খুবি শিক্ষার্থী অর্ণবের সৎকার সম্পন্ন, হয়নি মামলা
Published: 25th, January 2025 GMT
অর্ণব কুমার সরকার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের এমবিএর শিক্ষার্থী ছিলেন। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। তবে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে তাদের সেই স্বপ্ন। ছেলেকে হারিয়ে এখন নির্বাক অর্ণবের বাবা-মা ও ছোট ভাই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে অর্ণবের মরদেহ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে প্রথমে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সৎকার করার জন্য গল্লামারী শ্মশানঘাটে নেওয়া হয়। সেখানেই তার সৎকার সম্পন্ন হয়।
আরো পড়ুন: সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্কের নগরী খুলনা
আরো পড়ুন:
তিন সাঁওতাল হত্যা: সাবেক এমপিসহ আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে সমাবেশ
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড আবরারের ঘটনাকেও হার মানায়
এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। যার মধ্যে দুই জন অর্ণবের সঙ্গে খুবিতে এমবিএ পড়তেন। অপরজন নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তবে তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এমনকি শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলাও হয়নি।
উল্লিখিত তথ্য দিয়ে কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহা.
আরো পড়ুন: সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত
তিনি আরো বলেন, “হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হলেও তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”
খুলনা নগরীর বানরগাতির ইসলাম কমিশনারের মোড় সংলগ্ন একতলা একটি ভবনে বসবাস করেন নিতিশ কুমার সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা। অর্ণবের বাবা নিতিশ কুমার কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী। পড়ালেখার পাশাপাশি অর্ণব তার বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করতেন। পরিবারের সদস্য অর্ণবকে হারিয়ে সবাই যেন নির্বাক।
এখনো অর্ণবের মাকে জানানো হয়নি তার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। তাকে জানানো হয়েছে- ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ছেলেকে হারিয়ে তিনি বিলাপ করছেন। মা-বাবা ও ভাইয়ের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিলাপ করছেন তারা।
অর্ণবের বাবা নিতিশ কুমার সরকার বলেন, “আমার বাবা (অর্ণব) কারো সঙ্গে কোনদিন দুর্ব্যবহার করেনি। কারো সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেনি। আমিও কোনদিন কারো কোনো ক্ষতি করিনি। কেন ওরা আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করল। কার কাছে বিচার দেব আমি।”
অর্ণবের মা চন্ডী রানীকে বিলাপ করে বলতে শোনা যায়, “আমার বুকে ফিরে আয় আমার বাবা”। “আমার নিরীহ বাবা ফিরে আয়।”
অর্নবের ছোট ভাই অনীক কুমার সরকার জানান, আজ তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটের পরীক্ষা ছিল। খুলনা সিএসএস কেন্দ্রে ছিল। বড় ভাইকে হারিয়ে তিনি শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন।
তিনি জানান, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে অর্ণব বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে লাবনী নামে এক বড় আপু তাকে ফোন করে বলেন তার ভাই সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। অর্ণবের সঙ্গে কারো শত্রুতা থাকতে পারে না। তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হল। কার কাছে বিচার দিলে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়া যাবে জানি না।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা এলাকায় অর্ণব কুমার সরকার চা পান করছিলেন। এ সময় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে আসা সশস্ত্র যুবকরা অর্ণবকে প্রথমে গুলি করে। গুলি শরীরে লাগলে অর্ণব রাস্তার ওপর পড়ে যান। পরে সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অর্ণবকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অর্ণবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ম র সরক র ঘটন য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বাসাবাড়িতে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু নিয়োগ বন্ধে আইন করার সুপারিশ
বাসাবাড়ির কাজে তথা গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করার পাশাপাশি কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজ করানো হলে তা শিশুশ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫-তে বলা হয়েছে, ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না।
শ্রম সংস্কার কমিশন এ প্রসঙ্গে বলেছে, গৃহকর্মে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিয়োগ বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। এর আগপর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে ‘গৃহকর্মীর কল্যাণ ও সুরক্ষা নীতিমালা–২০১৫’–এর যথাযথ বাস্তবায়ন।
নিয়োগের ক্ষেত্রে আবাসিক, অনাবাসিক, খণ্ডকালীন বা স্থায়ী—সব ধরনের গৃহশ্রমিকদের জন্য কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা উল্লেখ করে একটি স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্মসংস্থান চুক্তি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। পাশাপাশি নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে শ্রমিকের কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি কার বরাবর, কোন স্থানে এবং কীভাবে দায়ের করবেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাসহ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
গৃহশ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন দক্ষতা অর্জনের জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে গৃহকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া গৃহকর্মীদের সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার প্রদানেরও সুপারিশ করেছে কমিশন।
পারলারের কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নেওয়ার পরামর্শ
এদিকে বিউটি পারলার খাতের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র বা ডে কেয়ার সুবিধা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতের কথা বলেছে কমিশন।
অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ খাতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের সুপারিশও করেছে কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের কাজের মান ও ঝুঁকি বিবেচনা করে সুনির্দিষ্ট মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে পদোন্নতি কাঠামো তৈরি করতে হবে।
দেশের সব বিউটি পারলার শ্রমিকদের পেশাগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা সুরক্ষার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়া, অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করাসহ সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নির্দেশিকা প্রণয়নের কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিউটি পারলারের কর্মীদের বড় একটি অংশ রাতে বাসায় ফেরে। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে ও রাত্রিকালীন বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হয়রানি প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব শ্রমিকের সামাজিক মর্যাদা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।