মৃত্যুর চার বছর পর জানা গেল তাঁকে খুন করেছিলেন স্বজনেরা
Published: 14th, October 2025 GMT
প্রায় চার বছর আগে বাড়ির পাশে একটি ঝোপ থেকে রফিকুল ইসলামের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তে নামলে স্বজনেরা কোনো সহযোগিতা করছিলেন না। হত্যাকাণ্ডের তিন বছর আট মাস পর একজনকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, জমিজমা–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রফিকুলকে তাঁর আপন ভাই, ভগ্নিপতি, তিন মামা ও মামাতো ভাইয়েরা মিলে হত্যা করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালুকদার। নিহত রফিকুল ইসলাম টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার নাথেরপাড়া গ্রামের প্রয়াত আবদুল খালেকের ছেলে। ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাঁর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত রোববার রাতে নিহত রফিকুলের ভগ্নিপতি মকবুল হোসেনকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গতকাল সোমবার তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের চিফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো.
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালুকদার বলেন, মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পরদিন নিহত রফিকুলের মা ছাহেরা বেওয়া বাদী হয়ে ধনবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইয়ের কাছে। শুরু থেকেই মামলার তদন্তে রফিকুলের পরিবারের লোকজন অসহযোগিতা করতেন। একপর্যায়ে তদন্ত কর্মকর্তা জানতে পারেন, রফিকুলের সঙ্গে তাঁর স্বজনদের বিরোধ ছিল। পরে প্রথাগত ও প্রযুক্তিগত তদন্তের মাধ্যমে ঘটনায় রফিকুলের ভগ্নিপতি মকবুল হোসেনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন এবং জড়িত অন্যদের নাম প্রকাশ করেন।
সালাহউদ্দিন তালুকদার আরও বলেন, আদালতে জবানবন্দিতে মকবুল জানিয়েছেন, মায়ের ওয়ারিশের সম্পত্তি মামাদের কাছে চাওয়া ও এক মামার কয়েকটি গরু চুরি নিয়ে তিন মামা ও মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে রফিকুলের বিরোধ ছিল। জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে আপন ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। তাঁর (মকবুল) ঘর ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য রফিকুলের ওপর তিনিও ক্ষুব্ধ ছিলেন। ঘটনার কয়েক দিন আগে রফিকুলের মামা রেহানের বাড়িতে মকবুল, ভাই হাফিজুল, তিন মামা রেহান, জলিল ও সেকান্দার এবং মামাতো ভাই আলম বৈঠক করেন। সেখানে রফিকুলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন মাদক সেবনের কথা বলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রফিকুলকে তাঁর মামাতো ভাই আলম নির্জন একটি ধানখেতে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর ভগ্নিপতি, ভাই ও মামারা লাঠি দিয়ে রফিকুলকে পেটাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মামাতো ভাই চাপাতি দিয়ে মাথা ও মুখে আঘাত করেন। এতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ পাশের একটি ঝোপে ফেলে রাখেন। তিনি বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উদ দ ন মরদ হ তদন ত মকব ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা কলেজে রাতে মিছিল, উত্তেজনা
ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার দিনভর পক্ষে–বিপক্ষে ব্লকেড কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি শেষে রাতে ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
ঢাকা কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ছাত্রদের একটি মিছিল কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসে দিকে যায়। এ সময় উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রদের ইঙ্গিত করে নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। এ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর আগে উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রকে মারধর ও শিক্ষককে হেনস্তার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করেন ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। এতে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রীরাও সংহতি জানান। তাঁরা কলেজগুলোর স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে মিছিল করেন।
অপর দিকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলনকারী বেশ কিছু ছাত্র ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, স্নাতকের (সম্মান) এক ছাত্রকে মারধর করে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ থেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।
এদিকে শিক্ষক হেনস্তা ও শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারা দেশে সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য অফিসে দিনব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা (শিক্ষক)। বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে কোনো ক্লাস হয়নি।
ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকেরা বিভাগ ছেড়ে শিক্ষক লাউঞ্জে জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ জানান। কলেজের শহীদ মিনারের সামনেও কিছুক্ষণ অবস্থান করেন তাঁরা। এতে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস হোসেনও অংশ নেন।
ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে যাচ্ছে সরকার। প্রস্তাবিত এই কাঠামো নিয়ে কলেজগুলোর শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন।
আরও পড়ুনসায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি ঢাকা কলেজের ছাত্রদের১৩ ঘণ্টা আগে