নির্বাচন পেছানোর চেষ্টায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল: মির্জা ফখরুল
Published: 23rd, October 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে পিছিয়ে যায়, সেই চেষ্টা কোনো কোনো রাজনৈতিক দল চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এই মন্তব্য করেন।
‘মহাকালের মহানায়ক শহীদ জিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বিএনপি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন যেন পিছিয়ে যায়, নির্বাচন যেন সঠিক সময় না হয়, তার চেষ্টা করছে।’
নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার এই চেষ্টা ঠিক হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, কারণ এখন দরকার অতি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক সরকার। কারণ দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষাসহ সবকিছু নির্ভর করছে একটি নির্বাচিত সরকারের ওপর।
সংস্কারকাজ এগিয়ে নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অল্প সময়ের মধ্যে অন্তত কিছু সংস্কারের কাজ শেষ করতে পেরেছে। এটা প্রয়োজন ছিল।
বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখার প্রসঙ্গ টানেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, সবকিছু মিলিয়ে বিএনপির জন্ম সংস্কারের মধ্যে। সংস্কারের মধ্য দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, জনগণের মৌলিক স্বাধীনতা, মেয়েদের লেখাপড়া, চাকরি দেওয়া, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা—সবই তো বিএনপির করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, অথচ এমনভাবে কথা বলা হয় যে, বিএনপি ‘ভিলেন’। কিছু কিছু লোক বলার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে যা কিছু ভালো হয়েছে, সব বিএনপির হাত দিয়ে হয়েছে। জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে হয়েছে। খালেদা জিয়ার হাত দিয়ে হয়েছে। কেউ কেউ ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সব কথাবার্তা বলেন-লেখেন, তা শুনে তাঁর (মির্জা ফখরুল) দুঃখ হয়, কষ্টও হয়। তাঁর মনে হয়, এদের একবার চিন্তা করা উচিত, সত্য প্রকাশ করা উচিত।
বাংলাদেশ থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের মাজার পর্যন্ত তুলে নিয়ে যাবে, তাঁর নামগন্ধ থাকবে না—এমন সব চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। তাঁকে মুছে ফেলা যাবে না।সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীন সফরের স্মৃতি রোমন্থন করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, যখন চীনা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে খালেদা জিয়া আসছেন পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য, তারেক রহমান তখন উপস্থিত ছিলেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী সামনে এসে বললেন, ‘মাই সান’। চীনের প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানের হাত শক্ত করে ধরে বললেন, ‘ক্যারি দ্য ফ্ল্যাগ অব ইয়োর ফাদার অ্যান্ড মাদার’। আজ তারেক রহমান সেই পতাকা তুলেছেন, যে পতাকা হচ্ছে স্বাধীনতার পতাকা। যে পতাকা হচ্ছে এই দেশের মানুষের অধিকারের পতাকা। গণতন্ত্রের পতাকা, উন্নয়নের পতাকা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নিশ্চয়ই এই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করব। এবং গণতন্ত্রকে আরও উজ্জীবিত করব। অর্থনীতিকে গণতান্ত্রিকীকরণ করব।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ৬৪০ পৃষ্ঠার নতুন সংকলিত গ্রন্থটিতে মোট ১৩টি অধ্যায় আছে। একটি অধ্যায়ে ‘আমার বাবা’ শীর্ষক তারেক রহমানের লেখা আছে।
বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ার উল্লাহ্ চৌধুরী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর পাভেল প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য় উর রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র ম র জন ত ক অন ষ ঠ ন রহম ন র সরক র ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
পরপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না, জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পরপর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের জনগণের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একটা বড় ধরনের সিরিজ নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে, জনগণ এমনটা মনে করছে। জনগণের মনে এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ‘সিরিজ অব ইনসিডেন্ট’ যখন হয়, তখন বুঝতে হবে, এখানে কোনো না কোনো কালো হাত কাজ করছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ ঠিকমতো চলছে না—এটা আন্তর্জাতিকভাবে দেখানোর জন্য দেশি-বিদেশি শক্তির হাত থাকতে পারে।
আজ সোমবার দুপুরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ফুলমুড়ি গ্রামে দৃষ্টিহীন গায়ক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর আলম নামের দৃষ্টিহীন ওই ব্যক্তির গান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হয় বিষয়টি। তিনি ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনকে দৃষ্টিহীন জাহাঙ্গীর আলমের খোঁজখবর নেওয়ার দায়িত্ব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে আসেন বিএনপির নেতারা। এ সময় জাহাঙ্গীরের পরিবারকে আর্থিক অনুদান তুলে দেয় সংগঠনটি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র নয়, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান একটি জ্বালানি। এই যে গাড়িতে চাকা আছে, ইঞ্জিন আছে, সব আছে, কিন্তু জ্বালানি না হলে কি গাড়ি চলবে? তেল ছাড়া গাড়ি চলবে না। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের জ্বালানিশক্তি, এটা ছাড়া গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে না। প্রকৃত গণতন্ত্র, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, মানুষের ভোটের অধিকার, নাগরিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, নির্ভয়ে পরিবারের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার হাসিনা কেড়ে নিয়েছিলেন। এখন সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। আমরা সেই গণতন্ত্রের সুবাতাস বইয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছি।’
পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশের মানুষ পিআর বোঝে না, আমরাও বুঝি না। এখন যাঁরা পিআর পিআর করছেন, তাঁরা এক বছর আগে, দুই বছর আগে, পাঁচ বছর আগে বলেননি কেন? আপনি এখন কেন এটা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন? জনগণ জানে, তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে তারা ভোট দেবে। পছন্দমতো প্রার্থীকে তো জনগণের চিনতে হবে—তাদের এলাকার এমপি হবেন কে? আপনি চিনলেন না, ভোট দিলেন একটি মার্কায়। তারপর হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, অমুক লোক আপনাদের এমপি। আপনাদের ভালো লাগবে? কিন্তু কিছু কিছু দল এটা নিয়ে আসছে—আনুপাতিক নির্বাচন। পিআর হলো জনগণের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা করা, বিভ্রান্তি তৈরি করা, জনগণের মনকে অন্য দিকে সরিয়ে দেওয়া। জনগণ এটা কখনোই মেনে নেবে না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর-রশিদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মাহমুদ, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা প্রমুখ।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলার চান্দিনা উপজেলার এতবারপুরে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ইমাম হাসান ভূঁইয়ার কবর জিয়ারত করেন রুহুল কবির রিজভী। জিয়ারত শেষে শহীদের বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং আমরা বিএনপি পরিবারের পক্ষ থেকে চেক প্রদান করেন।