সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে প্রায় এক দশক ধরে গোপন তথ্য বিক্রি করেছেন। এক শটির বেশি গোপন অভিযানের সঙ্গে আপস করেছেন এবং যার কারণে কমপক্ষে ১০টি পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে।

এখানে যাঁর কথা বলা হচ্ছে তিনি মার্কিন ডাবল এজেন্ট (দ্বৈত গুপ্তচর) অলড্রিখ এইমস।

১৯৯৪ সালের ২৮ এপ্রিল এই ডাবল এজেন্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিবিসি এমন একজন গুপ্তচরের সঙ্গে কথা বলেছিল, যাঁর সঙ্গে এইমস বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।

১৯৮৫ সালে হঠাৎ করেই উধাও হতে শুরু করেন সিআইএর হয়ে কাজ করা সোভিয়েত এজেন্টরা। একে একে তাদের ধরে নিয়ে যায় এবং প্রায়ই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি।

ওলেগ গর্দিভস্কি ওই ডাবল এজেন্টদের একজন। লন্ডনে কেজিবির স্টেশন প্রধান হলেও তিনি গোপনে বছরের পর বছর যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-৬–এর জন্য কাজ করছিলেন।

একদিন মস্কোতে নিজেকে মাদকাসক্ত অবস্থায় আবিষ্কার করেন গর্দিভস্কি এবং পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ফায়ারিং স্কোয়াডে তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হন। তবে অল্পের জন্য সেদিন প্রাণে বেঁচে যান গর্দিভস্কি। এমআই-৬ তাঁকে একটি গাড়িতে লুকিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে পাঠিয়ে দেয়।

১৯৯৪ সালের ২৮ এপ্রিল এই ডাবল এজেন্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিবিসি এমন একজন গুপ্তচরের সঙ্গে কথা বলেছিল, যাঁর সঙ্গে এইমস বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।

এরপর গর্দিভস্কি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন, কে তাঁর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

১৯৯৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গর্দিভস্কি নিউজনাইটের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিবিসির টম ম্যাঙ্গোল্ডকে বলেন, ‘প্রায় ৯ বছর ধরে আমি অনুমান করার চেষ্টা করছিলাম, কে সেই ব্যক্তি, কে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তবে আমি কোনো উত্তর জানতাম না।’

দুই মাস পরে তাঁর প্রশ্নের উত্তর পেয়েছিলেন গর্দিভস্কি। ওই সময় প্রবীণ সিআইএ কর্মকর্তা অলড্রিখ এইমস মার্কিন আদালতে দাঁড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, তিনি ‘সিআইএ এবং অন্যান্য মার্কিন ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত তাঁর পরিচিত সব সোভিয়েত এজেন্টদের’ তথ্য ফাঁস করেছেন।

১৯৯৪ সালের ২৮ এপ্রিল এইমস স্বীকার করেন, তিনি পশ্চিমাদের জন্য গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত ৩০ জনের বেশি এজেন্টের পরিচয় প্রকাশ করেছেন এবং ১০০টির বেশি গোপন অভিযানের তথ্য ফাঁস করেছেন।

কেজিবির কাছে কোলোকল (দ্য বেল) সাংকেতিক নামে পরিচিত ছিলেন এইমস, যাঁর বিশ্বাসঘাতকতার ফলে কমপক্ষে ১০টি সিআইএ গোয়েন্দা অ্যাসেট ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

ওই অ্যাসেটের মধ্যে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জেনারেল দিমিত্রি পলিয়াকভও ছিলেন। যিনি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে পশ্চিমাদের কাছে তথ্য সরবরাহ করেছিলেন।

মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষতিকর চর এইমসকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং প্যারোল ছাড়াই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ১৯৯৪ সালে বিবিসির টম ম্যাঙ্গোল্ড বলেন, ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাজ্যের গুপ্তচর কিম ফিলবির সোভিয়েত এজেন্ট হিসেবে প্রকাশ্যে আসার ঘটনা যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানটিকে যেভাবে নাড়া দিয়েছিল, ঠিক তেমনি এখন ওয়াশিংটনেরও উচিত, এইমস কী পরিমাণ ক্ষতি করেছেন, তা খতিয়ে দেখা।

সিআইএর সোভিয়েত কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগের প্রধান হিসেবে এইমসের ভূমিকাই তাঁকে এত ক্ষতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল।

ফলে এইমস সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান গোপন অভিযানগুলো এবং মাঠে থাকা এজেন্টদের পরিচয়সহ নানা গোপনীয় তথ্যে অবাধ ঢুকতে পেরেছিলেন।

এইমসের এই অবস্থানের অর্থ ছিল, তিনি অন্যান্য পশ্চিমা গুপ্তচর সংস্থার আলোচনায়ও অংশ নিতে পারতেন।

এভাবেই যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে মূল্যবান গুপ্তচর, কেজিবির কর্নেল গর্দিভস্কি সিআইএর এইমসের সংস্পর্শে আসেন। গর্দিভস্কি দুটি ব্রিটিশ সংস্থা এমআই-৬ এবং এমআই-৫–এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য পৌঁছে দিচ্ছিলেন।

ম্যাঙ্গোল্ড বলেন, এসব বৈঠক এমন অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, যেখানে ‘কেজিবির শীর্ষ গোয়েন্দারা তাদের শীর্ষ বিদ্রোহীকেই ডিব্রিফিং করত।

গর্দিভস্কি জানান, ‘মার্কিনরা ডিব্রিফিংয়ে সত্যিই খুবই ভালো ছিল। আমি উৎসাহী ছিলাম। আমি মার্কিনদের পছন্দ করতাম। তাঁদের সঙ্গে আমার জ্ঞান ভাগ করে নিতে চেয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি তিনি (এইমস) সেখানে বসেছিলেন। যার অর্থ হলো, আমার দেওয়া সব তথ্য এবং উত্তর তিনি অবশ্যই কেজিবিতে পৌঁছে দিতেন।’

১৯৯৪ সালের ২৮ এপ্রিল এইমস স্বীকার করেন, তিনি পশ্চিমাদের জন্য গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত ৩০ জনের বেশি এজেন্টের পরিচয় প্রকাশ করেছেন এবং ১০০টির বেশি গোপন অভিযানের তথ্য ফাঁস করেছেন।মদ্যপান ও বিবাহবিচ্ছেদ

অল্প বয়সেই গুপ্তচর জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন অলড্রিখ এইমস। তাঁর বাবা ছিলেন সিআইএর একজন বিশ্লেষক, যিনি তাঁর ছেলেকে কলেজ ছেড়ে দেওয়ার পর এজেন্সিতে চাকরি পেতে সাহায্য করেছিলেন।

কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে এইমসের বিশ্বাসঘাতকতা করার সিদ্ধান্তের পেছনে তাঁর আদর্শগত সংশয়ের চেয়ে হয়তো তাঁর অর্থের প্রয়োজনই বেশি কাজ করেছে।

শুরুতে একজন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিশ্রুতিশীল ছিলেন অলড্রিখ এইমস। তাঁর স্ত্রী ন্যান্সি সেগেবার্থও সিআইএর এজেন্ট ছিলেন।

১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে এইমসের স্ত্রী ন্যান্সি সেগেবার্থের সঙ্গে প্রথম তুরস্কে পোস্ট করা হয়েছিল এইমসকে। সেখানে তাঁকে বিদেশি এজেন্ট নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু ১৯৭২ সালের মধ্যে এইমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁকে সিআইএ সদর দপ্তরে ডেকে পাঠান। কারণ, তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য উপযুক্ত নন।

যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এইমস রুশ ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং সোভিয়েত গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে মাঠপর্যায়ের অভিযানের পরিকল্পনা করার দায়িত্ব পান।

মাদকাসক্ত হওয়ায় এইমসের বাবার সিআইএ ক্যারিয়ার স্থবির হয়ে গিয়েছিল। ঠিক একইভাবে এইমসের নিজের অতিরিক্ত মদ্যপান তাঁর অগ্রগতিকেও ব্যাহত করতে শুরু করে।

১৯৮১ সালে মেক্সিকো সিটিতে ট্রাফিক দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন এইমস। তিনি এতটাই মদ্যপ ছিলেন যে পুলিশের প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেননি। এমনকি তাঁকে সাহায্য করার জন্য পাঠানো মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে চিনতেও ব্যর্থ হন তিনি।

১৯৭২ সালে এইমসের মাতাল ও বিব্রতকর অবস্থায় সিআইএর এক নারী কর্মচারীর সঙ্গে দেখেন আরেকজন এজেন্ট। এইমসের উদাসীন মনোভাব কাজের জন্য মোটেই সহায়ক ছিল না।

১৯৭৬ সালে গোপন তথ্য ভর্তি একটি ব্রিফকেস সাবওয়েতেই রেখে যান এইমস।

নিজের কর্মজীবনকে আবার সঠিক পথে ফেরাতে স্ত্রীকে নিউইয়র্কের বাড়িতে রেখেই ১৯৮১ সালে বিদেশের মাটিতে (মেক্সিকো সিটি) দ্বিতীয়বারের মতো পোস্টিং নেন এইমস। কিন্তু আচরণ ও অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে তিনি নিজেকে একজন সিআইএ কর্মকর্তা হিসেবে প্রমাণে আবারও ব্যর্থ হন।

১৯৮১ সালে মেক্সিকো সিটিতে ট্রাফিক দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন এইমস। তিনি এতটাই মদ্যপ ছিলেন যে তিনি পুলিশের প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেননি। এমনকি তাঁকে সাহায্য করার জন্য পাঠানো মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাকে চিনতেও ব্যর্থ হন তিনি।

দূতাবাসে এক কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাতাল অবস্থায় এক কিউবান কর্মকর্তার সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন এইমস। এ ঘটনার পরে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নিয়ে তাঁর মদ্যপানের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করতে সিআইএকে সুপারিশ করেন তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন এইমসস। এটি তাঁর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে দাঁড়ায়।

১৯৮২ সালের শেষের দিকে এইমস সিআইএতে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কলম্বিয়ান সাংস্কৃতিক অ্যাটাশে মারিয়া দেল রোজারিও কাসাস দুপুইয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ধীরে ধীরে তাঁদের প্রেম তীব্র হয়ে ওঠে। নিজের প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে রোজারিওকে বিয়ে করে নিজের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন এইমস।

১৯৮৬ সালে সিআইএর এত সংখ্যক অ্যাসেট হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগের সৃষ্টি করে এবং সংস্থার মধ্যে সেই গুপ্তচরের সন্ধান শুরু হয়। কিন্তু এক দশকের বেশি সময় ধরে নজরের বাইরেই থেকে যান এইমস।

সিআইএতে নিজের মোটামুটি ভালো কাজের পরও এইমস ক্রমাগত ব্যর্থ হতে থাকেন।

১৯৮৩ সালে এজেন্সির সদর দপ্তরে ফিরে আসার পর এইমসকে সোভিয়েত অভিযানের জন্য কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স শাখার প্রধান করা হয়। এর ফলে তিনি সিআইএর গোপন কার্যকলাপ সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য পেতে সক্ষম হন।

বিবাহবিচ্ছেদের সমঝোতার অংশ হিসেবে ন্যান্সির সঙ্গে এইমস সম্মত হন যে তিনি দম্পতি হিসেবে তাঁদের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করবেন। পাশাপাশি মাসিক ভরণপোষণও চালিয়ে যাবেন।

কিন্তু নতুন স্ত্রী রোজারিওর ব্যয়বহুল রুচি, কেনাকাটার প্রতি তাঁর আগ্রহ ও কলম্বিয়ায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঘন ঘন ফোনকলের কারণে এইমসের আর্থিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

অ্যারিজোনার সিনেটর ডেনিস ডিকনসিনিকে এইমস বলেছিলেন, নিজের ক্রমবর্ধমান ঋণই তাঁকে গোপন তথ্য বিক্রি করার কথা ভাবতে বাধ্য করেছিল।

এইমস বলেন, ‘আমি প্রবল আর্থিক চাপ অনুভব করেছি। যার ফলে স্পষ্টতই আমি অতীতে বেশি প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছিলাম।’

নিজের দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা

এইমসের গ্রেপ্তারের তদন্তে জড়িত থাকা এফবিআই এজেন্ট লেসলি জি ওয়াইজার ২০১৫ সালে বিবিসির উইটনেস হিস্ট্রিকে বলেছিলেন, ‘এটি অর্থের বিষয় ছিল। আমার মনে হয় না, তিনি কখনো কাউকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করেছিলেন যে এটি তার চেয়েও বেশি কিছু ছিল।’

১৯৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল কিছুটা মদ্যপান করার পর এইমস সোজা ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাসে প্রবেশ করেন। ভেতরে প্রবেশের পর অভ্যর্থনাকারীর হাতে কিছু ডাবল এজেন্টের নাম, সিআইএর একজন অভ্যন্তরীণ সদস্য হিসেবে তাঁর পরিচয়ের প্রমাণপত্র এবং ৫০ হাজার ডলার দাবি করে একটি নোট দেন।

সিনেটের একটি প্রতিবেদনে এইমস দাবি করেন, তিনি ভেবেছিলেন, এই কাজের মাধ্যমে নিজেকে আর্থিক অন্ধকার থেকে চিরতরে বের করতে পারবেন। কিন্তু দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন, ‘একটি সীমা অতিক্রম করেছি এবং কখনই পিছিয়ে আসতে পারব না।’

পরবর্তী ৯ বছর ধরে অনেক গোপন তথ্য দেওয়ার জন্য এইমসকে অর্থ দিয়েছিল কেজিবি।

এইমস মস্কোর মহাকাশ স্থাপনার সঙ্গে যুক্ত বার্তাযন্ত্র থেকে শুরু করে পারমাণবিক অস্ত্র গণনা করতে সক্ষম অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পর্যন্ত, সবকিছুর বিবরণসহ গোপন নথি প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে সিআইএ থেকে বের করে আনতেন।

যেহেতু এইমসের কাজেই রুশ কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক জড়িত ছিল, তাই তিনি মাঝেমধ্যেই কোনো সন্দেহ ছাড়াই তাঁর পরিচালকদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করতে পারতেন। এমনকি পূর্বনির্ধারিত গোপন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রের প্যাকেটও তিনি রেখে যেতেন, যাকে বলা হয় ‘ডেড ড্রপস’।

এফবিআই এজেন্ট লেসলি জি ওয়াইজার বলেন, যদি তিনি একটি ডেড ড্রপস দিতে চাইতেন, তাহলে আগে থেকেই একটি চিঠির বক্সকে চক দিয়ে চিহ্নিত করত এবং রুশরা সেই চিহ্ন দেখে বুঝতে পারত, নথিপত্র এখানেই রাখা হয়েছে।

এফবিআই এজেন্ট লেসলি জি ওয়াইজার বলেন, পরে নথিগুলো সংগ্রহের সময় তারা চক চিহ্নটি মুছে ফেলত। তখন এইমসও নিশ্চিত হতেন, নথিপত্র স্থানান্তর নিরাপদে সম্পন্ন হয়েছে।

এইমসের গোপন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের কারণেই কেজিবি সোভিয়েত ইউনিয়নে সিআইএর প্রায় সব গুপ্তচরকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ফলে সেখানে তাঁদের মার্কিন গোপন অভিযান কার্যকরভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

ওয়াইজার বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোনো গুপ্তচর বা গোয়েন্দার কথা জানি না, যে হিউম্যান অ্যাসেটের দিক থেকে এত বেশি মানুষের জীবনহানি করেছে।’

১৯৮৬ সালে সিআইএর এত সংখ্যক অ্যাসেট হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগের সৃষ্টি করে এবং সংস্থার মধ্যে সেই গুপ্তচরের সন্ধান শুরু হয়। কিন্তু এক দশকের বেশি সময় ধরে নজরের বাইরেই থেকে যান এইমস।

বিশ্বাসঘাতকতার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থও দেওয়া হয়েছিল এইমসকে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাঁকে প্রায় ২৫ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছিল।

নিজের নতুন সম্পদ লুকানোর জন্যও খুব কম চেষ্টাই করেছিলেন এইমস। বছরে ৭০ হাজার ডলারের বেশি বেতন না পাওয়া সত্ত্বেও তিনি নগদ ৫ লাখ ৪০ হাজার ডলারের একটি নতুন বাড়ি কিনেছিলেন। বাড়ির উন্নতিতে কয়েক হাজার ডলার ব্যয়ের পাশাপাশি একটি জাগুয়ার গাড়িও কিনেছিলেন।

বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ও ব্যয় এইমসকে আলোচনায় এনেছিল। এর ফলে ১৯৯৪ সালে ওয়াইজারের এফবিআই দলের হাতে তিনি গ্রেপ্তার হন।

এফবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করেন এইমস। একটি আবেদনপত্রে নিজের গুপ্তচরবৃত্তির সবকিছু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্ত্রী রোজারিওর জন্য কম সাজা নিশ্চিত করা হয়।

এইমস স্বীকার করেন, রোজারিও তাঁর নগদ অর্থ এবং সোভিয়েতদের সঙ্গে বৈঠকের কথা জানতেন।

পাঁচ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পান রোজারিও।

কিন্তু সিআইএর একসময়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও পরে ডাবল এজেন্ট পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়া এইমস ইন্ডিয়ানার টেরে হাউজের একটি মার্কিন ফেডারেল কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

আজ পর্যন্ত এইমস নিজের কর্মকাণ্ড বা এর ফলে ঘটে যাওয়া মৃত্যুর জন্য খুব কমই অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।

এফবিআই কর্মকর্তা ওয়াইজারের মতে, তাঁর নিজের সম্পর্কে খুবই উচ্চ ধারণা ছিল এইমসের। তাঁর মতে, ধরা পড়ার বিষয়ে অনুশোচনা করলেও গুপ্তচর হওয়ার জন্য কোনো অনুতাপ নেই তাঁর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর জ য র ন কর মকর ত গ প তচর র ত ইউন য ন কর ছ ল ন র জন য ক ক র কর ন স কর ছ ন র একজন একজন ক র অর থ ল ন এই বল ছ ল প রক শ ব র কর ক জ কর র পর চ অবস থ র ঘটন স আইএ বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।

‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?

উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’

জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’

জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?

জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’

আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?

সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।

বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’

সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?

জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’

প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?

‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।

আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’

আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫

পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?

মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’

আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র
  • সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ