কিছু উপদেষ্টার ভূমিকায় উদ্বিগ্ন বিএনপি
Published: 14th, October 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য, তৎপরতা ও প্রশাসনিক পদায়নে পক্ষপাতমূলক আচরণের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করছে।
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির এই সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরকারের কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা সভায় মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।
এ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর, প্রশাসনিক রদবদল ও নির্বাচনী প্রস্তুতিসহ আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ পরিস্থিতিতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করবে। এ বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করার পাশাপাশি তাঁদের উদ্বেগের কথাও জানাবেন।
ওই সূত্রগুলো জানায়, সরকারের কিছু উপদেষ্টার সাম্প্রতিক মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড নিয়ে বৈঠকে একাধিক সদস্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে—যাঁরা নিরপেক্ষ থাকার কথা, তাঁরা এমন কিছু আচরণ করছেন, যাতে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে কয়েকজন নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর প্রশাসনে যেসব রদবদল বা নতুন পদায়ন হয়েছে, সেখানে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরিতেও ওই দলের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্কও তত বাড়ছে।
আরও পড়ুনকোন কোন উপদেষ্টা ষড়যন্ত্রে, তাঁদের নাম ও কণ্ঠ রেকর্ড আছে: জামায়াত নেতা তাহের৯ ঘণ্টা আগেসভায় বিএনপির নেতারা অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকারের এখনই উচিত নিজেদের চরিত্র এমনভাবে দাঁড় করানো, যাতে জনগণ এবং সব দল আশ্বস্ত হয়—এ সরকার সত্যিকার অর্থেই তত্ত্বাবধায়ক ধাঁচের নিরপেক্ষ সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না, এই সরকার তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলুক। তবে কিছু উপদেষ্টার আচরণে মানুষ সন্দিহান হচ্ছে। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের উচিত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা দৃশ্যমানভাবে প্রদর্শন করা।’
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৭ অক্টোবর সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির পক্ষে সনদে সই করবেন।
এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সভায় দলীয় গণসংযোগ ও প্রচারণা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ে দলের বার্তা পৌঁছাতে মিডিয়া সেল ও কমিউনিকেশন সেলকে আরও সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে যে ‘অপপ্রচার’ চলছে, তার মোকাবিলায় বিকল্প বয়ান বা পাল্টা কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দেন একাধিক সদস্য।
বৈঠকে প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে লম্বা আলোচনা না হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই দায়িত্ব ইতিমধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তিনি মাঠপর্যায়ের মতামত বিশ্লেষণ করে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরও পড়ুন‘উপদেষ্টাদের অনেকেই সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে’, নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা০৫ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ক উপদ ষ ট র ন উপদ ষ ট র জন ত ক ব এনপ র কম ট র উদ ব গ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার: জরিপ
দেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনের সঙ্গে জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামী সহিংস আচরণ করেছেন।
শারীরিক, যৌন, মানসিক, অর্থনৈতিক সহিংসতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন নারী। তবে সামগ্রিকভাবে এই সহিংসতার হার ২০১৫ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মিনাক্ষী বিশ্বাস।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশের ৭৬ শতাংশ নারীকেই জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গীর সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ গত এক বছরে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সহিংসতার শিকার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন ভুক্তভোগী (৬২ শতাংশ) তাঁদের অভিজ্ঞতা কখনো প্রকাশ করেননি।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, ১৫ শতাংশ নারী ১৫ বছর বয়স থেকে সঙ্গী নন এমন ব্যক্তির মাধ্যমে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তবে স্বামীর সহিংস আচরণ ২০১৫ সালে ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
জরিপে আরও বলা হয়, কম বয়স, যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং শহুরে বস্তিতে বসবাস করা নারীরা স্বামীর মাধ্যমে বেশি সহিংসতার শিকার হন। স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়। কম বয়স, সীমিত শিক্ষা ও প্রতিবন্ধিতার কারণে নারীরা সঙ্গী নয় এমন ব্যক্তির কাছে বেশি সহিংসতার শিকার হন।
যৌন সহিংসতা বেশি
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, অর্ধেকের বেশি নারী (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ গত ১২ মাসে একাধিকবার সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক সহিংসতা এবং ৫ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা নারীর সঙ্গে শারীরিক সহিংসতার ঘটনায় বেশি জড়িত। আর পুরুষ আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতজনের মাধ্যমে নারীরা বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হন।
ডিজিটাল মাধ্যমেও সহিংসতা
জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তির মাধ্যমে জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এগুলো যৌন ব্ল্যাকমেল, ছবি নিয়ে অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরিষেবা চাওয়ার হার কম
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে পরিষেবা চাওয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে কম। জরিপের ফলাফল বলছে, মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ সহিংসতার শিকার নারী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। স্বামীর কাছে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতার কাছ থেকেই সহায়তা চেয়েছেন।
অন্যদিকে জীবনসঙ্গী নয়, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং সবচেয়ে বেশি পুলিশের কাছ থেকেই আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে সেই সচেতনতাও কম। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, প্রতি দুজনের মধ্যে একজনেরও কম নারী (৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ) জানেন না যে কোথায় সহিংসতার অভিযোগ জানাতে হয় এবং মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী সহিংসতার সহায়তাকারী হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে অবগত।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।