বিশ্ববাজারে আজ বৃহস্পতিবার তেলের দাম একলাফে প্রায় ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এক দিন আগেই রাশিয়ার দুটি প্রধান জ্বালানি তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। নিষেধাজ্ঞার জেরে সরবরাহ–সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকে তেলের দাম বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে রাশিয়া গড়িমসি করছে, এমন অভিযোগ এনে গতকাল বুধবার রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানি রোসনেফট ও লুকঅয়েলকে নিশানা করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ।

এরপর আজ জিএমটি ৩টা ৩ মিনিট পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ৩ মিনিট) প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১ দশমিক ৫৬ ডলার বা ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়ে ৬৪ দশমিক ১৫ ডলারে পৌঁছায়।

আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ১ দশমিক ৫৩ ডলার বা ২ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে ৬০ দশমিক শূন্য ৩ ডলারে পৌঁছায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি নিষিদ্ধও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মস্কোকে অবিলম্বে ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আরও বলেছে, তারা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত আছে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের চাপ সত্ত্বেও কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা থেকে বিরত থেকেছেন। ট্রাম্প আশা করেছিলেন, আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করতে রাজি হবে।

কিন্তু এখন পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হওয়া নিয়ে কোনো আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়নি। ট্রাম্প বলেন, মনে হচ্ছে এটা করার (নিষেধাজ্ঞা জারির) সময় হয়েছে।

এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য রোসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে এলএনজি আমদানি নিষিদ্ধও অন্তর্ভুক্ত আছে।

নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে, তবে আমি তেলের দামের এ উল্লম্ফনকে বাজারের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছি, কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন হিসেবে নয়।ক্লদিও গালিমবারতি, রিস্টাড এনার্জির পরিচালক

ফিলিপ নোভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সাচদেবা বলেন, ‘রাশিয়ার প্রধান তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য স্পষ্টভাবে ক্রেমলিনের যুদ্ধের অর্থের জোগান বন্ধ করা। এ পদক্ষেপ রাশিয়ার তেলের বাস্তব সরবরাহকে সংকীর্ণ করবে এবং চাহিদা পূরণের জন্য তেলের অন্য বাজারের দিকে ক্রেতাদের যেতে বাধ্য করবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের চাপে যদি দিল্লি রাশিয়ার তেল কেনা কমায়, তবে এশিয়ার দেশগুলো তেলের চাহিদা পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দিকে ঘুরবে বলেও মনে করেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, এতে আটলান্টিকের বাজারে তেলের দাম বাড়বে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনকারী কোম্পানিগুলো বলেছে, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করছে। তারা এটা নিশ্চিত করতে চায় যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রোসনেফট ও লুকঅয়েল থেকে যেন সরাসরি কোনো সরবরাহ না আসে।

তবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সত্যিই বাজারে তেল সরবরাহের মূল কাঠামোয় পরিবর্তন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তারা রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনা করছে। তারা এটা নিশ্চিত করতে চায় যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর রোসনেফট ও লুকঅয়েল থেকে যেন সরাসরি কোনো সরবরাহ না আসে।

জ্বালানি গবেষণা ও পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান রিস্টাড এনার্জির পরিচালক (গ্লোবাল মার্কেট বিশ্লেষণ বিভাগ) ক্লদিও গালিমবারতি বলেন, ‘নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে, তবে আমি তেলের দামের এ উল্লম্ফনকে বাজারের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছি, কোনো কাঠামোগত পরিবর্তন হিসেবে নয়।’

গালিমবারতি আরও বলেন, ‘গত সাড়ে তিন বছরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত প্রায় সব নিষেধাজ্ঞাই দেশটির তেল উৎপাদন বা আয়, কোনোটির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারত ও চীনের ক্রেতারা এখনো রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছেন।’

এদিকে স্বল্প মেয়াদে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত শিথিল করায় ওপেকপ্লাস জোটের সরবরাহ বৃদ্ধিকে বাজারের সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারক উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গালিমবারতি বলেন, মাস শেষ হতে চলেছে। আগামী মাসে যাওয়ার পথে তেলের বাজারে যে তিনটি বিষয়ের দিকে তিনি গভীর নজর রাখবেন, সেগুলো হলো ওপেকপ্লাস দেশগুলোর উৎপাদন শিথিলকরণ, চীনের তেল মজুত বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ।

আরও পড়ুনরাশিয়ার দুটি প্রধান তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের১১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন ন ষ ধ জ ঞ য ক তর ষ ট র র ইউক র ন সরবর হ দশম ক র ওপর আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমার ও ইউএই থেকে কেনা হচ্ছে ১ লাখ টন চাল

মিয়ানমার থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ৫০ হাজার টন নন–বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানি করবে সরকার। মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করা হবে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে। আর ইউএই থেকে আমদানি করা হবে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে। এই দুই দেশ থেকে দুই ধরনের চাল আমদানিতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৪৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ চাল আমদানির দুটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। আমদানির এই প্রস্তাব ছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সভায় অর্থ উপদেষ্টা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ‘অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’ অনুমোদন দিয়ে রেখেছে আগেই। তার অংশ হিসেবেই এ চাল আমদানি করা হচ্ছে।

সূত্রগুলো জানায়, ৫০ হাজার টন নন–বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৮টি দরপত্র জমা পড়ে এবং প্রতিটিই আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। তবে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়েছে ইউএইর প্রতিষ্ঠান ক্রেডেন্টওয়ান এফজেডসিও। প্রতি টন চালের দাম ঠিক হয়েছে ৩৫৫ দশমিক ৯৯ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে ৫০ হাজার টন নন–বাসমতী সেদ্ধ চালের দাম পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার থেকে জিটুজি পর্যায়ে ৫০ হাজার টন আতপ চাল আমদানি করা হবে। এই চালের দাম পড়ছে প্রতি টন ৩৭৬ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার করে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই চাল আমদানি করতে মোট ব্যয় হবে ২২৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন থেকে এই চাল আমদানি হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার রাইস ফেডারেশনের কাছে এ প্রস্তাব পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। সাড়া দিয়ে মিয়ানমার রাইস ফেডারেশন চাল সরবরাহের আগ্রহ জানিয়ে ফিরতি চিঠি পাঠায়।

এ ছাড়া ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করতে ১২ কোটি ৫৩ লাখ পাঠ্যবই ছাপা, বাঁধাই ও সরবরাহ কাজের প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি। বইগুলো ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য, যা মাধ্যমিক স্কুল, দাখিল মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা ও ইংরেজি উভয় সংস্করণে বিতরণ করা হবে।

এ ছাড়া রাশিয়া, মরক্কো ও সৌদি আরব থেকে ৬৬৪ কোটি টাকায় এক লাখ পাঁচ হাজার টন সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি।

এদিকে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ২০২৬ সালে ২৮ লাখ পাঁচ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জিটুজি ভিত্তিতে আটটি দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে এসব তেল কেনা হবে।

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিটি ‘বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ই-পাসপোর্টের কাঁচামাল সংগ্রহ করবে। প্রকল্পটি জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পে বর্তমান মজুত কাঁচামাল দিয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট তৈরি করা যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তেলের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ
  • দেশে সোনার দাম কীভাবে ঠিক হয়, কেন ভারত ও দুবাইয়ের চেয়ে দাম বেশি
  • আবদুল আউয়াল মিন্টু ‘টপ অ্যাগ্রি-ফুড পাইওনিয়ার-২০২৫’ পুরস্কার পেলেন
  • মিয়ানমার ও ইউএই থেকে কেনা হচ্ছে ১ লাখ টন চাল
  • ভেজাল তেলে গাড়ির ক্ষতি, খরচ বাড়ছে মালিকদের
  • সততা জাতির অগ্রযাত্রার চালিকা শক্তি: সিনিয়র সচিব 
  • বড়পুকুরিয়ায় সব ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ, ৮ জেলায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাট
  • চীনের আধিপত্য মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়ার বিরল খনিজ চুক্তি
  • শেরপুরে পোস্ট অফিস থেকে জাল টাকা সরবরাহ, গ্রেপ্তার ২