ঢাকার তারকা নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘আনন্দমেলা’
Published: 12th, July 2025 GMT
জুলাই মানেই যেন লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে উৎসবের মাস। আর সেই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ–‘আনন্দমেলা’। প্রতি বছরের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের ‘লিটল বাংলাদেশ’ এলাকায় আয়োজিত হতে যাচ্ছে এই বর্ণাঢ্য আয়োজন। ১৯ ও ২০ জুলাই দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে প্রবাসী বাঙালিদের এই সবচেয়ে বড় উৎসবের নবম পর্ব।
দুই দিনজুড়ে গান, নাচ, আবেগ আর দেশীয় সংস্কৃতির উচ্ছ্বাসে ভরে উঠবে লস অ্যাঞ্জেলেসের আকাশ। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন একঝাঁক তারকা– যাদের উপস্থিতিতে এবারের ‘আনন্দমেলা’ হয়ে উঠবে আরও প্রাণবন্ত, আরও জমজমাট। প্রবাসীদের সঙ্গে এই আয়োজনে নেচে-গেয়ে মেতে উঠবেন কণ্ঠশিল্পী প্রীতম হাসান, প্রতীক হাসান, কিশোর দাস, চিত্রনায়ক জায়েদ খান, অভিনেত্রী পারসা ইভানা, মৌসুমী মৌ, নীল হুরে জাহান ও নৃত্যশিল্পী আলিফ, গায়ক আর্নিক, আবু নাঈম, ইচ্ছাসহ অনেকেই। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন।
এর আগে আয়োজনটিতে হাজির হয়েছেন খ্যাতিমান অভিনেতা মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী ও আরিফিন শুভ, পূর্ণিমা ও অপু বিশ্বাসের মতো অভিনেত্রীরা। গান গেয়ে মাতিয়েছেন তাহসান ও এস আই টুটুলের মতো গায়করাও। এই আয়োজনে এবার প্রথমবারের মতো গাইছেন প্রীতম হাসান। এতে পারফর্ম করার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন প্রীতম হাসান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ধারাবাহিকভাবে কনসার্ট করছি। আনন্দমেলাতেও পারফর্ম করব। অনেক বছর ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই আনন্দঘন আয়োজন করে আসছে। তাদের সঙ্গে এবার আমিও আনন্দ ভাগাভাগি করতে গাইব।
আনন্দমেলার আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি নন প্রফিট একটি উদ্যোগ। লস অ্যাঞ্জেলেসের বাংলাদেশিরা এই মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। এই আনন্দমেলাই প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলায় পরিণত হয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের শিল্পীদের সরব উপস্থিতি এবারের উৎসবকে নতুন মাত্রা দেবে।’
আনন্দমেলা আয়োজনের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী এবং প্রেসিডেন্ট শরীফ হাসিবুল জানান, ‘এই আয়োজন কোনো লাভের জন্য নয়। আমাদের মূল লক্ষ্য, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন তৈরি করা এবং তাদের জন্য এমন একটি পরিসর তৈরি করা যেখানে তারা দু’দিন নিখাদ আনন্দে মেতে উঠতে পারেন।’ তারা জানান, দুই দিনের এই আয়োজনে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, থাকবে দেশীয় পণ্য, মুখরোচক খাবার, দেশীয় পোশাক এবং হস্তশিল্পের স্টল। বেলা ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
আরও জানা গেছে, এবারের আনন্দমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লেক প্যারিস সিটি ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়র মাইকেল ভার্গা ও লস অ্যাঞ্জেলেস সিটির কাউন্সিলর হেদার হার্ট। এ ছাড়াও আমন্ত্রিত থাকছেন প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজসেবক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।
আয়োজনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক নাসির খান মৌ এবং প্রধান উপদেষ্টা শিপার চৌধুরী, কনভেনর দাউদ বাফাদিয়া এবং প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন জিয়া ইসলাম।
এবারের আনন্দমেলাও থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই বলা যায়, প্রবাসে থেকেও এক টুকরো বাংলাদেশকে ছুঁয়ে দেখার, আপন সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করার এক অনন্য সুযোগ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স লস অ য ঞ জ ল স র জন য প রব স আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
সাত দিন ‘অন্যদিন…’
কামার আহমাদ সাইমন পরিচালিত এবং সারা আফরীন প্রযোজিত ‘জলত্রয়ী’ সিরিজের দ্বিতীয় অংশ ‘অন্যদিন…’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল। এদিন থেকে টানা সাতদিন রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সাম্ভার প্রেক্ষাগৃহে টানা সাত দিন প্রদর্শিত হবে।
‘অন্যদিন…’ দেশের অন্যতম বিতর্কিত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বের প্রথম সারির চলচ্চিত্র উৎসব ইডফার মূল প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত এই ছবি, কানের সিনেফন্দেশিওনের অফিসিয়াল সিলেকশনে থাকায় বিশেষ নজর কাড়ে। লোকার্নোর পিয়াতজা গ্রান্দায় বাংলাদেশের প্রথম ‘ফিচারড ডিরেক্টর’ হিসেবে সম্মাননা লাভের পাশাপাশি ক্যামডেনের হ্যারেল অ্যাওয়ার্ড ও ফ্রান্সের আর্তে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজসহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।
এদিকে, দেশের রাজনৈতিক কারণে ছবি নিষিদ্ধ থাকার দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এবার মুক্তি পাওয়া প্রসঙ্গে প্রযোজক সারা আফরীন বলেন, “কান, লোকার্নো, ক্যামডেনসহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে যতই স্বীকৃতি ও পুরস্কার পেলেও দেশে ছবিটি দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৪ সালে সানড্যান্স থেকে ‘অন্যদিন…’ গ্রান্ট জেতার পর ২০২১ সালে ইডফায় ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের সময় তাদের ওয়েবসাইটে ছবিটিকে ‘ক্যালাইডস্কোপিক ও ফিলসফিক্যাল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। নিউইয়র্কের মোমি মিউজিয়ামে মাস্টারপিস হিসেবে নির্বাচিত, জুরিখ, সিডনি ও নন্তের ফেস্টিভ্যাল অফ থ্রি কন্টিনেন্টস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণসহ ফিল্ম-ইংক ‘ছবিটা সবচেয়ে বড় পর্দায় দেখানো উচিত’ উল্লেখ করেছে। তবে দেশের সেন্সর বোর্ডের কারণে দীর্ঘদিন আটকে ছিল ‘অন্যদিন…’।”
‘অন্যদিন…’ কামার আহমাদ সাইমনের নির্মিত ‘জলত্রয়ী’র দ্বিতীয় ছবি। এর আগের ছবি ‘শুনতে কি পাও!’
প্যারিসের জর্জ পম্পিদ্যু সেন্টারে সিনেমা দ্যু রিলে শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য গ্রান্ড প্রাইজ (Grand Prix) অর্জন করেছিল এবং মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণশঙ্খ (Golden Conch) পেয়েছিল। এছাড়াও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে দেশীয় চলচ্চিত্র মহলে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। পরিচালক কামার আহমাদ সাইমন জানান,
“একটা ছবিকে গায়েব করা মানে একজন নির্মাতাকে গুম করে দেওয়া। ২৪ সালের জুলাইয়ের আগে ‘অন্যদিন…’ দেখানো বন্ধ ছিল। তাই ঠিক করেছিলাম এরপর আর কোনো ছবি বানাবো না। কিন্তু জুলাই এসে সব কিছু বদলে দিয়েছে। বিগত সময়ের সেন্সর নিষেধাজ্ঞা ছিল ছবিটিকে আটকে রাখার পেছনে, কারণ ছবিটা প্রফেটিক ছিল। কিন্তু এখন সুযোগ এসেছে, তাই এই জুলাইয়েই ছবিটিকে মুক্তি দিচ্ছি।
‘অন্যদিন…’ এর মুক্তি দেশের স্বাধীন চিন্তা ও শিল্পের জোরালো প্রতিনিধিত্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চলচ্চিত্রটি যে শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং এক সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিবাদ ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে, সেটাই দর্শক ও বিশ্লেষকদের কাছ থেকে এই সিনেমার উচ্চ প্রশংসার অন্যতম কারণ।