বরকত শব্দটির আরবি ‘বারাকাহ’। এর অর্থ ‘আশীর্বাদ’, ‘প্রাচুর্য’ বা ‘কল্যাণ বৃদ্ধি’। এর দ্বারা বোঝানো হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো কিছুতে বরকত বা কল্যাণ দেওয়া, যা অল্প সময়েই অধিক ফল দেয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটি আধ্যাত্মিক শক্তি ও সমৃদ্ধির একটি ধারণা; যা জীবন, সম্পদ, স্বাস্থ্য বা সময়ের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে হতে পারে।
অল্প চেষ্টায় কোনো কিছু লাভ করা বা দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কিছু অটুট থাকলে তাকেও বরকত বলা হয়।
জীবনে উন্নতি ও শান্তির জন্য অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করেন, বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেন। তবু মনে হয় ঘরে যেন কোনো বরকত নেই, বরকত পাওয়া যাচ্ছেই না। আয়ে, শান্তিতে, এমনকি ভালো কাজেও কোনো ফল আসছে না। তখন তাঁরা ভীষণ দুঃখিত ও হতাশ হয়ে পড়েন।
আসলে বরকত মানে তো শুধু কঠোর পরিশ্রম করার ফল বা কোনো কিছু পরিমাণে অধিক হওয়াই নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির ফলে কল্যাণের মাধ্যমে সেগুলো বৃদ্ধি পাওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে থাকাই বরকত।আসলে বরকত মানে তো শুধু কঠোর পরিশ্রম করার ফল বা কোনো কিছু পরিমাণে অধিক হওয়াই নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির ফলে কল্যাণের মাধ্যমে সেগুলো বৃদ্ধি পাওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে থাকাই বরকত।
যে বিষয়গুলো আল্লাহ পছন্দ করেন, সেগুলোর মাধ্যমেই জীবনে বরকত আসে। যেসব উপায়ে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং রাসুল (সা.
নিচে শরিয়াহসম্মতভাবে বরকত লাভের কিছু উপায় জানা যাক।
১. কথার মাধ্যমে বরকত: কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরের মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন পাঠ করো, কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১০)।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ঘরে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, সেখানে প্রশান্তি ও বরকত নাজিল হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৯৬)
আরও পড়ুনসকালে ঘুম থেকে জেগে নবীজি (সা.)-এর ৭ আমল১৫ অক্টোবর ২০২৫২. কাজের মাধ্যমে বরকত: ইলম অর্জন করা ও তার ওপর আমল করার মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৯৯)।
৩. অবস্থার মাধ্যমে বরকত: একসঙ্গে বসে খাওয়া ও ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করার মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। ওহশি ইবনে হারব (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমরা খাই, কিন্তু পেট ভরে না।’
তিনি বললেন, ‘তোমরা একত্রে বসে “বিসমিল্লাহ” বলে আহার করো, তাহলে তাতে তোমাদের জন্য বরকত দান করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৭৬৪)
৪. স্থানে বরকত: মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি, মসজিদুল আকসা, মক্কা, মদিনা, মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া, ইতিকাফ করা, ইলমি মজলিশে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বরকত আশা করা।
যে ঘরে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, সেখানে প্রশান্তি ও বরকত নাজিল হয়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৯৬আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক নামাজ মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর মসজিদে হারামে (কাবার মসজিদে) একটি নামাজ অন্যান্য মসজিদে এক লাখ নামাজ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৪০৬)
৫. সময়ে বরকত: সময় দ্বারা বরকতের আশা করা মানে যেগুলোকে শরিয়তে বিশেষ ফজিলত, বরকত ও গুনাহ মাফ ইত্যাদি বিশেষণ দ্বারা বিশেষিত করা হয়েছে।
যেমন লায়লাতুল কদর, রমাদানের শেষ দশক, জিলহজ মাসের প্রথম দশক, জুমার দিন, প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, ফজরের পর ইত্যাদি দিন আর সময়গুলো। এদিন আর সময়গুলোতে ইবাদতের মাধ্যমে প্রচুর বরকত পাওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে বরকতের অনুসন্ধান করতে হবে শুধু রাসুল (সা.)–এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমেই।
আল্লাহ কদরের রাত সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে...’ (সুরা দুখান, হাদিস: ৪৪:৩)।
এ ছাড়া রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের জন্য সকালবেলার বরকতের দোয়া করতেন। সাখ্র ইবনে ওয়াদাআহ গামেদি (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার উম্মতের জন্য সকালকে বরকতময় করুন।’
আল্লাহর রাসুল যখন কোথায় সৈন্যদলকে অভিযানে পাঠাতেন, তখন তাদের সকালে রওনা করতেন। সাখ্র ছিলেন ব্যবসায়ী। সুতরাং তিনি তাঁর ব্যবসার পণ্য সকালেই প্রেরণ করতেন। ফলে তিনি (এর বরকতে) ধনী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মাল প্রচুর হয়েছিল। (আবু দাউদ, হাদিস: ২,৬০৮; তিরমিজি, হাদিস: ১,২১২; সহিহ তারগিব, হাদিস: ১,৬৯৩)
তাই যে ব্যক্তি ভোরে উঠে কাজে লেগে যায়, তার কাজে আল্লাহ বরকত দান করেন।
আরও পড়ুনবরকতের শত্রু অহংকার২২ জুন ২০২৫৬. খাদ্যে বরকত: জয়তুন তেল, মধু, দুধ, কালিজিরা ও জমজমের পানি—এগুলো গ্রহণের মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। জমজমের পানি রোগ নিরাময়ের উপকরণ ও বরকতময়। রাসুল (সা.) জমজমের পানি সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয় তা বরকতময়’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৪৭৩)।
নবীজি (সা.) কালিজিরা সম্পর্কে বলেছেন, ‘তোমরা এই কালিজিরা নিজেদের জন্য ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করে নাও। কেননা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় এর মধ্যে রয়েছে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৪৪৭)
এভাবে মধু নিয়ে ও অন্যান্য খাবার নিয়েও পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
আল্লাহর রাসুল যখন কোথায় সৈন্যদলকে অভিযানে পাঠাতেন, তখন তাদের সকালে রওনা করতেন।৭. পশুর মাধ্যমে বরকত: আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৬৫২)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) আরও বলেন, ‘...যে ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখে এবং চারণভূমি বা বাগানে প্রশস্ত রশিতে বেঁধে বিচরণ করতে দেয়, এই রশি যত প্রশস্ত এবং যত দূরত্বে ঘোড়া বিচরণ করতে পারে, সে তত বেশি প্রতিদান পায়। যদি ঘোড়া এ রশি ছিঁড়ে এক চক্কর অথবা দুটি চক্কর দেয়, তবে ওই ঘোড়ার প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতিদান দেওয়া হয়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৮৫৪)।
৮. বৃক্ষের মাধ্যমে বরকত: বৃক্ষরোপণ বা গাছ লাগানো একটি পুণ্যের কাজ। গাছের ফল কোনো মানুষ, পশু বা পাখি খেলে তার জন্য রোপণকারী সওয়াব ও বরকত পাবে। কারণ, এটি শুধু খাদ্যের উৎস নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কল্যাণের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম গাছ লাগায় অথবা কোনো ফসল বুনে আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সাদকা হিসেবে গণ্য হয়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৩২০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৫৫৩)।
এ ছাড়া কোরআন ও হাদিসে বেশ কিছু ফলের উল্লেখ আছে, যেমন ডালিম, খেজুর, আঙুর, ডুমুর, জলপাই ইত্যাদি। পবিত্র গ্রন্থে এগুলোর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা বলা হয়েছে।
খেজুর হলো বহুগুণে গুণান্বিত বরকতময় একটি ফল। ইফতারে খেজুর রাখা সুন্নাহ। এ ছাড়া সাহ্রিতে খেজুর খাওয়াকে ‘শ্রেষ্ঠ সাহ্রি’ বলা হয়েছে, যা ইবাদতের কাজে সহায়ক হয়। খেজুরগাছ আবাদ করার মাধ্যমেও আল্লাহর কাছে বরকতের আশা করা যায়।
উপরিউক্ত মাধ্যমগুলোতে আমরা দেখতে পাই, আমাদের জীবনে বরকত খুঁজে পাওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো উত্তম নিয়ত ও শরিয়াহসম্মত পদ্ধতি।
সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে করলেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হব। আমাদের ঘরে শান্তি, আর আয়ে, সম্পদে বরকত আসবে।
আরও পড়ুনসকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল৩১ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সন ত ষ ট র কল য ণ র ত র জন য র জন য স ক রআন ত ও বরকত বরকত ন বরকত র আল ল হ বল ছ ন করত ন মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
জীবনে বরকত লাভের ৮ উপায়
বরকত শব্দটির আরবি ‘বারাকাহ’। এর অর্থ ‘আশীর্বাদ’, ‘প্রাচুর্য’ বা ‘কল্যাণ বৃদ্ধি’। এর দ্বারা বোঝানো হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো কিছুতে বরকত বা কল্যাণ দেওয়া, যা অল্প সময়েই অধিক ফল দেয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটি আধ্যাত্মিক শক্তি ও সমৃদ্ধির একটি ধারণা; যা জীবন, সম্পদ, স্বাস্থ্য বা সময়ের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে হতে পারে।
অল্প চেষ্টায় কোনো কিছু লাভ করা বা দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কিছু অটুট থাকলে তাকেও বরকত বলা হয়।
জীবনে উন্নতি ও শান্তির জন্য অনেকেই কঠোর পরিশ্রম করেন, বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেন। তবু মনে হয় ঘরে যেন কোনো বরকত নেই, বরকত পাওয়া যাচ্ছেই না। আয়ে, শান্তিতে, এমনকি ভালো কাজেও কোনো ফল আসছে না। তখন তাঁরা ভীষণ দুঃখিত ও হতাশ হয়ে পড়েন।
আসলে বরকত মানে তো শুধু কঠোর পরিশ্রম করার ফল বা কোনো কিছু পরিমাণে অধিক হওয়াই নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির ফলে কল্যাণের মাধ্যমে সেগুলো বৃদ্ধি পাওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে থাকাই বরকত।আসলে বরকত মানে তো শুধু কঠোর পরিশ্রম করার ফল বা কোনো কিছু পরিমাণে অধিক হওয়াই নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির ফলে কল্যাণের মাধ্যমে সেগুলো বৃদ্ধি পাওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে থাকাই বরকত।
যে বিষয়গুলো আল্লাহ পছন্দ করেন, সেগুলোর মাধ্যমেই জীবনে বরকত আসে। যেসব উপায়ে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে বরকত অর্জনের চেষ্টা করা হয়, সেগুলোই হচ্ছে শরিয়াহসম্মত বরকত।
নিচে শরিয়াহসম্মতভাবে বরকত লাভের কিছু উপায় জানা যাক।
১. কথার মাধ্যমে বরকত: কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরের মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন পাঠ করো, কেননা কিয়ামতের দিন কোরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হয়ে আসবে’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১০)।
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ঘরে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, সেখানে প্রশান্তি ও বরকত নাজিল হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৯৬)
আরও পড়ুনসকালে ঘুম থেকে জেগে নবীজি (সা.)-এর ৭ আমল১৫ অক্টোবর ২০২৫২. কাজের মাধ্যমে বরকত: ইলম অর্জন করা ও তার ওপর আমল করার মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৯৯)।
৩. অবস্থার মাধ্যমে বরকত: একসঙ্গে বসে খাওয়া ও ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করার মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। ওহশি ইবনে হারব (রা.) থেকে বর্ণিত, সাহাবাগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমরা খাই, কিন্তু পেট ভরে না।’
তিনি বললেন, ‘তোমরা একত্রে বসে “বিসমিল্লাহ” বলে আহার করো, তাহলে তাতে তোমাদের জন্য বরকত দান করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৭৬৪)
৪. স্থানে বরকত: মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি, মসজিদুল আকসা, মক্কা, মদিনা, মসজিদে জামাতে নামাজ পড়া, ইতিকাফ করা, ইলমি মজলিশে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বরকত আশা করা।
যে ঘরে কোরআন তিলাওয়াত করা হয়, সেখানে প্রশান্তি ও বরকত নাজিল হয়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৯৬আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক নামাজ মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার নামাজ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর মসজিদে হারামে (কাবার মসজিদে) একটি নামাজ অন্যান্য মসজিদে এক লাখ নামাজ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১,৪০৬)
৫. সময়ে বরকত: সময় দ্বারা বরকতের আশা করা মানে যেগুলোকে শরিয়তে বিশেষ ফজিলত, বরকত ও গুনাহ মাফ ইত্যাদি বিশেষণ দ্বারা বিশেষিত করা হয়েছে।
যেমন লায়লাতুল কদর, রমাদানের শেষ দশক, জিলহজ মাসের প্রথম দশক, জুমার দিন, প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, ফজরের পর ইত্যাদি দিন আর সময়গুলো। এদিন আর সময়গুলোতে ইবাদতের মাধ্যমে প্রচুর বরকত পাওয়া যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে বরকতের অনুসন্ধান করতে হবে শুধু রাসুল (সা.)–এর নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমেই।
আল্লাহ কদরের রাত সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি বরকতময় রাতে...’ (সুরা দুখান, হাদিস: ৪৪:৩)।
এ ছাড়া রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের জন্য সকালবেলার বরকতের দোয়া করতেন। সাখ্র ইবনে ওয়াদাআহ গামেদি (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার উম্মতের জন্য সকালকে বরকতময় করুন।’
আল্লাহর রাসুল যখন কোথায় সৈন্যদলকে অভিযানে পাঠাতেন, তখন তাদের সকালে রওনা করতেন। সাখ্র ছিলেন ব্যবসায়ী। সুতরাং তিনি তাঁর ব্যবসার পণ্য সকালেই প্রেরণ করতেন। ফলে তিনি (এর বরকতে) ধনী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মাল প্রচুর হয়েছিল। (আবু দাউদ, হাদিস: ২,৬০৮; তিরমিজি, হাদিস: ১,২১২; সহিহ তারগিব, হাদিস: ১,৬৯৩)
তাই যে ব্যক্তি ভোরে উঠে কাজে লেগে যায়, তার কাজে আল্লাহ বরকত দান করেন।
আরও পড়ুনবরকতের শত্রু অহংকার২২ জুন ২০২৫৬. খাদ্যে বরকত: জয়তুন তেল, মধু, দুধ, কালিজিরা ও জমজমের পানি—এগুলো গ্রহণের মাধ্যমে বরকত পাওয়া যায়। জমজমের পানি রোগ নিরাময়ের উপকরণ ও বরকতময়। রাসুল (সা.) জমজমের পানি সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয় তা বরকতময়’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৪৭৩)।
নবীজি (সা.) কালিজিরা সম্পর্কে বলেছেন, ‘তোমরা এই কালিজিরা নিজেদের জন্য ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করে নাও। কেননা মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় এর মধ্যে রয়েছে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৪৪৭)
এভাবে মধু নিয়ে ও অন্যান্য খাবার নিয়েও পবিত্র কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
আল্লাহর রাসুল যখন কোথায় সৈন্যদলকে অভিযানে পাঠাতেন, তখন তাদের সকালে রওনা করতেন।৭. পশুর মাধ্যমে বরকত: আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৬৫২)
আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) আরও বলেন, ‘...যে ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখে এবং চারণভূমি বা বাগানে প্রশস্ত রশিতে বেঁধে বিচরণ করতে দেয়, এই রশি যত প্রশস্ত এবং যত দূরত্বে ঘোড়া বিচরণ করতে পারে, সে তত বেশি প্রতিদান পায়। যদি ঘোড়া এ রশি ছিঁড়ে এক চক্কর অথবা দুটি চক্কর দেয়, তবে ওই ঘোড়ার প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতিদান দেওয়া হয়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৮৫৪)।
৮. বৃক্ষের মাধ্যমে বরকত: বৃক্ষরোপণ বা গাছ লাগানো একটি পুণ্যের কাজ। গাছের ফল কোনো মানুষ, পশু বা পাখি খেলে তার জন্য রোপণকারী সওয়াব ও বরকত পাবে। কারণ, এটি শুধু খাদ্যের উৎস নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও কল্যাণের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম গাছ লাগায় অথবা কোনো ফসল বুনে আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সাদকা হিসেবে গণ্য হয়’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২,৩২০; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৫৫৩)।
এ ছাড়া কোরআন ও হাদিসে বেশ কিছু ফলের উল্লেখ আছে, যেমন ডালিম, খেজুর, আঙুর, ডুমুর, জলপাই ইত্যাদি। পবিত্র গ্রন্থে এগুলোর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা বলা হয়েছে।
খেজুর হলো বহুগুণে গুণান্বিত বরকতময় একটি ফল। ইফতারে খেজুর রাখা সুন্নাহ। এ ছাড়া সাহ্রিতে খেজুর খাওয়াকে ‘শ্রেষ্ঠ সাহ্রি’ বলা হয়েছে, যা ইবাদতের কাজে সহায়ক হয়। খেজুরগাছ আবাদ করার মাধ্যমেও আল্লাহর কাছে বরকতের আশা করা যায়।
উপরিউক্ত মাধ্যমগুলোতে আমরা দেখতে পাই, আমাদের জীবনে বরকত খুঁজে পাওয়ার মূল চাবিকাঠি হলো উত্তম নিয়ত ও শরিয়াহসম্মত পদ্ধতি।
সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে করলেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হব। আমাদের ঘরে শান্তি, আর আয়ে, সম্পদে বরকত আসবে।
আরও পড়ুনসকালের সবচেয়ে বরকতময় সময় ব্যবহারের ৭ কৌশল৩১ জুলাই ২০২৫