গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত
Published: 14th, October 2025 GMT
উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আজ মঙ্গলবার ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের সেনাবাহিনীর কাছাকাছি এসেছিলেন কয়েকজন। সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের গুলি করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে ইসরায়েলি সেনারা নির্ধারিত সীমায় অবস্থান করছেন। সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা ওই সীমা অতিক্রম করেছিলেন, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন। গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ গাজা উপত্যকার দুটি পৃথক ঘটনায় ইসরায়েলি সেনারা ছয়জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছেন।
সোমবার হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেয় এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ফেরত দেয় ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়েছিলেন। এর জবাবে দুই বছরের ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজার প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হাজারো মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
চার জিম্মির মরদেহ শনাক্তইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামাসের কাছ থেকে ফেরত পাওয়া চার জিম্মির মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন নেপালের শিক্ষার্থীও রয়েছেন। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নিহতদের মধ্যে দুজনের নাম গাই ইলুজ (ইসরায়েলি নাগরিক) এবং বিপিন জোশি (নেপালের শিক্ষার্থী)। অন্য দুই জিম্মির নাম তাঁদের পরিবারের অনুরোধে প্রকাশ করা হয়নি।
২৬ বছর বয়সী গাই ইলুজ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার সময় নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে অংশ নিচ্ছিলেন। হামলার পর তিনি একটি জিপে করে পালানোর চেষ্টা করেন এবং পরে এক গাছে লুকিয়ে পড়েন। সেখান থেকেই তিনি শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, এরপরই তাঁকে ধরে গাজা উপত্যকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
২২ বছর বয়সী বিপিন জোশি নেপালের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির একজন সদস্য ছিলেন। হামাস হামলার তিন সপ্তাহ আগে তিনি ইসরায়েলে পৌঁছেছিলেন। তাঁকে কিবুটজ আলুমিম এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। হামলাকারীরা আসার কিছুক্ষণ আগে তাঁকে থাই শ্রমিকদের সঙ্গে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
সোমবার হামাস এই চার মরদেহ ফেরত দেয়। এখনো হামাস যোদ্ধাদের কাছে ২৪ জন জিম্মির মরদেহ রয়েছে, যেগুলো যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজা পুনর্গঠনে উদ্যোগজাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আরব ও ইউরোপীয় দেশ গাজা পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তাবিত ৭০ বিলিয়ন ডলার তহবিলে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।
ইউএনডিপির কর্মকর্তা জ্যাকো সিলিয়ার্স আজ জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বেশ ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছি।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। সিলিয়ার্সের হিসাবে, দুই বছরব্যাপী ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ফলে গাজায় অন্তত ৫৫ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে, যা পুনর্গঠনের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
মধ্যপ্রাচ্য সম্মেলন ‘প্রতীকী’ট্রাম্প সোমবার মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে ২০টির বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে যে সম্মেলন করেছেন, বিশ্লেষকদের মতে তা ছিল ‘প্রতীকী’। বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয়নি। অবশ্য সম্মেলনে ট্রাম্প নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, গাজা নিয়ে তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনার অবশিষ্ট অংশ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সেই আলোচনা কোথায়, কীভাবে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি।
সম্মেলনে ইসরায়েল বা হামাস—কোনো পক্ষের প্রতিনিধিই উপস্থিত ছিলেন না। ফলে এই বৈঠকে বাস্তব কোনো সমঝোতা বা অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। আলোচনার প্রধান বাধা হিসেবে রয়ে গেছে তিনটি বড় প্রশ্ন। এগুলো হলো হামাসের ভবিষ্যৎ কী হবে, ইসরায়েলি সেনা কবে গাজা থেকে সরে যাবেন এবং যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কে শাসন করবে?
এসব ইস্যু সমাধানে দীর্ঘ ও জটিল আলোচনার প্রয়োজন হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। ট্রাম্প সম্মেলনে সফলতা দাবি করলেও লক্ষণীয় বিষয় হলো, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, যা এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতের মূল কেন্দ্রবিন্দু—সে বিষয়ে একটিও শব্দ উচ্চারণ করেননি তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র মরদ হ ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
আলীকদম সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে মিয়ানমারের নাগরিক নিহত
বান্দরবানের আলীকদম সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে একজন মিয়ানমারের নাগরিক নিহত ও একজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির লাশ ঘটনাস্থলেই রয়েছে, আর আহত ব্যক্তি বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে বিজিবি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
এর এক দিন আগে, রোববার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে একজন বিজিবি সদস্য আহত হন। ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই আলীকদম সীমান্তে নতুন করে হতাহতের ঘটনা ঘটল। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এর আগে এ এলাকায় মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি।
কক্সবাজারের রামু ৩০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, নিহত মেনথাং ম্রো (৪০) এবং আহত মাংছার ম্রো (৩০) ৫৫ নম্বর সীমান্ত পিলারের পশ্চিম পাশে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হটাও মগপাড়া এলাকায় জুম দেখার জন্য যাচ্ছিলেন। পথে মাইন বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই মেনথাং ম্রো মারা যান। তিনি মিয়ানমারের নতুনপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর লাশ এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে। আহত মাংছার ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের গর্জনপাড়া এলাকায়। তিনি আহত অবস্থায় ফিরেছেন এবং তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
কুরুকপাতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে মেনথাং ম্রোর পরিবার সীমান্তঘেঁষা ইয়ংরিংপাড়ায় সাময়িকভাবে আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি মাংছার ম্রোকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের নিজের জুমঘর থেকে ধান আনতে গিয়েছিলেন। পথে মাইন বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন। তাঁর লাশ উদ্ধারে ইয়ংরিংপাড়ার লোকজন চেষ্টা করছেন। আহত মাংছার ম্রো পেটে আঘাত পেয়েছেন, তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়।
চেয়ারম্যান ক্রাতপুং আরও বলেন, কুরুকপাতা ইউনিয়নের ইয়ংরিংপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত। স্থানীয় লোকজন সীমান্তের উভয় পাশে জুমচাষ করেন এবং মিয়ানমারের ম্রো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর্জা জহির উদ্দিন বলেন, মাইন বিস্ফোরণে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি মিয়ানমারের এবং আহত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। তবে সীমান্ত এলাকা দুর্গম হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছানো কঠিন।
আরও পড়ুননাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বিজিবি সদস্য আহত১২ অক্টোবর ২০২৫