ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় ধ্বংসস্তূপ ও মৃত্যুপুরীতে রূপ নেওয়া অবরুদ্ধ গাজার পথে রয়েছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী ড. শহিদুল আলম।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইতালি থেকে রওনা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার’ বৃহত্তম জাহাজ ‘কনসায়েন্স’ এর অভিযাত্রী হয়েছেন শহিদুল আলম। তার পরনে জুলাই শহীদ আবু সাঈদের ছবি খচিত পাঞ্জাবি ও হাতে রয়েছে বাংলাদেশের পতাকা।

আরো পড়ুন:

ড.

ইউনূসকে অসুর রূপে উপস্থাপন নিন্দনীয়: উপদেষ্টা 

ইসলামাবাদে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত বাংলাদেশ হাইকমিশন

বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে শহিদুল আলম বলেন, “আজ আমার বড় ভাইয়ের জন্মদিন। সে একজন বিদ্রোহী ছিলেন, যিনি সমাজের প্রত্যাশা পূরণ না পারায় আত্মত্যাগ করেছিলেন। তার মৃত্যু আমার জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। আমি আমার বুকে আবু সাঈদকে পরিধান করেছি, যিনি সশস্ত্র পুলিশের সামনে তার বুক উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই তাকে হত্যা করা হয়, কিন্তু এটি শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।”

শহিদুল আলম আরো বলেন, “ইতিহাসে যারা স্থিতাবস্থাকে (স্ট্যাটাস কো) চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, তারাই সবকিছু বদলে দিয়েছেন। আজ ফ্লোটিলা ‘কনসায়েন্সে’ থাকা ব্যক্তিরা, ঢেউয়ের মধ্যে অগ্রভাগে থাকা নৌকার অন্যরা এবং বিশেষ করে যারা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের জন্য গাজায় তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন, তারাই ইসরায়েল এবং তার মিত্রদের গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।”

গাজার পথে শহিদুল। ছবি : শহিদুল আলমের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

“কিন্তু আমরা একা নই। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাদের সম্মিলিত ক্ষোভের প্রতিনিধিত্ব করি। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য আমরা যা কিছু করতে পারি, তা করব। ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই।”

‘এখনো বিপজ্জনক কিছু ঘটেনি’
গাজা থেকে আর মাত্র ১০০ মাইল দূরে আছে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা'। এবারের যাত্রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীদের এ নৌবহরটি এখনো বড় ধরনের কোনো আক্রমণ বা বাধার সম্মুখীন হয়নি। ইসরায়েলি হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

এই বহরে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, “আমার ‘ড্রোন ওয়াচ' দেখাচ্ছে- আরো এক ঘণ্টা যেতে হবে, যেখানে আমরা সাধারণত সম্ভাব্য আক্রমণের প্রতি নজর রাখি। আমার ওয়াচে এর আগে একটি তুর্কি জাহাজ দেখা গেছে, তবে এখন পর্যন্ত বিপজ্জনক কিছু ঘটেনি।”

শহিদুল আলমের ফেসবুক পোস্ট

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এর তথ্য বলছে, ৪০টিরও বেশি নৌকা ও জাহাজ নিয়ে গঠিত এই ফ্লোটিলায় প্রায় ৫০০ জন নাগরিক রয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ।

ঢাকা/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির

ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম পর্বত ‘আমা দাবলাম’ জয় করছেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির (২৭)। গত ৪ নভেম্বর নেপাল সময় দুপর ১টার দিকে ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার এই পর্বতের চূড়া স্পর্শ করেন তিনি। 

পর্বতারোহণ বিষয়ক অর্গানাইজেশন রোপ ফোরের পৃষ্ঠপোষকতা ও তত্ত্বাবধানে এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। তার এই অভিযানে সঙ্গী হিসাবে ছিলেন রোপ ফোরের আরেকজন তরুণ পর্বতারোহী আবরারুল আমিন অর্ণব।

আরো পড়ুন:

রঙ হারাচ্ছে অদম্য মেধাবীর ভবিষ্যতের স্বপ্ন

উপজেলায় এইচএসসিতে একমাত্র জিপিএ-৫ পেলেন অনুরাগ

আমা দাবলাম খাড়া বরফ দেয়াল, গভীর ক্রেভাস, ঝুলন্ত বরফ খণ্ড এবং কঠিন আবহাওয়ার জন্য পৃথিবীর অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পর্বত হিসেবে পরিচিত। তৌকিরের এই অভিযানটি ছিল বাংলাদেশি পর্বতারোহণ ইতিহাসে এক গৌরবময় সংযোজন।

চূড়ায় পৌঁছার প্রতিক্রিয়ায় তৌকির বলেন, “আমা দাবলাম আমার কাছে শুধু একটা পর্বত নয়, এটা ছিল নিজের সীমা পরীক্ষা করার যাত্রা। পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে যখন লাল-সবুজ পতাকাটা তুলে ধরলাম, মনে হলো এটি শুধু আমার সফলতা নয়, এটি বাংলাদেশের সব তরুণের স্বপ্নের স্পন্দন।”

তিনি বলেন, “আমার এই অভিযানটা ছিল পৃথিবীর সব বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য, যাদের জীবনটা কেটে যায় অন্যের ওপর ডিপেন্ড (নির্ভর) করে এবং চার দেয়ালের আলোতে পৃথিবী দেখে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে আসা সব প্রাণী শক্তিশালী। আসুন, ডিপেন্ডেবল এই মানুষগুলোর ওপর আরো বিনয়ী হই, ভালোবাসা এবং সাহায্যে তৈরি করি তাদের নতুন পৃথিবী।”

যেভাবে ‘আমা দাবলাম’ জয় করলেন তৌকির
গত ১২ অক্টোবর দুঃসাহসিক এই অভিযানের জন্য দেশ ছাড়েন তৌকির। এরপর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় তার মূল অভিযান। হিমালয়ের পাহাড়ি বন্ধুর পথ ধরে ট্রেকিং করে তিনি বেস ক্যাম্পে পৌঁছান ২২ অক্টোবর। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তৌকির শুরু করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ায় কৌশল। যা এক্লিমাটাইজ রোটেশন নামে পরিচিত। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ২৯ অক্টোবর সামিটের কথা থাকলেও ২৭ অক্টোবর থেকে হিমালয়ের শুরু হয় তীব্র তুষার পাত। এই তুষার পাতের মধ্যেই তৌকির অবস্থান করেন আমা দাবলাম ক্যাম্প-১ এ। যার উচ্চতা প্রায় ১৯ হাজার ফিট। ২৮ অক্টোবর আবহাওয়া আরো খারাপ হলে তাদের শেরপা লিডার সিদ্ধান্ত নেন বেস ক্যাম্পে ফিরে যাবার। তীব্র এই তুষার ঝড়ের মধ্যে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তাদের দল বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়। বেস ক্যাম্পে পৌঁছে শুরু হয় নতুন দুশ্চিন্তার কারণ।

৬৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম পর্বত

তুষার পাতের কারণে ফিক্সড রোপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করলেও নতুন রুট ওপেন না করা পর্যন্ত সামিট পুশ সম্ভব হচ্ছিল না। এভাবেই কেটে যায় পাঁচদিন। তরপর সুখবর আসে রুট ওপেন হবার। নভেম্বরের ২ তারিখ শুরু হয় আবার সামিট বিট। এইদিনে তৌকির পৌঁছে যান ১৯ হাজার ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ। এরপর ৩ তারিখ ইয়োলো টাওয়ার খ্যাত ১৯ হাজার ৬৮৫ ফিট উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ পৌঁছান। বিশ্রাম নিয়ে শুরু করেন সামিট পুশ। তীব্র বাতাস, ফিক্সড রোপে অতিরিক্ত ট্রাফিক এবং আইস ফলকে উপেক্ষা করে ৪ নভেম্বর ২২ হাজার ৩৪৯ ফিট উচ্চতার ‘আমা দাবালাম’ চূড়ায় পৌছান তিনি।

তৌকির বিশ্বাস করেন, ‍“স্বপ্ন যদি সত্যিকার অর্থে জ্বলে, তবে পাহাড়ও নত হয়। প্রতিটি শিখর আমাদের শেখায়, সীমা কেবল মনেই থাকে, সফলতায় নয়।”

তরুণ এই পর্বতারোহী এবারের স্বপ্ন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া ‘মাউন্ট এভারেস্ট’। এই লক্ষ্য নিয়েই তিনি এগোচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তৌকির ২০২৬ সালেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় আবারো উড়াতে চান বাংলাদেশের পতাকা।

এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নেপালের তিনটি ছয় হাজার মিটার পর্বত চূড়া স্পর্শ করেন পাবনার সন্তান আহসানুজ্জামান তৌকির। ২৭ দিনের অভিযানে গিয়ে কোন শেরপা সাপোর্ট ছাড়াই পর্বতগুলো আরোহণ করেন তিনি। পর্বতগুলো হলো ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক, ৬১৬৫ মিটার উচ্চতার আইল্যান্ড পিক ও ৬৪৬১ মিটার উচ্চতার মেরা পিক।

তারও আগে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে তৌকির খুম্বু রিজিওনের ৫০৭৬ মিটার উচ্চতার নাগা অর্জুন এবং ৬১১৯ মিটার উচ্চতার লবুচে পিক পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন।

তৌকির পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার আকরাম হোসেন সাবু-সুলতানা সামিয়া পারভীন দম্পতি ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট তিনি। চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রিপল-ই তে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ