দেশের বাজারে চাকরির সংকট কিংবা কম বেতন অথবা কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকাসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রবাসী হচ্ছে। মূলত অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এবং জীবনমান উন্নয়নের আশায় পাড়ি জমায় দূর প্রবাসে।

২০২৪–এর একটি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের প্রবাসীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখের বেশি, এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবেই আছে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে চলছে দেশের অর্থনীতি। তবে দুঃখের বিষয় বিশাল এই জনগোষ্ঠীর দুঃখের বাস্তব চিত্র কোথাও তুলে ধরা হয় না।

একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ কখনোই অকারণে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয় না, দেশের কেউ আত্মহত্যা করলে সেটার কারণ হয়তো পরিবার কিংবা আশপাশের মানুষ কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। তবে প্রবাসে এই চিত্র ভিন্ন, এখানে নিজের খবর নিজেরই রাখার সময় হয় না। ফলে দেখা যায়, একই রুমে থেকেও রুমমেট কী কারণে আত্মহত্যা করছে, সেটি টেরও পাওয়া যায় না।

আমি নিজে একজন প্রবাসী হিসেবে প্রবাসে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে কয়েকটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।

বৈবাহিক জীবনে অশান্তি

প্রবাসে যেসব পুরুষ আত্মহত্যা করেন তাঁদের বেশির ভাগ বিবাহিত। স্ত্রীকে দেশে রেখে অনেক প্রবাসী শ্রমিক বছরের পর বছর প্রবাসে থেকে যান। অনেক সময় ভিসা, আকামা না থাকায় কয়েক বছরেও যাওয়া হয় না দেশে, যার প্রভাব গিয়ে পড়ে বৈবাহিক জীবনে। ফলে সম্পর্কে দেখা দেয় ভাঙন। এখানে পারিবারিক অশান্তি, পরকিয়াসহ বিবিধ কারণ যুক্ত। এসব কারণে অনেক প্রবাসী আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেন।

ঋণ শোধ করার চাপ

অনেক প্রবাসী চক্রবৃদ্ধি সুদে অথবা উচ্চ সুদে লোন করে এখানে আসেন, তিনি সেই লোনের টাকা শোধ করতে পারেন না, পাওনাদার পরিবারকে নানা রকম চাপ দেয়। এরপর সেই চাপটা আবার ওই প্রবাসীর ওপরই ফিরে আসছে। এ চাপটা নিতে না পেরেই অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন।

নারী কর্মীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা

দেশে থাকা দালাল নানা রকম চটকদার কথা বললেও বাস্তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিকদের জীবন এক বিভীষিকাময় জেল বললেই চলে। বিশেষত যাঁরা বাসাবাড়িতে কাজের ভিসায় আসেন, তাঁদের বেশির ভাগই নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়েন। কাজের কোনো নির্ধারিত সময় কিংবা ধরন কোনো কিছুরই ঠিক থাকে না। এরপরও অনেকের বেতন দেয় না ঠিকমতো। আবার নারী কর্মীদের কুকাজের প্রস্তাব করেন এমন সংখ্যাও কম না। এ ছাড়া শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের স্বীকারও হতে হয় অনেককে। এর বাইরেও দালালেরা নানা কাজের কথা বলে এখানে এনে দেহ ব্যবসার মতো কাজেও নারীদের কাজ করতে বাধ্য করে। এসব চতুর্মুখী সমস্যা মোকাবিলা করে বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে যায়, ফলে অনেকে নিয়ে নেন আত্মহননের সিদ্ধান্ত।

প্রবাসে আত্মহনন বন্ধে সরকারকে হতে হবে প্রবাসীবান্ধব। সরকার চাইলে চালু করতে পারে প্রবাসী সহায়তা অ্যাপস, যেখানে প্রবাসীরা যেকোনো সমস্যা হলে সেটি মোবাইলের মাধ্যমে জানাতে পারেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাস সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে যাঁরা অভিবাসনপ্রত্যাশী তাঁদের যেকোনো একটি কাজে দক্ষ করে সেই কাজের ভিসায় অনুমতি দেওয়া এবং প্রবাসযাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনা। প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদেরও খেয়াল রাখতে হবে প্রবাসীর মানসিক ব্যাপারে।

প্রবাসে আত্মহত্যা করা অনেক প্রবাসীর পরিবার মনে করে তাদের স্বজন হত্যার শিকার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা লাশের শরীরে বিভিন্ন রকম জখমের দাগকে উদাহরণ হিসেবে দেখায়। আত্মহত্যাকে হত্যা দাবি করা লাশের অধিকাংশই থাকেন প্রবাসে গৃহপরিচারিকার কাজে। এসব ক্ষেত্রে উচিত দেশে লাশ এলে সেটি আবার পোস্টমর্টেম করা। প্রবাসী বাঁচলে বাড়বে রেমিট্যান্স, রেমিট্যান্স বাড়লে এগোবে দেশ।

মিনহাজ বিন মাহবুব

কাতারের দোহায় কর্মরত চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা

ই–মেইল: [email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব স র র পর ব হত য র পর ব র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন

চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক পতনের ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪ হাজার ৭০০ পয়েন্টের ঘরে নেমেছে। 

এ দিনে আগের কার্যদিবসের চেয়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কমেছে। সাড়ে চার মাস আগের অবস্থানে নেমে এসেছে লেনদেন ও সূচক। ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম বাড়লেও সিএসইতে কমেছে।

আরো পড়ুন:

বেক্সিমকো সিকিউরিটিজের সনদ নবায়ন বাতিল

প্রথম প্রান্তিকে প্রাণের মুনাফা কমেছে ১.১৬ শতাংশ

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। রবিবার সকালে ডিএসইএক্স সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয়। তবে, লেনদেন শুরুর ১০ মিনিট পর থেকে সূচকের পতন দেখা যায়। এক পর্যায়ে সূচক ৮০ পয়েন্টের বেশি পতন ঘটে। তবে, লেনদেনের শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরে আসে, যা লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৯.৪৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৩২ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮.১৬ পয়েন্ট কমে ৯৮৫ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৯.২৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৬০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৩৮৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ২৩৬টি কোম্পানির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩৫টির।

এদিন ডিএসইতে মোট ২৯৮ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৮৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫০.৮৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৮ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৪.৩৭ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৩.৯৬ পয়েন্ট কমে ৮৪০ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৩৮.৯৮ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ১৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ১৪৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৪৭টি কোম্পানির, কমেছে ৮২টির এবং অপরিবর্তিত আছে ১৭টির।

সিএসইতে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
  • বাঙালি মুসলমান চিন্তার মেরুকরণ