ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে গত মাসে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের তিন সেকেন্ড পরই এটির জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো প্রায় একযোগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে ইঞ্জিনগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

গত ১২ জুন ওই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ২৬০ জন নিহত হন। ঘটনার পরদিনই ভারতের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করে। আজ শনিবার সংস্থাটি একটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের বিবরণ অনুযায়ী, দুর্ঘটনার দিন উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের আগ মুহূর্ত থেকে শুরু করে বিধ্বস্ত হওয়া পর্যন্ত ঘটনাক্রম নিচে তুলে ধরা হলো—

গ্রিনিচ মান সময় (জিএমটি) অনুযায়ী ৫টা ৪৭ মিনিট (ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ১৭ মিনিট): এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি নয়াদিল্লি থেকে আহমেদাবাদে অবতরণ করে।

৭টা ৪৮ মিনিট (জিএমটি): উড়োজাহাজটিকে বিমানবন্দরের বে-৩৪ থেকে রওনা হতে দেখা যায়।

৭টা ৫৫ মিনিট (জিএমটি): উড়োজাহাজটি বিমান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে ট্যাক্সি ক্লিয়ারেন্সের অনুরোধ জানায়। এর এক মিনিট পর ২৩ নম্বর রানওয়ের দিকে এগিয়ে যায় এবং উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হয়।

৮টা ২ মিনিট (জিএমটি): উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ ‘গ্রাউন্ড কন্ট্রোল’ থেকে ‘টাওয়ার কন্ট্রোলে’ হস্তান্তর করা হয়।

৮টা ৭ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড (জিএমটি): উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়া হয়।

৮টা ৭ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজটি উড্ডয়নের জন্য রানওয়েতে চলতে শুরু করে।

৮টা ৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করে।

৮টা ৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮০ নটিক্যাল মাইলে পৌঁছায়। এর পরপরই এটির ইঞ্জিন দুটির জ্বালানি সরবরাহ সুইচগুলো এক সেকেন্ডের ব্যবধানে একে একে বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং ইঞ্জিন দুটির গতি কমতে শুরু করে।

ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে একজন পাইলটকে অপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করতে শোনা যায়, তিনি কেন জ্বালানি বন্ধ করেছেন। জবাবে অপর পাইলট বলেন, তিনি জ্বালানি বন্ধ করেননি।

বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের ঠিক পরপরই র‍্যাম এয়ার টারবাইন (আরএটি) সক্রিয় করা হয়। আরএটি হলো একটি জরুরি ব্যবস্থা, যা বিমানের ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে ব্যবহার করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের সীমানাপ্রাচীর অতিক্রম করার আগেই উড়োজাহাজটির উচ্চতা কমতে শুরু করে।

৮টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের দুটি ইঞ্জিনই সম্পূর্ণভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। র‍্যাম এয়ার টারবাইনের হাইড্রোলিক পাম্প হাইড্রোলিক শক্তি সরবরাহ করতে শুরু করে।

৮টা ৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের প্রথম ইঞ্জিন বন্ধ অবস্থা থেকে চালু অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।

৮টা ৮ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড (জিএমটি): উড়োজাহাজের দ্বিতীয় ইঞ্জিনও বন্ধ অবস্থা থেকে চালু অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়।

প্রথম ইঞ্জিনটি সফলভাবে চালু হলেও দ্বিতীয় ইঞ্জিনটি চালু হয়নি।

৮টা ৯ মিনিট ৫ সেকেন্ড (জিএমটি): একজন পাইলট জরুরি সংকেত ‘মে ডে’ পাঠান।

৮টা ৯ মিনিট ১১ সেকেন্ড (জিএমটি): ডেটা রেকর্ডিং বন্ধ হয়ে যায়।

৮টা ১৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড (জিএমটি): উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন সরবর হ জ এমট অবস থ ঘটন র র নওয় তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

রপ্তানিতে চার শিল্পপ্রতিষ্ঠান পেল এইচএসবিসি সম্মাননা

রপ্তানি বাণিজ্য ও টেকসই উন্নয়নে অবদানের জন্য ‘এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে দেশের চার শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন বা এইচএসবিসি নবমবারের মতো সেরা রপ্তানিকারকের এই সম্মাননা দিয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

এ বছর মোট চারটি শ্রেণিতে এই চার প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা পাওয়া সব প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানি খাতে অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। পোশাক খাতের জন্য এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স পদক পেয়েছে ডিবিএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফ্লামিংগো ফ্যাশনস। বছরে রপ্তানি আয় ১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি, এমন শ্রেণিতে এই পদক দেওয়া হয়েছে। রপ্তানি আয় বছরে ৫ কোটি ডলারের বেশি, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের এমন সংযোগ শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদক পেয়েছে এনজেড টেক্স গ্রুপ।

এ ছাড়া রপ্তানি আয় বছরে এক কোটি ডলারের বেশি, উৎপাদনশীল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদীয়মান ও অসনাতন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদক পেয়েছে আকিজবশির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জনতা জুট মিলস ও সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজ। সেবা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রপ্তানি খাতে উদীয়মান প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদক পেয়েছে উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড। এ শ্রেণিতে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ছিল ৫০ লাখ ডলার।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ফ্লামিংগো ফ্যাশন রপ্তানিনির্ভর প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর কাছে পোশাক সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে ১১৮ উৎপাদন লাইন। ফ্লামিংগো ফ্যাশনের ৬০ শতাংশ কাঁচামাল স্বনির্ভর। ফ্লামিংগো বছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ পিস পোশাক সরবরাহ করে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পানির পুনর্ব্যবহারসহ নানা টেকসই উদ্যোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

এনজেড টেক্স গ্রুপ বৈশ্বিক পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য উচ্চমানের সুতা এবং কাপড় সরবরাহ করে থাকে। গ্রুপটি বছরে ৫২ হাজার টন সুতা উৎপাদন করে।

আকিজবশির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জনতা জুট মিলস ও সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজ প্রচলিত পাটপণ্য থেকে সরে এসে উচ্চমূল্যের বৈচিত্র্যময় পণ্যের দিকে প্রসারিত হয়েছে। প্রায় ৯০টি দেশে পাটপণ্য রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

উল্কাসেমি প্রাইভেট লিমিটেড প্রযুক্তিভিত্তিক পরিষেবানির্ভর একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের সেমিকন্ডাক্টরের নকশা সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তাইওয়ান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় গ্রাহকদের কাছে উন্নত নকশা পরিষেবা দেয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের উদ্যোক্তারা সময়ের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন। আমরা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তাঁদের পাশে আছি আমরা।’

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এ দেশের উদ্যোক্তাদের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে কাজ করতে হবে। আমাদের অনেক সুযোগ আছে।’

এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুব উর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি বাজার বড় করার সঠিক লক্ষ্য ও উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার–সুবিধা, সঠিক রপ্তানি গন্তব্য ঠিক করা ও বাণিজ্য কূটনীতির দিকে জোর দিতে হবে।’

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম বিশ্বস্ত অংশীদার—অর্থনীতি, ফ্যাশন, জ্বালানি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে এই অংশীদারি রয়েছে। ব্যবসা সহজীকরণে যুক্তরাজ্য বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত উদ্যাক্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় এখন কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। জবাবে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন কিছু ব্যক্তি মামলা করছেন, সেখানে ব্যবসায়ীদের আসামি করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, নির্বাচন হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নির্বাচনই এখন আমাদের একমাত্র চাওয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিলামে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • রাজশাহীতে ওয়াসার মেগাপ্রকল্পের শ্রমিকদের বিক্ষোভ
  • কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে সিপিজের চিঠি
  • পুতিনের জন্য মোদির প্রোটকল ভাঙা যে বার্তা দিল ট্রাম্পকে
  • আমদানি শুরু হওয়ায় চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দামে ধস
  • নোয়াখালীতে গ্যাস সরবরাহের দাবিতে সড়কে বিক্ষোভ 
  • হলিউড অভিনেতা পেরির মৃত্যুর পর কেন আলোচনায় ‘কেটামিন কুইন’ খ্যাত এই নারী
  • ব্যালট ছাপাতে অর্ধেকের বেশি কাগজ সরবরাহ করেছে কেপিএম 
  • যুক্তরাজ্য ও কাতারের যৌথভাবে ১১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা
  • রপ্তানিতে চার শিল্পপ্রতিষ্ঠান পেল এইচএসবিসি সম্মাননা