ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মারা গেছেন
Published: 4th, May 2025 GMT
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি মারা যান।
আবদুর রাজ্জাক একসময় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। পরে এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শিশির মনির তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুর কথা জানান। তিনি লিখেছেন, ‘আমার সিনিয়র জনাব ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক স্যার ইবনে সিনা হাসপাতালে আজ বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
জামায়াতের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেন। ২০১৯ সালে তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। পরে আত্মপ্রকাশ করা এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন তিনি। এই রাজনীতিবিদ ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যে যান। ১১ বছর পর গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেশে ফেরেন তিনি।
আরও পড়ুনপুরোনো রাজনীতিতে ফিরে যাওয়া হবে দুঃখজনক২৬ জানুয়ারি ২০২৫২০২০ সালে আবদুর রাজ্জাকের প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় তিনি এবি পার্টির উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সত্তরের দশকের শেষের দিকে লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন আবদুর রাজ্জাক। ১৯৮০ সালে তিনি বার অ্যাট ল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আইন পেশা শুরু করেন। ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যে ফিরে আবার পুরোদমে আইন পেশায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য র স ট র আবদ র র জ জ ক
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে তহবিল গঠনের দাবি
গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন আট বছর গুম থাকা আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তিরা ঠিকমতো চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিতে ভয় পায়, বাড়ির মালিকেরাও বাড়িভাড়া দিতে ভয় পান।
বৃহস্পতিবার ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আহমদ বিন কাসেম এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমাদের ভেতর এখন কী কাজ করছে, তা যদি আমি একটি শব্দে বলতে চাই, সেটা হলো আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।’
গুমের শিকার সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর মতে, গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের ভয় এখন সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘ভীতি শুধু আমাদের ঘিরে নেই। যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের মধ্যেও ভীতি সঞ্চারিত হয়। একটা লোক অনেক মেধাবী। কিন্তু যখন কোনো উদ্যোক্তা জানতে পারেন, এই লোকটা একটা সময় গুম ছিলেন, তাঁকে তিনি চাকরি দিতে ভয় পাচ্ছেন।’
আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমার তো অন্তত একটা ল ডিগ্রি আছে, তাই দাঁড়াতে পারছি। কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তি এই মাসের ভাড়াটা কীভাবে দেবেন, তা জানেন না।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। আপনি যদি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আমাদের ট্যাক্সের (কর) একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। সারা দুনিয়া এগিয়ে আসবে এই ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে অন্তত অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁদের আর চিন্তা করতে না হয়।’
গুমের শিকার হয়ে আহমদ বিন কাসেম আট বছর নিখোঁজ ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গুম করা হয়। আট বছর বন্দিশালায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট মুক্ত হন তিনি।
সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার, দোষীদের ন্যায়বিচার, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু সুপারিশ উঠে আসে।
আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শর্মিলা নওশিন ও তাজরিয়ান আকরামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম।