সব দলের ঐক্য ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কঠিন হবে: নাগরিক কোয়ালিশন
Published: 13th, November 2025 GMT
‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো বলে মন্তব্য করেছে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘নাগরিক কোয়ালিশন’। তবে তারা মনে করছে, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া এর পূর্ণ বাস্তবায়ন দুরূহ হবে। আদেশ অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি।
বৃহস্পতিবার প্ল্যাটফর্মের পক্ষে এমন বিবৃতি পাঠিয়েছেন নাগরিক কোয়ালিশনের সহসমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর। বিবৃতিতে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ শিরোনামে গেজেট প্রকাশ করেছে। গেজেট প্রকাশের আগে আজই জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই আদেশ প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং সবাইকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ সব সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংস্কারের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য গণভোট আয়োজনের রূপরেখা তুলে ধরেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রণয়নকে স্বাগত জানিয়ে নাগরিক কোয়ালিশন বলেছে, এই আদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হবে। আমরা মনে করি, ইতিপূর্বে প্রকাশিত ঐকমত্য কমিশনের খসড়া প্রস্তাবের কিছু ধারা ও তফসিল (নোট অব ডিসেন্ট–সংক্রান্ত) সম্পর্কিত ব্যাপারে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের যে আশঙ্কা বা আপত্তি ছিল, সেটির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়েছে।
আনুপাতিক ভোটের (পিআর) ভিত্তিতে সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন—গত মে মাসে ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তুলে ধরা নাগরিক কোয়ালিশনের এ দুটি প্রস্তাব গণভোটের প্রশ্ন হিসেবে রাখা হয়েছে।
এতে প্ল্যাটফর্মটি আনন্দিত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর ও ভারসাম্যমূলক উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠিত হবে, যারা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আমাদের দেশে সব ধরনের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক উত্তরণে ভূমিকা রাখবে।
বিবৃতি বলা হয়েছে, আগামী সংসদ যাতে একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবেও কাজ করতে পারে এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট যাতে একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়—এমন দুটি বিষয়ও কোয়ালিশনের প্রস্তাবে ছিল। এগুলো সরকার গ্রহণ করায় প্ল্যাটফর্মটি আনন্দিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম র জন ত ক সরক র গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের শেষ চেষ্টা, বিএনপি–জামায়াত–এনসিপি কী ভাবছে
সরকার আহ্বান জানালেও জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। বড় দুই দলই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নিয়ে নিজ নিজ অবস্থানে অটল। এ বিষয়ে সৃষ্ট জট খুলতে সরকারের শেষ চেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সাত দিনের সময় দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার সে সময় শেষ হয়েছে। এখন এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ভিত্তি ধরে একটি সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। দলগুলোও সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে উপদেষ্টারা নিজেরা নিয়মিত আলোচনা করছেন। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করতে পারেন।
সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একই দিনে করা এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে চায় সরকার।সূত্র জানায়, সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে একটি খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার কথা। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিদাওয়ার মধ্যে কিছুটা সমন্বয় করে সমাধান বের করার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একই দিনে করা এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে চায় সরকার।
এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের এ উদ্যোগকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি। পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনসহ যেসব সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপির ভিন্নমত আছে, সেগুলো নিয়ে নতুন করে আর আলোচনার সুযোগ আছে বলেও মনে করে না দলটি। তারা মনে করে, সংস্কার বা সনদ নিয়ে আলোচনার ‘চ্যাপ্টার ক্লোজড’।
বিএনপির পূর্ণ মনোযোগ এখন ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে। তারা জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের দাবিতে অনড়। আর সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আদেশ জারি নিয়ে বিএনপির আপত্তি আছে। তারা ক্ষমতায় গেলে নিজেদের ভিন্নমত অনুসারে সংবিধান সংস্কার করতে চায়।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায়, দ্রুত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করা হোক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট চায় দলটি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে বড় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল।
জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আরও কিছু দল মনে করে, এখানে সরকারকে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সংকট ও অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।
বিএনপি সূত্র জানায় তারা মনে করে, সংস্কার বা সনদ নিয়ে আলোচনার ‘চ্যাপ্টার ক্লোজড’।কমিশনের সুপারিশরাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা