দ করেছি। তবে দিগম্বরীতলার জগন্নাথ মন্দিরে এসে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। হোগলাপাতা দিয়ে নান্দনিকতার যে সাজে মণ্ডপটিকে সাজানো হয়েছে, তা সত্যিই অনন্য। পুরো মণ্ডপে হোগলাপাতাসহ বাঁশ-বেতের শিল্পকর্ম। আমি আবার আসব এই মণ্ডপে।’

বাঁশ আর বেত দিয়ে বানানো হয়েছে বিভিন্ন সাজ। মণ্ডপের বিভিন্ন স্থানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মাটির টেরাকোটার শিল্পকর্ম, যা সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়েছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র শ ল পকর ম হ গল প ত স ন দর য পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ