অলৌকিক গল্প আমরা প্রায়ই শুনি কিন্তু কোনো কোনো গল্প যেন সময়ের স্রোত পেরিয়েও জীবন্ত হয়ে থাকে মানুষের বিশ্বাসে। একসময় আহ্বান জানালেই পুকুরের পানিতে ভেসে উঠতো সোনার চালুনী। সেই চালুনীতে থাকতো বিয়ের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সোনার গয়না পর্যন্ত! 

এই আশ্চর্য কাহিনীকে কেন্দ্র করে পুকুরটির নাম রাখা হয় ‘সোনাচালুনী’। আর সেই পুকুরের পাশে গড়ে ওঠে একটি বিদ্যালয়, যার নামও রাখা হয় সোনাচালুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়নের শান্তিপূর্ণ গ্রাম বিষ্ণপুর। সবুজে ঘেরা শান্ত এই গ্রামেই রয়েছে এক রহস্যময় ইতিহাস ‘সোনাচালুনী পুকুর’। প্রথমে মাছ চাষের জন্য খনন করা হলেও, পরে এটি পরিণত হয় এক অলৌকিক গল্পের পটভূমিতে।

জনশ্রুতি আছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যখন বিয়ে বা বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন, তখন তারা এই পুকুরে আহ্বান জানাতেন। আর অদ্ভুতভাবে পানির ওপর ভেসে উঠতো সোনার চালুনী। সেই চালুনীতে থাকতো বিয়ের আসবাবপত্র, বাসনপত্র এমনকি সোনার অলংকারও। অনুষ্ঠান শেষে সব কিছু আবার পুকুরে ফিরিয়ে দিলে, সেগুলো পানির সাথে ভেসে অদৃশ্য হয়ে যেত। তবে অনেকের বিশ্বাস- পুকুরে কোনো দেবতা রয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, ব্রিটিশ আমলে পুকুরটি খনন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার দিননাথ মোহন। পুকুরটি মাছ চাষের জন্য খনন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এটি ঘিরে গড়ে ওঠে এক অলৌকিক কাহিনি— যা আজও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। 

বিষ্ণপুরের স্থানীয় বাসিন্দা শ্রী ডাবলু চন্দ্র বর্মন জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা এই অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন বলে শুনেছেন তারা। একসময় পুকুরে আহ্বান জানালে সোনার চালুনী ভেসে আসতো। কিন্তু একদিন, এক ব্যক্তি অনুষ্ঠান শেষে সোনার সম্পূর্ণ জিনিসপত্র ফিরিয়ে না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন। তারপর থেকেই রহস্যময়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় সেই ‘সোনার চালুনী’র ভেসে ওঠা। কথিত আছে, সেই জিনিসপত্র যিনি নিজের কাছে রেখেছিলেন, পরবর্তীতে তিনি ও তার পরিবার নানা দুর্ভাগ্যের শিকার হন।

১৯৭০ সালের দিকে পুকুরটির মালিক হন নফিজ উদ্দিন ও তার ছেলে ওয়াজেদ চৌধুরী। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে তারা পুকুরের পাশের জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। সেই থেকেই পুকুরের নাম অনুসারে বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় সোনাচালুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সোনাচালুনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শেফালী রাণী শর্মা বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, এই পুকুরে সোনার চালুনী ভেসে আসতো। সেই কারণেই বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় সোনাচালুনী। এখন যদিও এটি কল্পকথা হয়ে গেছে। তবে ঘটনাটি খুব বেশি সময় আগের না। এইতো একশ’ বছর হতে পারে। তাই স্থানীয়দের মনে বিষয়টি এখনও তরতাজা। বয়ষ্কদের অনেকেরই পিতা-মাতা নিজেরা এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। তাই আমরা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।”

সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গেছে অলৌকিক সেই দৃশ্য, কিন্তু এখনো এই পুকুরকে ঘিরে ভেসে বেড়ায় রহস্যের ছায়া। সময় বদলেছে, প্রজন্ম পাল্টেছে, কিন্তু সোনাচালুনীর গল্প এখনো বেঁচে আছে মানুষজনের বিশ্বাসে, তাদের মুখের কথায়।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অল ক ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণসায়ের খাল রক্ষায় সাতক্ষীরায় ১৮ সংগঠনের মানববন্ধন

প্রাণসায়ের খাল রক্ষা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানির অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রাণসায়ের খালের পশ্চিম পাশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ইয়ুথ অ্যালায়েন্স, প্রথম আলো বন্ধুসভাসহ ১৮টি যুব সংগঠন এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধনে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আজাদ হোসেন সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক এস এম বিপ্লব হোসেন।

বক্তারা বলেন, একসময় সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত একটি জলাধার। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী ১৮৬০ সালের দিকে শহরের উন্নয়ন, নৌযান চলাচল ও কৃষিকাজের সুবিধার্থে এই খাল খনন করেন। তাঁর নামানুসারেই খালের নাম হয় ‘প্রাণসায়ের খাল’। একসময় খালটি মরিচ্চাপ নদী থেকে বেতনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং নৌযান চলাচল, সেচ ও স্থানীয় বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। শহরের পানি নিষ্কাশন, কৃষি উৎপাদন ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত।

কিন্তু বর্তমানে খালটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে খালের দুই পাশে থাকা এল্লারচর ও খেজুরডেঙ্গীর স্লুইসগেট অপসারণ এবং খালে ময়লা–আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে খালকে বাঁচাতে আগামীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা জানান।

মানববন্ধনে খালের নান্দনিকতা ফিরিয়ে আনতে দুই পাড়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম হাতে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি যথাযথ স্থানে ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ, ড্রেনেজব্যবস্থার সংস্কার, অবৈধ দখল উচ্ছেদ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চালুর দাবি জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রাণসায়ের খাল রক্ষায় সাতক্ষীরায় ১৮ সংগঠনের মানববন্ধন