পশ্চিম তীর দখলে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে বিল অনুমোদন, কাতার–সৌদি আরব–জর্ডানের নিন্দা
Published: 23rd, October 2025 GMT
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে একটি বিলে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কার্যত দখল বা সংযুক্তিকরণের সমান এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর লিকুদ দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১২০ সদস্যের নেসেটে গত মঙ্গলবার ২৫–২৪ ভোটে বিলটি অনুমোদিত হয়। বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার আগে মোট চার ধাপের ভোটাভুটির প্রথম ধাপ এটি।
নেসেটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জুদিয়া ও সামারিয়া (পশ্চিম তীরের) অঞ্চলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করার জন্য বিলটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এখন বিষয়টি আরও আলোচনার জন্য নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে যাবে।
এ ভোট এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ইসরায়েলকে অধিকৃত পশ্চিম তীর দখল করার অনুমতি দেবেন না। আবার ভোটের দিনই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফর করছিলেন।
এক বিবৃতিতে লিকুদ দল এ ভোটকে তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্টের লক্ষ্যে বিরোধী দলের আরেক উসকানি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এ ভোট এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ইসরায়েলকে অধিকৃত পশ্চিম তীর দখল করার অনুমতি দেবেন না। আবার ভোটের দিনই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফর করছিলেন।দলের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সত্যিকার সার্বভৌমত্ব কাগজে–কলমে চোখধাঁধানো কোনো আইন পাসের মাধ্যমে নয়; বরং কার্যক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজের মাধ্যমেই অর্জিত হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, অধিকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার অর্থ হলো, কার্যত জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত ইসরায়েল–ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে শেষ করে দেওয়া।
আরও পড়ুনপশ্চিম তীরে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস করছে ইসরায়েল, ‘নতুন নাকবা’র ছায়া দেখছেন ফিলিস্তিনিরা১৬ অক্টোবর ২০২৫লিকুদ দলের সদস্যের সিদ্ধান্তমূলক ভোটপ্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জোটের অংশীদার জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গভিরের নেতৃত্বাধীন জিউইশ পাওয়ার এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের নেতৃত্বাধীন রিলিজিয়াস জায়োনিজম দলের কিছু সদস্য বিলটির পক্ষে ভোট দেন।
‘জনগণ ইতিমধ্যে তাদের মত দিয়েছে’, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন স্মোট্রিচ। তিনি আরও লেখেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার জুদিয়া ও সামারিয়ার সম্পূর্ণ ভূখণ্ডে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে এবং শক্ত অবস্থানে থেকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
জনগণ ইতিমধ্যে তাদের মত দিয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার জুদিয়া ও সামারিয়ার সম্পূর্ণ ভূখণ্ডে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে এবং শক্ত অবস্থানে থেকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।বেজালেল স্মোট্রিচ, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রীবিলটি উত্থাপন করেছিলেন কট্টর দক্ষিণপন্থী নোআম পার্টির নেতা আভি মাওজ। তাঁর দল সরকারে নেই। বেশির ভাগ লিকুদ সদস্য ভোটে অংশ নেননি বা ভোটে উপস্থিত ছিলেন না। তবে দলটির একজন সদস্য ইউলি এডেলস্টাইন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অবস্থান উপেক্ষা করে বিলের পক্ষে ভোট দেন।
পরে এডেলস্টাইন এক্সে লেখেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের মাতৃভূমির সর্বত্র ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করাই সময়ের দাবি।’
বিরোধী দলের প্রস্তাবিত আরেকটি বিল নেসেটে পাস হয়েছে। পশ্চিম তীরের মালে আদুমিম নামের একটি ইসরায়েলি বসতি সংযুক্ত করা নিয়ে বিলটি উত্থাপন করা হয়।
পশ্চিম তীরের বেদুইন গ্রামে ধ্বংসাবশেষের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন এক ফিলিস্তিনি। গ্রামটির কাছে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা একটি তল্লাশি ফাঁড়ি বসালে সেখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা পালিয়ে যান.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র অন ম দ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
লালমনিরহাটে সারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় সারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। সার না পাওয়ায় দিশেহারা চাষিরা রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মেডিকেল মোড় গোল চত্বর এলাকায় সার বিক্রয় কেন্দ্র ‘মেসার্স ওয়াছেক খান সার ঘরের’ সামনে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
লালমনিরহাটে ভুট্টার চাষাবাদ মৌসুম শুরু হয়েছে। জেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয় হাতীবান্ধা উপজেলায়। চাষের শুরুতে সার সংকটের খবরে চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সার না পাওয়ায় গত সপ্তাহেও উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ করে ডিলার ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেন। প্রতিশ্রুতির পরেও কাঙ্ক্ষিত সার না পেয়ে কৃষকরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো মহাসড়ক অবরোধে নামে।
আরো পড়ুন:
৬ লেনের দাবিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ
ফরিদপুরে বাসচাপায় কলেজছাত্রী নিহত
হাতীবান্ধা উপজেলা সদরে সিন্ধুর্না ইউনিয়নের বিসিআইসির পরিবেশক ‘মেসার্স ওয়াছেক খান সার ঘর থেকে সার বিক্রি করা হয়। কয়েক দিন ধরে সার না পেয়ে কৃষকরা হতাশ ছিলেন। বিক্রয়কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, রবিবার সকালে সিন্ধুর্না ইউনিয়নের চাষিদের কাছে সার বিক্রি করা হবে। এই প্রচারে সকাল থেকে উপজেলার সিন্ধুর্না ইউনিয়নের কৃষকেরা বিক্রয়কেন্দ্রে ভিড় জমায় এবং ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। তবে কয়েকজন কৃষককে তাদের চাহিদামতো সার দেওয়ার পর বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, তানজিলা আক্তার ও গোবিন্দ কুমারের সহযোগিতায় পরিবেশক সার খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কৃষকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং পরিবেশক ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি জানান।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা, সিন্ধুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর ইসলাম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা সেখানে পৌঁছান। প্রায় তিন ঘণ্টা পরে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পর্যাপ্ত সার সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষুব্ধ কৃষকরা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেন।
চর সিন্ধুর্না গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘ইউরিয়া সার দরকার। কয়েক দিন ধরে ঘুরছি, তারপরও সার পাইনি। কৃষি অফিসের লোকদের সহযোগিতায় ডিলাররা বাইরে বেশি দামে সার বিক্রি করছে। সার না পেলে ভুট্টার আবাদ নষ্ট হবে।’’
অপর কৃষক আফজাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘সারের জন্য বারবার ডিলারের কাছে যাচ্ছি, তবু সার পাই না। খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে ডিলাররা। এই দুর্নীতি আর চলতে পারে না। ডিলার আর কৃষি কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই।’’
কৃষক সমশের বলেন, ‘‘ভুট্টা খেতে এখনই সার দেওয়ার সময়। আজ কালকের মধ্যে সার না পেলে রোপণ করাই সম্ভব হবে না। আমার মতো অনেক কৃষক সার পাচ্ছে না। এবারের ভুট্টার আবাদ কী হবে আল্লাহ্ই জানেন।’’
মেসার্স ওয়াছেক খান সার ঘরের স্বত্বাধিকারী মো, ওয়াছেক খান মুঠোফোনে বলেন, ‘‘কৃষি অফিসের লোকজনের উপস্থিতি ছাড়া সার বিক্রি করা হয় না। ছেলেরা আমার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। আমি তেমন কিছু জানি না।’’
হাতীবান্ধা উপজেলা বীজ সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, ‘‘ভুট্টার মৌসুম চলায় সকল কৃষক একই সঙ্গে সার কিনতে আসছেন। যার কারণে মজুদ কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কৃষকরা মজুদ না করে চাহিদা মতো সার কিনলে সমস্যা হতো না। আমরা কৃষক পর্যায়ে কমিটি করেছি। সেই কমিটিও কৃষকদের চাহিদা বিবেচনা করে কৃষি অফিসারদের সহায়তা করবে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে চাহিদা কমে গেলে চাপটাও কমে যাবে।’’
ঢাকা/সিপন/বকুল