প্রেম, অপরাধবোধ আর নিয়তির গ্যাড়াকলে জড়িয়ে থাকা মানুষের গল্পে ফ্ল্যাশ ফিকশন ‘গ্যাড়াকল’। নাম শুনলেই কানে বাজে একধরনের টান—কিছু একটা আটকে গেছে, মুক্তি নেই, কিন্তু গল্পটা সেখান থেকেই শুরু। ‘কর্মের ফলে গ্যাড়াকলে’—এই ভাবনার সূত্র ধরে গড়ে উঠেছে গল্পটি, যা দর্শকদের নিয়ে যাবে মানবমনের অন্তর্লোকে, যেখানে সত্য ও ভ্রম একাকার হয়ে যায়। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে ‘গ্যাড়াকল’ মুক্তি পাবে ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিটে (১৬ অক্টোবর)।
দেশের জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক ব্যতিক্রমধর্মী কনটেন্ট উপহার দিচ্ছে দর্শকদের। এর আগে তারা এনেছিল ফ্ল্যাশ ফিকশন ‘খুব কাছেরই কেউ’ ও ‘অন্ধ বালক’। এসব গল্পে যেমন জীবনের বাস্তব টানাপোড়েন উঠে এসেছে, তেমনি ‘গ্যাড়াকল’–এও দর্শক দেখবেন সম্পর্ক, ন্যায়–অন্যায় আর কর্মফলের এক জটিল অনুসন্ধান।

পোস্টার-ট্রেলারে ভালোবাসা ও বিভ্রম
১২ অক্টোবর প্রকাশিত ‘গ্যাড়াকল’–এর পোস্টারেই যেন লুকিয়ে আছে গল্পের ইঙ্গিত। পোস্টারে দেখা যায় অভিনেত্রী সামিরা খান মাহীকে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে আছেন ইন্তেখাব দিনার ও আবু হুরায়রা তানভীর—তিন চরিত্রের দৃষ্টিতে যেন এক অদৃশ্য ত্রিভুজ। চোখে পড়ার মতো রয়েছে পোস্টারের আলোক–অন্ধকারের খেলা, যা রহস্য, আবেগ ও টানাপোড়েনের আবহ তৈরি করেছে।

১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রকাশ পায় এর ট্রেলার। ট্রেলারে দেখা যায় ক্যাম্পাস, ভালোবাসা, ন্যায়–অন্যায় আর বিভ্রমে জড়ানো কিছু সম্পর্কের টানাপোড়েন। শুরুতেই উচ্চারণ হয় সংলাপ—‘সত্য ততটুকু সত্য নয়, যতটা চোখে দেখা যায়।’ এ সংলাপেই যেন গোটা গল্পের দর্শন ধরা পড়ে। ট্রেলারের ছায়ায় বোঝা যায়, ‘গ্যাড়াকল’ শুধু প্রেম বা অপরাধের গল্প নয়, বরং এক নীরব আত্মসমীক্ষা—জীবনের এমন কিছু ঘটনার গল্প, যা উচ্চারণ করা যায় না, কিন্তু যা থেকে যায় চিরকাল।

গ্যাড়াকল–এর পোস্টার.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ য ড় কল

এছাড়াও পড়ুন:

মেরে আন্দোলন ‘ঠান্ডা’ করার নীতি ছিল শেখ হাসিনার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর লেথাল উইপন বা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন—তাঁর কথোপকথনের বিভিন্ন অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে এটি এখন অকাট্যভাবে প্রমাণিত। মুঠোফোনে কথোপকথনের তিনটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মেরে ফেলে আন্দোলনকে ‘ঠান্ডা’ করার নীতি ছিল শেখ হাসিনার।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর পৃথক আলাপে (মুঠোফোনে) প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারসহ আন্দোলন দমনে বল প্রয়োগের বিভিন্ন নির্দেশনা রয়েছে।

মুঠোফোনে কথোপকথনের (হাসিনা-তাপস, হাসিনা-মাকসুদ ও হাসিনা-ইনু) পৃথক তিনটি অডিও রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ওয়্যারলেসে (বেতার বার্তা) তখন যে বার্তা দিয়েছিলেন, তার রেকর্ডও (অডিও) ট্রাইব্যুনালে শোনানো হয়।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তাপসের সঙ্গে আলাপে শেখ হাসিনা লেথাল উইপন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কমান্ড রেসপনসিবিলিটির (সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের দায়) জায়গায় সব অ্যাভিডেন্স (প্রমাণ) বাদ দিলেও শুধু এই সরাসরি নির্দেশই তাঁর (শেখ হাসিনা) অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

শেখ হাসিনার সঙ্গে মাকসুদ কামালের কথোপকথন প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, খুব পরিষ্কারভাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, র‍্যাব ও বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তাঁর নির্দেশ ও সেটির পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে র‍্যাব ও বিজিবির যে অ্যাকশন (আক্রমণ), সেগুলো বিবেচনায় নিলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কয়েকটি অডিও কথোপকথন, পুলিশের ওয়্যারলেস মেসেজ (বেতার বার্তা) এবং এর সঙ্গে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের সাক্ষ্য বিবেচনায় নিলে লেথাল উইপন ব্যবহারের আদেশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে যায়। আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনের কাছে যায়। তাঁর কাছ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান ও অন্যদের কাছে যায়। এই বার্তা দেওয়ার পর দেখা গেছে, কীভাবে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।

গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের হত্যার জন্য রাস্তার মোড়ে বা থানার সামনে বালুর বস্তা দিয়ে বাংকারসদৃশ ঘাঁটি তৈরি করে তার ওপর এলএমজি (লাইট মেশিনগান) বসানো হয়েছিল বলেও যুক্তিতর্কে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলএমজি হলো মারণাস্ত্র। এটি ছিল শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের বাস্তবায়ন।

আন্দোলনকারীদের শরীর থেকে উদ্ধার করা বুলেট ও পিলেট (ছররা গুলি বা রাবার বুলেট) ট্রাইব্যুনালে এর আগে প্রদর্শন করা হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এসব থেকে খুব পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, অস্ত্রগুলো কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। মারণাস্ত্র ব্যবহার করার আদেশ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার হাজারো ভিডিও রয়েছে। এ সময় ট্রাইব্যুনালে গণ–অভ্যুত্থানের সময়কার কয়েকটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। যার মধ্যে ছিল রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি, রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে ইমাম হাসানকে (তাইম) গুলি করাসহ বেশ কিছু ভিডিও ।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তাতে নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ আছে। প্রতিবেদনের এই অংশ ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর। এর পাশাপাশি তিনি গণ–অভ্যুত্থানের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরার জন্য প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের শিরোনাম পড়ে শোনান। সেই সঙ্গে গণ–অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ছাত্রলীগ (এখন নিষিদ্ধ) নেতা–কর্মী নির্যাতন করেছেন, তাঁদের নাম ও ছবিসহ বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তবে সাবেক আইজিপি মামুন দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটির বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ইনুর মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির সময় বাড়ল

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠনের বিষয়ে শুনানির সময় বাড়ানো হয়েছে। ২৩ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

ট্রাইব্যুনালে ইনুর পক্ষে আইনজীবী নাজনীন নাহার সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। তিনি বলেন, ১ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠার নথিপত্র দেখে তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁদের ৮ সপ্তাহ সময় লাগবে।

পরে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

হানিফকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ চার আসামিকে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২।

এ মামলার অপর তিন আসামি হলেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী ও কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।

গতকাল শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়, এই মামলার চার আসামির কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পরে আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ