অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ মাসে (সেপ্টেম্বর ২০২৪—সেপ্টেম্বর ২০২৫) দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৬০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৫০ জন। শুধু বিএনপির অন্তঃকোন্দলে নিহত হয়েছেন ৮৫ জন। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৭ জন।

আজ মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। বরং নানা ধরনের সহিংসতা ও অপরাধের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সহিংসতার বিস্তার

এইচআরএসএসের তথ্যমতে, গত ১৩ মাসে অন্তত ১ হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, সমাবেশকেন্দ্রিক সংঘর্ষ, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখল—এসব কারণেই অধিকাংশ সহিংসতা ঘটেছে।

বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর অন্তঃকোন্দলে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটেছে। শুধু বিএনপির ভেতরেই ৫৩৯টি ঘটনায় দলটির ৮৫ নেতা-কর্মী নিহত ও ৫ হাজার ১৭ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ২২১টি সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৪১ জন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ৪০টি সহিংসতার ঘটনায় ২ জন নিহত হন।

আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে ২০টি ঘটনায় ১ জন এবং আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ২৪টি সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জন নিহত হন। বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে ১৮টি সহিংসতার ঘটনায় আহত হন ১৪০ জন।

ছাত্ররাজনীতিতেও সহিংসতা কমেনি। ছাত্রদলের অন্তঃকোন্দলে ৩৮টি ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ১৭১টি ঘটনায় ১২০ জন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক কার্যালয়, বাড়িঘর, দোকানপাট ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে সাত হাজারের বেশি।

সহিংসতার উল্লেখযোগ্য ঘটনা

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, সুধা সদন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’–কেন্দ্রিক সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যুবদলের কর্মী মো.

সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৯ আগস্ট কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণ অধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির সংঘর্ষের ঘটনায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরদিন সেখানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ৪৬০টি ঘটনায় ৮২ জন, ২০২২ সালে ৭৫৮টি ঘটনায় ৯২ জন এবং ২০২৩ সালে ৯২১টি ঘটনায় ৯৬ জন নিহত হয়েছিলেন। আর গত ১৩ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ জনে।

এইচআরএসএসের দাবি, গুম ও ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা না ঘটলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) সহিংসতা, গণপিটুনি, নারী নির্যাতন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা—এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি করতে না পারলে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহত হয় ছ ন ম নব ধ ক র র ঘটন য় স ঘর ষ ১৩ ম স আওয় ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

আয়ের চেয়ে খরচ বেশি, ১২৫ কোটি টাকা লোকসানে ডেসকো

বড় অঙ্কের লোকসানের কারণে পরপর দুই বছর শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)।

গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিপরীতে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, এ বছরও কোম্পানিটি লোকসান করেছে, যা পরিমাণে ১২৫ কোটি টাকার বেশি।

গত শনিবার ডেসকোর পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানির পর্ষদ সদস্যরা গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ রোববার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লোকসান করার তথ্য ও লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর শেষে ডেসকো ১২৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে। তবে তা আগের বছরের তুলনায় অনেক কম। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডেসকোর লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ডেসকোর লোকসান ৩৮০ কোটি টাকা বা ৭৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি এই কোম্পানিটির বড় ধরনের লোকসানের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কোম্পানিটির আয়ের তুলনায় বেতন-ভাতাসহ প্রশাসনিক খরচ বেশি। এ ছাড়া সুদ পরিশোধসহ বড় অঙ্কের আর্থিক খরচ ও ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে কোম্পানিটির।

* লোকসান ও লভ্যাংশ না দেওয়ার খবরে গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর ৮০ পয়সা বা প্রায় পৌনে ৪% কমে ২১ টাকায় নামে।
* ডেসকো সর্বশেষ ২০২৩ সালে শেয়ারধারীদের ১০% নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বছর কোম্পানিটির বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কমিশনবাবদ আয় করে ৩৫৫ কোটি টাকা। তার বিপরীতে বেতন-ভাতাসহ কোম্পানিটির প্রশাসনিক ব্যয় ছিল ৩৫৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ খরচ ছিল ৩২৫ কোটি টাকা। ওই বছর বেতন-ভাতাসহ কর্মীদের পেছনে কোম্পানিটির খরচ ছিল ২৯২ কোটি টাকা। সুদ পরিশোধসহ অন্যান্য খাত মিলিয়ে আর্থিক খরচের পরিমাণ ছিল ১৮০ কোটি টাকা। এর বাইরে ওই বছর ডলারের বিনিময়মূল্যের কারণে কোম্পানিটির ২৪৩ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। এসব কারণেই মূলত ডেসকোকে কয়েক বছর ধরে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই লোকসানের পরিণতি সাধারণ শেয়ারধারীদেরও ভোগ করতে হচ্ছে। কারণ, কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করে দুই বছর ধরে কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না তাঁরা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৩ সালে শেয়ারধারীদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

এদিকে লভ্যাংশ না দেওয়ায় ও লোকসানের খবরে রোববার কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এ দিন ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৮০ পয়সা বা প্রায় পৌনে ৪ শতাংশ কমে ২১ টাকায় নেমে আসে। ৩৯৭ কোটি টাকা মূলধনের এই কোম্পানির শেয়ারের ৬৭ শতাংশের মালিকানা রয়েছে সরকারের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪ শতাংশ ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রায় ৯ শতাংশ শেয়ার আছে।

পরপর দুই বছর শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি মালিকানাধীন এই কোম্পানিকে আজ সোমবার থেকে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হচ্ছে। ফলে আজ থেকে কোম্পানিটির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি এই শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তিতেও বেশি সময় লাগবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত 
  • ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স
  • ২০২৬ সালের নির্বাচন কেবল একটি তারিখ নয়
  • রাকসু নির্বাচন : নবীনবরণ ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারণা, এক প্রার্থী দিলেন শিউলি ফুল
  • বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ
  • দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না
  • ১০% নগদ লভ্যাংশ দেবে বিডি ল্যাম্পস
  • আয়ের চেয়ে খরচ বেশি, ১২৫ কোটি টাকা লোকসানে ডেসকো