ফরিদপুরে চাঁদাবাজির বিষয়ে সতর্ক করে বিএনপির মাইকিং
Published: 14th, October 2025 GMT
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে নীরব চাঁদাবাজি চলছে দাবি করে চাঁদাবাজির বিষয়ে সতর্ক করে দলটির পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আলফাডাঙ্গা পৌর শহরসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে এ মাইকিং করা হয়।
মাইকিংয়ে বলা হয়, ‘প্রিয় আলফাডাঙ্গাবাসী আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি যে আলফাডাঙ্গা বাজারের এবং আশপাশের গ্রামের বিশেষ করে হিন্দু ব্যবসায়ীদের ওপর নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে নতুন নতুন মামলার আসামি বানানোর কথা বলে নীরবে চাঁদাবাজির চেষ্টা চলছে বা হচ্ছে। দয়া করে কেউ এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা দিবেন না। অনেকেই নিজেদেরকে বিএনপির নেতা হিসেবে দাবি করছে। এ ধরনের কোনো ব্যক্তি যদি আপনাকে বিএনপির নাম দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা-কর্মী এবং সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা পুলিশ প্রশাসনের সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।’
উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই কিছু কুচক্রী মহল সক্রিয় হয়ে উঠছে। এমনকি বিএনপির নেতা-কর্মীদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা ও নীরব চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এসব কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করতে উপজেলাজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, জনসাধারণকে সতর্ক করার জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নির্দেশনায় এ মাইকিং করা হয়েছে। কারণ, কয়েক মাস ধরে দলের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করা হয়েছে। এর সঙ্গে উপজেলা বিএনপি কোনোভাবেই জড়িত নয়। তাই উপজেলাবাসীকে মাইকিং করে এ কথা জানানো হয়েছে।
এমন ঘোষণাকে বিএনপির দলীয় বিষয় উল্লেখ করে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন আলফ ড ঙ গ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মেরে আন্দোলন ‘ঠান্ডা’ করার নীতি ছিল শেখ হাসিনার
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর লেথাল উইপন বা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন—তাঁর কথোপকথনের বিভিন্ন অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে এটি এখন অকাট্যভাবে প্রমাণিত। মুঠোফোনে কথোপকথনের তিনটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মেরে ফেলে আন্দোলনকে ‘ঠান্ডা’ করার নীতি ছিল শেখ হাসিনার।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পৃথক আলাপে (মুঠোফোনে) প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারসহ আন্দোলন দমনে বল প্রয়োগের বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে।
মুঠোফোনে কথোপকথনের (হাসিনা-তাপস, হাসিনা-মাকসুদ ও হাসিনা-ইনু) পৃথক তিনটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ওয়্যারলেসে (বেতার বার্তা) তখন যে বার্তা দিয়েছিলেন, তার রেকর্ডও (অডিও) ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তাপসের সঙ্গে আলাপে শেখ হাসিনা লেথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কমান্ড রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের দায়) জায়গায় সব অ্যাভিডেন্স (প্রমাণ) বাদ দিলেও শুধু এই সরাসরি নির্দেশই তাঁর (শেখ হাসিনা) অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
শেখ হাসিনার সঙ্গে মাকসুদ কামালের কথোপকথন প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, খুব পরিষ্কারভাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, র্যাব ও বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তাঁর নির্দেশ ও সেটির পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে র্যাব ও বিজিবির যে অ্যাকশন (আক্রমণ), সেগুলো বিবেচনায় নিলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কয়েকটি অডিও কথোপকথন, পুলিশের ওয়্যারলেস মেসেজ (বেতার বার্তা) এবং এর সঙ্গে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের সাক্ষ্য বিবেচনায় নিলে লেথাল উইপন ব্যবহারের আদেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে যায়। আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের কাছে যায়। তাঁর কাছ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও অন্যদের কাছে যায়। এই বার্তা দেওয়ার পর দেখা গেছে, কীভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।
গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের হত্যার জন্য রাস্তার মোড়ে বা থানার সামনে বালুর বস্তা দিয়ে বাংকারসদৃশ ঘাঁটি তৈরি করে তার ওপর এলএমজি (লাইট মেশিনগান) বসানো হয়েছিল বলেও যুক্তিতর্কে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলএমজি হলো মারণাস্ত্র। এটি ছিল শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের বাস্তবায়ন।
আন্দোলনকারীদের শরীর থেকে উদ্ধার করা বুলেট ও পিলেট (ছররা গুলি বা রাবার বুলেট) ট্রাইব্যুনালে এর আগে প্রদর্শন করা হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এসব থেকে খুব পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, অস্ত্রগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মারণাস্ত্র ব্যবহার করার আদেশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার হাজারো ভিডিও রয়েছে। এ সময় ট্রাইব্যুনালে গণ–অভ্যুত্থানের সময়কার কয়েকটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। যার মধ্যে ছিল রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি, রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ইমাম হাসানকে (তাইম) গুলি করাসহ বেশ কিছু ভিডিও ।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তাতে নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ আছে। প্রতিবেদনের এই অংশ ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। এর পাশাপাশি তিনি গণ–অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরার জন্য প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের শিরোনাম পড়ে শোনান। সেই সঙ্গে গণ–অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছাত্রলীগ (এখন নিষিদ্ধ) নেতা–কর্মী নির্যাতন করেছেন, তাঁদের নাম ও ছবিসহ বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটির বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ইনুর মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির সময় বাড়লগণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের বিষয়ে শুনানির সময় বাড়ানো হয়েছে। ২৩ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
ট্রাইব্যুনালে ইনুর পক্ষে আইনজীবী নাজনীন নাহার সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। তিনি বলেন, ১ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠার নথিপত্র দেখে তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁদের ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে।
পরে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
হানিফকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশগণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২।
এ মামলার অপর তিন আসামি হলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
গতকাল শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়, এই মামলার চার আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পরে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।