২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহ্যগতভাবে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান প্রতি চার বছর পর ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। নতুন প্রশাসনে নিজের পছন্দমতো মন্ত্রীসভাও ইতোমধ্যে সাজিয়ে ফেলেছেন তিনি।

তবে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শেষদিককার সময়টা খুব একটা যে সুখনীয় হয়নি এবং তিনি তার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার গড়তে একপ্রকার ব্যর্থ হয়েছেন তা ওঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির একটি প্রতিবেদনে। দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তার রাজনৈতিক সাফল্য থেকে শুরু করে ব্যর্থতার সালতামামি।

যুক্তরাষ্ট্রের যত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচনের মাধ্যমে আমেরিকার জনগণের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, তা বাইডেনের ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে মাত্র ৩৯% মানুষ তার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। যা তার মেয়াদের শুরুতে ছিল ৫৭%। তার জনপ্রিয়তা যে তার শাসনামলের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে তা গ্যালাপের জরিপই বলে দিচ্ছে। এমন বিষণ্ন সমাপ্তি বিশ্ব সচরাচর দেখেনি মার্কিন প্রেসিডেন্টদের বেলায়।

ক্ষমতার একদম শেষদিকে এসে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি চাই ইতিহাস বলুক আমি এসেছিলাম অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। আমি সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এটি করেছি।

যদিও জো বাইডেন তার প্রেসিডেন্সির শেষ পর্যায়ে এসে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বাইডেন এবং তার প্রশাসনকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে, যার কিছু ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে অনেক ঘটনাই চাইলেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন কিংবা এড়িয়ে যেতে পারতেন। তার একাধিক সিদ্ধান্তের কারণে মার্কিন প্রশাসনকে চড়ামূল্য দিতে হয়েছে।

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের সময় যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রথম বড় ভুল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ফলে তার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং তার নেতৃত্বের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। 
সেবছর আগস্ট মাস শেষ হওয়ার আগেই, বাইডেনের গ্যালাপ রেটিং ৫০%-এর নিচে নেমে যায়।

দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও বাইডেনের শুরুর সময়টি সুখকর ছিল না। ২০২১ সালের গ্রীষ্মে মুদ্রাস্ফীতি ৫%-এর সীমা অতিক্রম করে ৯.

১%-এ পৌঁছায়। যা গত ৩০ বছরে প্রথমবারের মতো ঘটেছিল। যদিও ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে মুদ্রাস্ফীতি ৩%-এর নিচে নেমে আসে, বেকারত্বের হার কমেছিল, অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল, তারপরও দেশটির ভোটাররা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন।

এদিকে কোভিড-পরবর্তী মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি সামলাতে ব্যাপক হিমশিমও খাচ্ছিলেন বাইডেন। এর ফলে সমালোচনার মুখেও পড়েন তিনি। সেখানকার অভিবাসীদের উত্তরাঞ্চলীয় শহরে স্থানান্তরের ঘটনা প্রশাসনকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় ফেলে দেয়। এর পাশাপাশি কোভিড পরীক্ষার কিট ও শিশুখাদ্যের ঘাটতি, ডিমের উচ্চমূল্য, গর্ভপাত অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত রায়ের অবসান এবং ইউক্রেন ও গাজার যুদ্ধের মতো ঘটনা নতুন নতুন সমস্যায় ফেলে।

ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের সমর্থন দেশটির মাঝে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিতর্ক সৃষ্টি করে। এতে তার জনপ্রিয়তা আরও কমে যায়। আর ন্যাটো ইস্যুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যে একপ্রকার বাইডেনের সিদ্ধান্তেরই ফসল সেটি ওপেন সিক্রেট।

বাইডেনের আরেকটি দুর্বলতা ধরা হয় তার পড়তি বয়সকে। এক সময় তিনি দক্ষ বক্তা ও নানা সমস্যার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পরিচিত থাকলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত জনসাধারণের কাছে তাকে ডুবন্ত নৌকার মতোই অর্থহীন করে তোলে।

দেশটির বিশেষ কাউন্সিল রবার্ট হার একটি প্রতিবেদনে তাকে দুর্বল স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন। যা ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করে।  

এছাড়াও মিডিয়ার সঙ্গে বাইডেনের যোগাযোগ ক্রমশ কমে আসে। তার ভুল ও অসাবধান নানা মন্তব্য রিপাবলিকানদের কাছে আক্রমণের অস্ত্র হয়ে ওঠে। শুরুর দিকে প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য কিছু আইন পাস হলেও পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ ও জনসাধারণের কাছে না পৌঁছাতে পারার কারণে বাইডেন প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।

তবে এতসব ব্যর্থতার মাঝে তার যে সাফল্য ছিল না তা নয়। তিনি তার প্রশাসনে অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের যুক্ত করেছিলেন। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ছিলেন সেনেটে তার পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টাদের একজন। ট্রেজারি সেক্রেটারি ছিলেন জ্যানেট ইয়েলেন। যিনি আগে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান ছিলেন।

তিনি স্বাস্থ্যসেবা ভর্তুকি বৃদ্ধি, কোভিড ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য অর্থায়ন এবং শিশু দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়ে প্রশংসিতও হয়েছেন সবার কাছে।

তবে এই সাফল্য চ্ছেদ পড়ে তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে কর এবং অস্ত্র-সংক্রান্ত মামলার বিষয়টিতে। এটি বাইডেনের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ছেলে হান্টারকে মাফ করার সিদ্ধান্তও ব্যাপক সমালোচিত হয় সেসময়।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বাইডেন তার পুনর্নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তবে তার রাজনৈতিক প্রচারণা ও শারীরিক দুর্বলতা সেসময় সমালোচিত হয়। অন্যদিকে ট্রাম্পকে এগিয়ে নিতে থাকলে তার পরিবর্তে তিনি তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য মনোনীত করেন। তবে নারী নেতৃত্বে দেশটির মানুষ খুব একটা ভরসা করতে না পারায় হিলারী ক্লিনটনের মতো কমলাকেও পরাজয় বরণ করতে হয়। যা বাইডেন প্রশাসনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা বলে বিবেচনা করা হয়।

বাইডেন যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা না দিয়ে দলকে নতুন নেতৃত্বের সুযোগ দিতেন, তাহলে হয়ত তার উত্তরাধিকার ও সাফল্য নিশ্চিত হতো।

এদিকে নতুন মেয়াদে বন্ধু ইলন মাস্ককে মূল হাতিয়ার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। ট্রাম্পের দাবি তিনি বাইডেনের অর্জনগুলোকে ভেঙে ফেলে আমেরিকাকে আবার মহান করার চেষ্টা করবেন। তবে সে যাত্রায় কতটুকু সফল হবেন ট্রাম্প‌ তা হয়ত গ্যালাপের নতুন কোনও জরিপই বলে দেবে।

আর জো বাইডেনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কীভাবে প্রস্তুত হবে আরেকটি নতুন নির্বাচনে জয়ের জন্য তা ট্রাম্পের অর্জন ও নতুন প্রশাসনের কার্যকলাপই বলে দেবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য

চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে কর-পরবর্তী নিট মুনাফায় (এনপিএটি) পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ সমন্বিতভাবে ব্যাংকটি ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা অর্জন করেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৮২৮ কোটি। ব্যাংকিং খাতে এটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।  

একক (স্ট্যান্ডঅ্যালন) ভিত্তিতে ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকায়, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ। ব্যাংকিং খাতে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সত্ত্বেও ব্র্যাক ব্যাংক ব্যালান্স শিটে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজের চেয়েও অনেক বেশি। এ সময় ব্যাংকটি এককভাবে গ্রাহক আমানতে ৩৪ শতাংশ এবং ঋণে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২৮ এপ্রিল ২০২৫ ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির ২০২৪ সালের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করে। ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণীতে উঠে আসা উল্লেখযোগ্য সূচকগুলো এখানে তুলে ধরা হলো—

শক্তিশালী গ্রাহক-ভিত্তি এবং খাতভিত্তিক সহায়তা

২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেল ব্যাংকিং সেগমেন্টে সাড়ে তিন লাখ নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকটির রিটেইল ব্যাংকিং সেগমেন্টে এখন মোট গ্রাহকসংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এই অর্জন পারসোনালাইজড ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান ব্যাংকিং প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারে ব্যাংকটির নিবেদিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন। দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর এসএমই খাত। ব্যাংকটি এই সেগমেন্টে এক লাখের বেশি নতুন সিএমএসএমই গ্রাহক যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে, যা উদ্ভাবন ও তৃণমূল উদ্যোক্তাদের সহায়তার ব্যাপারে ব্যাংকটির ব্যক্ত করা প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এ ছাড়া ব্যাংকটি করপোরেট ব্যাংকিং সেগমেন্টে ক্লায়েন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৯ হাজার। এভাবে ব্র্যাক ব্যাংকের করপোরেট ব্যাংকিং সেগমেন্ট দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

কৌশলগত ডিজিটাল উদ্যোগ

২০২৪ সালেও ব্র্যাক ব্যাংক ডিজিটাল রূপান্তরযাত্রায় ধারাবাহিক বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। নতুন অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ৭৭ শতাংশই খোলা হয়েছে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট ওপেনিং প্ল্যাটফর্ম ‘ইকেওয়াইসি’র মাধ্যমে। ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকটির আস্থা অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ লাখ। এই ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপে ২০২৪ সালে ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি লেনদেনের মাধ্যমে দেড় লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা গ্রাহকদের সহজ, সুবিধাজনক ও নিরাপদ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ব্যাপারে ব্যাংকটির প্রতিশ্রুতি প্রতিফলন।

সমাজের মানুষকে ক্ষমতায়ন এবং টেকসই উন্নয়নকে উৎসাহিতকরণ

ব্র্যাক ব্যাংকের গৃহীত উদ্যোগ আর্থিক সাফল্যের চেয়েও বেশি কিছু। ব্যাংকিং খাতে মোট জামানতবিহীন সিএমএসএমই ঋণের ৪৩ শতাংশই অর্থায়ন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটির ‘উদ্যোক্তা ১০১’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ২১০ জন নারী উদ্যোক্তা বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা পেয়েছেন। ৯৭৯ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক গ্রামীণ উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

বৈশ্বিক খাতে অবদান এবং পরিবেশগত উন্নয়ন

রপ্তানিতে ২.০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানিতে ৩.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রম সম্পন্নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সবুজ কারখানা ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক পরিবেশগত খাতে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান

একটি দায়িত্বশীল করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০২৪ সালে কর প্রদানের মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক সরকারের রাজস্ব কোষাগারে ১ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকার অবদান রেখেছে।

নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ

দেশের আরও বেশি মানুষের কাছে সহজ ও সুবিধাজনক ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে ব্র্যাক ব্যাংক নিজেদের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করে চলেছে। ২৬৩টি শাখা ও উপশাখা, ৩২৯টি এটিএম, ৪৪৬টি এসএমই ইউনিট অফিস এবং ১ হাজার ১১৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্কগুলো মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। সর্বাধিক বিস্তৃত ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও উন্নত, সহজ, সুবিধাজনক ও উপভোগ্য ব্যাংকিং সেবা দিতে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০২৪ অর্থবছরে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স

• সমন্বিত শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২৩ সালের ৪.৩০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে ৬.৯৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

• শেয়ার প্রতি সমন্বিত নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) আগের বছরের তুলনায় ৩৭.৬০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪.১১ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

• শেয়ার প্রতি সমন্বিত নিট ক্যাশ ফ্লো (এনওসিএফপিএস) ২০২৩ সালের ৩৭.০৫ টাকার তুলনায় ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০.৯১ টাকায়।

• ইয়ার-অন-ইয়ার ভিত্তিতে ব্র্যাক ব্যাংকের লোন পোর্টফোলিও বেড়েছে ২০ শতাংশ, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ।

• এ সময় গ্রাহক আমানত ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাভারেজ ছিল ৭ শতাংশ।

• সমন্বিত রিটার্ন অন ইকুইটি (আরওই) এবং রিটার্ন অন অ্যাসেট (আরওএ) যথাক্রমে ১৯.৮০ শতাংশ এবং ১.৫১ শতাংশ।

• ঋণ প্রবৃদ্ধি, দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা এবং বেশি নন-ফান্ডেড আয়ের ফলে ইন্টারেস্ট আয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত আয় ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

• ব্যাংকের কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মানবসম্পদ, প্রযুক্তি এবং অবকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের ফলে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মোট সমন্বিত পরিচালন ব্যয় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

• বিশেষ করে আন্ডাররাইটিং, মনিটরিং এবং রিকভারির ওপর জোর দেওয়ার ফলে নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ২০২৩ সালের ৩.৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ২.৬৩ শতাংশ হয়েছে।

প্রবৃদ্ধিযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক রেগুলেটরি ক্যাপিটাল বৃদ্ধির প্রতি জোর দিয়েছে। সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০২৪ সালে ব্যাংকটির রেগুলেটরি ক্যাপিটাল ৭ হাজার ১৪৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালে ছিল ৫ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা।

২০২৪ অর্থবছরের এই অসাধারণ অর্জন সম্পর্কে মন্তব্য করে ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালে আমাদের এই অর্জিত সাফল্য গ্রাহক, সমাজ ও দেশের প্রতি ব্র্যাক ব্যাংকের অবিচল প্রতিশ্রুতির উদাহরণ। গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের আস্থা ও বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আমরা উদ্ভাবন, ক্ষমতায়ন এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর।’

সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সব স্টেকহোল্ডারের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক এখন এক আস্থার নাম। করপোরেট সুশাসন, কমপ্লায়েন্স এবং মূল্যবোধনির্ভর ব্যাংকিংয়ে ব্র্যাক ব্যাংক রোল-মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এমন অর্জনের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহকদের প্রতি—তাঁদের অবিচল আস্থার জন্য; আমাদের পরিচালনা পর্ষদের প্রতি—তাঁদের ধারাবাহিক দিকনির্দেশনার জন্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি—চ্যালেঞ্জিং সময়েও তাঁদের দূরদর্শী রেগুলেটরি দিকনির্দেশনার জন্য।’

আর্থিক তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে: https://www.bracbank.com/en/investor-relations#financialStatements

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ৫ বছরে, অস্ট্রেলিয়ার বিনোদন বাজার বাড়ছে
  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • জ্বালানি তেলের দাম কমল লিটারে ১ টাকা
  • শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য
  • আইন সংশোধন করে কি ঠেকানো যাবে ইন্টারনেট বন্ধ
  • ম্যারিকোর ১ হাজার ৯৫০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা
  • অর্থনীতির আকারে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দশম
  • ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • সিটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা