জাতীয়করণের দাবিতে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কর্মসূচি চলছে, মন্ত্রণালয়ে গেছে প্রতিনিধিদল
Published: 23rd, October 2025 GMT
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১তম দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘটের কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষকেরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের ডাকা হয়েছে। একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের বিষয়ে সরকারের আশ্বাসের নয় মাস পেরিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন কর্মসূচিতে থাকা শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেন, আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করাকে তাঁরা প্রতারণা মনে করছেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা মাদ্রাসাশিক্ষকেরা নানা স্লোগান দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে—‘প্রাইমারি জাতীয়করণ, আমরা কেন বিনা বেতন’, ‘অবহেলার ৪০ বছর, মানুষ বাঁচে কত বছর’, ‘চাকরি আছে বেতন নাই, এমন কোনো দেশ নাই’।
তিন বছরের ছোট্ট শিশুসন্তান শায়ানকে নিয়ে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে কর্মসূচিতে এসেছেন শিক্ষক শিউলি আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১১ দিন ধরে আন্দোলনে আছি। ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে আসছি। সরকার তো আমাদের কষ্ট বোঝে না। তা যদি বুঝত, তাহলে অবশ্যই জাতীয়করণ দিয়ে দিত। আর কত কষ্ট করব? আর ভালো লাগতেছে না আমাদের। আমাদের দাবিগুলো সরকার মেনে নিক।’
‘চক্রান্তের’ কারণে জাতীয়করণের বিষয়টি আটকে আছে বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক।
বগুড়ার শাহজাহানপুর থেকে এসেছেন দারুস সালাম স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে আমরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আমাদের বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেউ বাস্তবায়ন করেনি। সবশেষ এই সরকারও আমাদের জাতীয়করণের আশ্বাস দিয়ে বাস্তবায়ন করছে না। আমাদের আবার রাস্তায় নামতে হলো।’
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্য জোট আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কেউ তাঁদের সঙ্গে কথা বলেনি। তাঁদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। আজ তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। এখন মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের ডেকেছে। শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল রওনা দিয়ে গেছে। তাঁরা দেখবেন, সমাধান পান কি না। গেজেট না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা।
শরীয়তপুরের জাজিরার বরকান্দিয়া ইয়াদ আলী ইসলামিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আলী আকবর বলেন, প্রথম ধাপে ৩১৫টি মাদ্রাসা জাতীয়করণ, ১ হাজার ৮৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তকরণের জন্য কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই করা হয়নি।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, সরকার আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষকেরা হতাশ। অতি দ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকেরা বিভিন্ন দাবি জানান। এগুলোর মধ্যে আছে—অনুদানভুক্ত ও অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন। ১ হাজার ৮৯টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের লক্ষ্যে যাচাই-বাছাইকৃত ফাইল দ্রুত অনুমোদন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় প্রাক-প্রাথমিক পদ সৃষ্টি। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বতন ত র ইবত দ য় জ ত য়করণ র আম দ র প রথম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এবার দাবি নিয়ে রাজধানীর সড়কে ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা, যান চলাচল বন্ধ
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীর পল্টন–প্রেসক্লাব সড়কে বসে অবস্থান নিয়েছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আজ বুধবার বেলা পৌনে একটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা। কিছুদূর যাওয়ার পর পুলিশ বাধা দিলে শিক্ষকেরা সড়কে বসে অবস্থান নিলে পল্টন–প্রেসক্লাব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গত জানুয়ারিতে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকেরা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়। কিন্তু ওই ঘোষণার পর এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়নি। এ কারণে জাতীয়করণ ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে আবার সড়কে নেমেছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা।
অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা তিন দফা দাবিতে টানা কয়েক দিন রাজধানীতে আন্দোলন করেছেন। আর এবার ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে রাস্তায় নামলেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির দশপাকিয়া থেকে আজ আন্দোলনে এসেছেন শিক্ষক নাইমা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪১ বছর ধরে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হয়নি। সবাই নাটক করেছে। বাংলাদেশের এমন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান নেই যে নাটক করেননি। আড়াই মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আমাদের ফাইল পড়ে আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি কাজী মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রতিহিংসার কারণে আবার তাঁদেরকে সড়কে আসতে হয়েছে। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে জাতীয়করণের কাজটা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, ২৮ জানুয়ারি কারিগরি বিভাগের যুগ্ম সচিব মাসুদুর রহমান সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেন, সব ইবতেদায়ি মাদ্রাসা পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। অনেক মাস অতিবাহিত হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ তো দূরের কথা, এমপিওভুক্ত করা হয়নি। টালবাহানা শুরু হয়েছে।
গত জানুয়ারির ঘোষণা বাস্তবায়ন করে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে বলে জানিয়েছেন এই শিক্ষকনেতা।
আরও পড়ুনবাড়িভাড়া বাড়ানোর পর শ্রেণিকক্ষে ফেরার ঘোষণা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের২১ অক্টোবর ২০২৫