অর্ণব কুমার সরকার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের এমবিএর শিক্ষার্থী ছিলেন। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। তবে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছে তাদের সেই স্বপ্ন। ছেলেকে হারিয়ে এখন নির্বাক অর্ণবের বাবা-মা ও ছোট ভাই।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে অর্ণবের মরদেহ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে প্রথমে তার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সৎকার করার জন্য গল্লামারী শ্মশানঘাটে নেওয়া হয়। সেখানেই তার সৎকার সম্পন্ন হয়। 

আরো পড়ুন: সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্কের নগরী খুলনা

আরো পড়ুন:

তিন সাঁওতাল হত্যা: সাবেক এমপিসহ আসামিদের গ্রেপ্তার দাবিতে সমাবেশ

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড আবরারের ঘটনাকেও হার মানায়

এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। যার মধ্যে দুই জন অর্ণবের সঙ্গে খুবিতে এমবিএ পড়তেন। অপরজন নর্থওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তবে তাদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। এমনকি শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলাও হয়নি। 

উল্লিখিত তথ্য দিয়ে কেএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহা.

আহসান হাবীব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‍“মরদেহের সৎকারসহ অন্যান্য কারণে নিহতের পরিবারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সময় লাগায় মামলা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে, রাতেই মামলা রেকর্ড হওয়ার কথা রয়েছে।”

আরো পড়ুন: সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত

তিনি আরো বলেন, “হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হলেও তাদের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।” 

খুলনা নগরীর বানরগাতির ইসলাম কমিশনারের মোড় সংলগ্ন একতলা একটি ভবনে বসবাস করেন নিতিশ কুমার সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা। অর্ণবের বাবা নিতিশ কুমার কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী। পড়ালেখার পাশাপাশি অর্ণব তার বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করতেন। পরিবারের সদস্য অর্ণবকে হারিয়ে সবাই যেন নির্বাক। 

এখনো অর্ণবের মাকে জানানো হয়নি তার ছেলেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। তাকে জানানো হয়েছে- ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ছেলেকে হারিয়ে তিনি বিলাপ করছেন। মা-বাবা ও ভাইয়ের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিলাপ করছেন তারা।

অর্ণবের বাবা নিতিশ কুমার সরকার বলেন, “আমার বাবা (অর্ণব) কারো সঙ্গে কোনদিন দুর্ব্যবহার করেনি। কারো সঙ্গে কথা কাটাকাটি করেনি। আমিও কোনদিন কারো কোনো ক্ষতি করিনি। কেন ওরা আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করল। কার কাছে বিচার দেব আমি।”

অর্ণবের মা চন্ডী রানীকে বিলাপ করে বলতে শোনা যায়, “আমার বুকে ফিরে আয় আমার বাবা”। “আমার নিরীহ বাবা ফিরে আয়।”

অর্নবের ছোট ভাই অনীক কুমার সরকার জানান, আজ তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটের পরীক্ষা ছিল। খুলনা সিএসএস কেন্দ্রে ছিল। বড় ভাইকে হারিয়ে তিনি শোকে স্তব্ধ হয়ে আছেন। 

তিনি জানান, শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে অর্ণব বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে লাবনী নামে এক বড় আপু তাকে ফোন করে বলেন তার ভাই সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। অর্ণবের সঙ্গে কারো শত্রুতা থাকতে পারে না। তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হল। কার কাছে বিচার দিলে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাওয়া যাবে জানি না। 

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা নগরীর শেখপাড়া তেঁতুলতলা এলাকায় অর্ণব কুমার সরকার চা পান করছিলেন। এ সময় ১০-১৫টি মোটরসাইকেলে আসা সশস্ত্র যুবকরা অর্ণবকে প্রথমে গুলি করে। গুলি শরীরে লাগলে অর্ণব রাস্তার ওপর পড়ে যান। পরে সন্ত্রাসীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অর্ণবকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক অর্ণবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ম র সরক র ঘটন য় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে শেয়ার সূচকে পতনের আভাস, বেড়েছে তেলের দাম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবাইকে ‘তেহরান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার’ আহ্বান জানানোর পর বিশ্ববাজারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধের পঞ্চম দিনে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কায় তেলের দাম বেড়েছে, শেয়ারবাজারেও পতনের আভাস মিলেছে।

মঙ্গলবার এশিয়া ও ইউরোপের বাজার খোলার আগেই ট্রাম্প হঠাৎ কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সিচুয়েশন রুম (আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত আলোচনার কক্ষ) প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। মার্কিন প্রশাসনের এমন পদক্ষেপ বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

এর আগে সবাইকে এখনই তেহরান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার আহ্বান জানান ট্রাম্প। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, ইরানের উচিত ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে নেওয়া। ট্রাম্পের এ বক্তব্য ও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ফিউচার্স শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে। ইউরোপিয়ান ফিউচার্স কমেছে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ আজ মঙ্গলবার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সূচকের পতন ঘটতে পারে।

সেই সঙ্গে অপরিশোধিত তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে ২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। পরে অবশ্য দাম আবার কিছুটা কমেছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৭৩ দশমিক ৪৭ ডলার হয়েছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৭২ দশমিক শূন্য ৯ ডলার হয়েছে।

বিশ্ববাজার বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, ‘অনেকে আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইরানে সামরিক অভিযান চালাতে যাচ্ছে। এতে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।’

সোমবার মার্কিন বাজার কিছুটা চাঙা ছিল। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান নাকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে জরুরি যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা থেমে যায়। তবে সোমবার ইসরায়েল তাদের সবচেয়ে বড় হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল, ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো।

এ অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ও মার্কিন সরকারি বন্ডের মতো নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকছেন। সোনার দাম শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩৯৩ ডলার হয়েছে। ১০ বছরের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে ইউরো, ইয়েন ও পাউন্ডের তুলনায় ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে।

ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের বাইরেও এ সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকে নজর রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। আজকের মধ্যেই জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির ঘোষণা করতে পারে। বাজারে ধারণা, ব্যাংক অব জাপান এখনই সুদের হার না বাড়িয়ে অপরিবর্তিত রাখবে। তবে ব্যাংক অব জাপান ভবিষ্যতে বন্ড কেনা কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে কি না, বিনিয়োগকারীরা সেদিকে তাকিয়ে আছেন। এ ছাড়া জাপানের নিক্কেই সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে, যদিও জাপানি মুদ্রা সামান্য দুর্বল হয়ে ডলারপ্রতি ১৪৪ দশমিক ৯৬ ইয়েন হয়েছে।

বাজারে গুঞ্জন আছে, বাজারে বড় অস্থিরতা তৈরি না হতে দিতে ব্যাংক অব জাপান হয়তো আগামী বছর থেকে দীর্ঘমেয়াদি বন্ড কেনা হ্রাস করবে।

এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার অপরিবর্তিত রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ভবিষ্যৎ যে দিকনির্দেশনা দেবেন, সবার নজর এখন সেদিকে। ‍বিনিয়োগকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ফেড বছরের শেষ নাগাদ দুবার সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা আছে, এমন পূর্বাভাস নিয়ে এগোচ্ছেন।

সিকামোর আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের কাজ সবচেয়ে কঠিন। একদিকে শুল্কনীতি, অন্যদিকে বাণিজ্য চুক্তির সময়সীমা—তার ওপর আবার মধ্যপ্রাচ্যের অনিশ্চয়তা। তাঁর মত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এর চেয়ে জটিল হতে পারে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ