বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সিজেনকে জীবনদায়ী ওষুধ বলে বিবেচনা করছে। করোনা মহামারির ভয়াবহতা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার আলোচনায় অক্সিজেন গুরুত্ব হারিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাড়িতে থাকা রোগীদের অক্সিজেন ব্যবহারের বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। করোনার আগে দেশে দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ মেট্রিক টন অক্সিজেনের প্রয়োজন হতো। মহামারির সময় এই চাহিদা আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়। একই সময় ভারত থেকে অক্সিজেন আসা বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর খবরও প্রকাশ পায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও অন্য দাতাদের সহায়তায় স্বাস্থ্য বিভাগ সারা দেশে ১২০টি সরকারি ও বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন চালু করেছিল। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রায় ৩০ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়। একপর্যায়ে অক্সিজেনের সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার। ওই শাখার পরিচালক আবু হোসেন মো.
এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব অক্সিজেন দিবস পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর ২ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য অক্সিজেন’। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) দিনটি পালন করবে ৭ অক্টোবর।
বাতাসের ২১ শতাংশ অক্সিজেন। বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা করে শিল্পে ব্যবহার করা হয়, একে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। আবার হাসপাতালেও ব্যবহার করা হয়। হাসপাতালে ব্যবহৃত অক্সিজেন হতে হয় বিশুদ্ধ।অক্সিজেন কেন জরুরিকরোনা মূলত শ্বাসতন্ত্রের রোগ। তবে অক্সিজেন যে শুধু করোনা বা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগের জন্য প্রয়োজন হয়, তা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অক্সিজেন হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, যার কোনো বিকল্প নেই। সার্জারি ও ট্রমায় কৃত্রিম অক্সিজেনের দরকার হয়। বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী ও নবজাতকেরও এটি দরকার হয়।
মানুষের শরীরের রক্ত, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, টিস্যু ও ত্বকে অক্সিজেন থাকে। বেঁচে থাকার জন্য বিরতিহীনভাবে সারা জীবন অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। মানুষ অক্সিজেন পায় শ্বাসের মাধ্যমে নেওয়া বাতাস থেকে। বিশ্রামে থাকা একজন মানুষের প্রতি মিনিটে গড়ে ২০০ মিলিলিটার অক্সিজেনের দরকার হয়। শরীরে সবচেয়ে বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় মস্তিষ্কের। মানুষ খাদ্য ছাড়া অনেক দিন বাঁচতে পারে, পানি ছাড়াও কয়েক দিন চলতে পারে। কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষ মারা যায়।
বাতাসের ২১ শতাংশ অক্সিজেন। বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা করে শিল্পে ব্যবহার করা হয়, একে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। আবার হাসপাতালেও ব্যবহার করা হয়। হাসপাতালে ব্যবহৃত অক্সিজেন হতে হয় বিশুদ্ধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, উৎপাদিত অক্সিজেন সংরক্ষণ করা, সরবরাহ করা, সহজলভ্য করা, মান ঠিক রাখা ও রোগীর শরীরে দেওয়া পর্যন্ত একটি জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।
দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভোগা মানুষ অক্সিজেন পেলে তাঁর জীবনমান বদলে যায়। তাঁদের অক্সিজেন দেওয়ার পথে বাংলাদেশ যাত্রাই শুরু করেনি। এ বছরের অক্সিজেন দিবসে এই নতুন পথে যাত্রা শুরুর কথা সক্রিয়ভাবে চিন্তা করতে হবে।আহমদ এহসানূর রহমান, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানীকেন নতুন চিন্তাদেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে ৬০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। তাঁদের একটি অংশ দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। এক পরিসংখ্যান বলছে, শুধু শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন দুই লাখ মানুষ। তাঁদের অনেকে হাসপাতালে যেতে পারেন না বা হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। এসব মানুষের অক্সিজেন থেরাপি বাড়িতে দেওয়া সম্ভব।
এ ব্যাপারে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট–এর মেডিকেল অক্সিজেন সুরক্ষা–সম্পর্কিত কমিশন রিপোর্টের নির্বাহী কমিটির সদস্য আহমদ এহসানূর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগে ভোগা মানুষ অক্সিজেন পেলে তাঁর জীবনমান বদলে যায়। তাঁদের অক্সিজেন দেওয়ার পথে বাংলাদেশ যাত্রাই শুরু করেনি। এ বছরের অক্সিজেন দিবসে এই নতুন পথে যাত্রা শুরুর কথা সক্রিয়ভাবে চিন্তা করতে হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের শাখায় পেট্রল ঢেলে আগুন
বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গ্রামীণ ব্যাংকের গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন শাখা কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আজ সোমবার ভোরে গ্রামীণ ব্যাংকের ওই শাখা ভবনের বারান্দায় পেট্রল আগুন দেওয়া হয়। এতে ব্যাংকের বৈদ্যুতিক তার পুড়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া বারান্দায় একটি ব্যানার, ক্যারম বোর্ড ও আসবাব আগুনে পুড়ে যায়।
ধুনট থানা-পুলিশ ও গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, আজ ভোরে দুর্বৃত্তরা গ্রামীণ ব্যাংকের ওই শাখার কার্যালয়ের বারান্দায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বালু ও পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর-ধুনট সার্কেল) সজীব শাহরীন ও ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ব্যাংকের নৈশপ্রহরী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাতে বারান্দায় সতর্ক অবস্থায় ছিলাম। রাত তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ বারান্দায় আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাই। দুর্বৃত্তরা পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’
শাখাটির ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, রাতে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকা নৈশপ্রহরী সামান্য সময়ের জন্য বারান্দা থেকে একটি কক্ষের ভেতরে যান। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা বারান্দায় অগ্নিসংযোগ করে দ্রুত পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে বড় রকমের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আগে থেকেই বালু ও পানি মজুত ছিল। আজ সকাল থেকে যথারীতি ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে।
ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব শাহরীন বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ধুনট থানার পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।