নির্বাচন কখন হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে: প্রেস সচিব
Published: 10th, February 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন হবে, তা সব রাজনৈতিক দলের চাওয়ার ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা আগেই দুটি সময়ের কথা বলেছেন। একটি চলতি বছরের ডিসেম্বর, অন্যটি সামনে বছরের জুন। রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপর বিষয়টি নির্ভর করছে।
সোমবার রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আগেই তো প্রফেসর ইউনূস দুটি ডেট (নির্বাচনের তারিখ) দিয়েছিলেন। একটা হচ্ছে (চলতি বছরের) ডিসেম্বর, আরেকটা (২০২৬ সালের) জুনে। এখন যদি সব পার্টি মিলে বলে যে না, আমরা ডিসেম্বরেই চাই।…উনি (প্রধান উপদেষ্টা) তো বলেছেন, এমন না যে উনি একটা জায়গায় স্ট্রিক্ট (স্থির) আছেন যে না, আমি জুনেই (নির্বাচন) করব। এ রকম তো আর উনি বলেননি। এটা হচ্ছে পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর কী এক্সপেকটেশন (প্রত্যাশা), তারা কী চায়; সেটার ওপরেই মূলত এটা (নির্বাচনের তারিখ) ডিপেন্ড (নির্ভর) করবে।’
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি তাড়াতাড়ি নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব। তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন যে পুরো কনসেনসাস কমিশনের (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) কাজটাই হবে এই বিষয় (নির্বাচনের তারিখ) নিয়ে তাড়াতাড়ি কাজ করা। আপনারা জানেন, এর আগে আমরা দুটি সময় দিয়েছিলাম। একটা সময় হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর এবং আরেকটা পরের বছর জুনের মধ্যে। সামনে এ বিষয়ে আরও কিছু শুনতে পারবেন।’
একই ধরনের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তেমন কথা হয়নি। জাতীয় নির্বাচন ওনারা দ্রুত চাইছেন, এই ডিসেম্বরেই চাইছেন। সরকারের তরফ থেকে চিন্তাভাবনা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদ দেখবেন, সিদ্ধান্ত হলে জানবেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা হবে বলে জানান শফিকুল আলম।
বইমেলায় সব্যসাচীর স্টলের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমির সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। বাংলা একাডেমিকে দ্রুত ঘটনা জানাতে বলেছেন। কারণ, পুরো ঘটনা তখনো জানতেন না। বইমেলা খুবই পবিত্র জায়গা, তার পবিত্রতা সরকার রাখতে চায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘হয়রানি’ মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে বিএনপি আলোচনা করেছে বলে জানান প্রেস সচিব। অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়েও দলটি কথা বলেছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, বিএনপি বলেছে, এই অভিযানে যেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে। প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকেও বলা হয়েছে, কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে দেওয়া যাবে না। যারা অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে যুক্ত, তাদের এ অভিযানের আওতায় আনা হচ্ছে।
প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে আইন উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদের বলেছেন, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।
বিএনপির তরফ থেকে সংস্কারের বিষয়ে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রেস সচিব।
বিএনপি স্থিতিশীলতার দিকে জোর দিয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। এরপরে দেশের শান্তি ফিরে এসেছে, দেশে তেমন কোনো ধরনের ভাঙচুর দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। একই সঙ্গে বিএনপি এসব ঘটনায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ড স ম বর বল ছ ন বছর র ব এনপ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’