চাকরির আশায় গিয়ে রণাঙ্গনে নাজির, পরিবারে উদ্বেগ
Published: 4th, May 2025 GMT
প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশ্বাসে ১২ লাখ টাকায় রাশিয়ায় যান টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার নাজির উদ্দিন (৩৭)। প্রথম কিছুদিন সব ঠিকই ছিল। কিন্তু কয়েক দিন পর তাঁকে পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। এরপর রণাঙ্গনে। এখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ভারী অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে নাজির। দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নাজিরের মা, বাবা ও স্ত্রীর।
ঘাটাইলের দীঘলকান্দি ইউনিয়নের কুরমুশী গ্রামের ফয়েজ উদ্দিন ও নূরজাহান বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান নাজির উদ্দিন। তাঁর স্ত্রী ও তিন বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সংসারে সচ্ছলতা আনতে ২০১৭ সালে ইরাকে গিয়েছিলেন নাজির। তিন বছর সেখানে থেকে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেন; কিন্তু সফল হননি। পরে আবার বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যোগাযোগ করেন ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন মিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এ জন্য গুনতে হয় ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘চড়া সুদে ১২ লাখ টাকা ঋণ করে ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমার ছেলেকে রাশিয়া পাঠাই। তাকে প্যাকেজিং কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়। কিছুদিন ভালোই চলছিল। এর মধ্যে মাসখানেক আগে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় নাজির। গত ১৬ এপ্রিল সকালে হঠাৎ সে ফোন করে বলে, তোমাদের সঙ্গে আমার আর দেখা নাও হতে পারে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমাকে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে নেওয়া হচ্ছে। ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব কিছু করা হয়েছে জোর করে।’
এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের শেষ কথা। এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘সরকার যেন আমার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। যারা মিথ্যা আশ্বাসে তাকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিচার চাই।’
নাজিরের মা নূরজাহান বেগম মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলে যে কঠিন বিপদে আছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। এদিকে নাজিরের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে– কিছুই জানি না। মেয়েটা সারাক্ষণ বাবা বাবা করে। প্রতিদিন বাবার আশায় মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকারের প্রতি অনুরোধ, আমার স্বামীকে যেন ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।’
এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তিন বাংলাদেশি নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ইয়াসিন মিয়া শেখ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আকরাম হোসেন। সারাদেশে আরও কয়েকজনের খবর পাওয়া গেছে, যারা এখন রাশিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ কর
এছাড়াও পড়ুন:
চার সংস্থা থেকে আসছে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ
আন্তর্জাতিক চার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থা থেকে ৩৬৪ কোটি ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। গতকাল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ অনুমোদন হয়েছে। আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং শিগগিরই এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইইবি) ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এসব ঋণের অর্থ এলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার চলতি মাসে পাওয়া যাবে। আগামী ২৩ জুন সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই ঋণ অনুমোদন হওয়ার কথা। বিভিন্ন টানাপোড়েনের পর গত মাসে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ। এরপর সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতায় পৌঁছেছে। আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতার কারণে অন্য সংস্থাগুলোও সহজে ঋণ ছাড় করছে।
গতকাল বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দূষণ রোধে বায়ুর মান বৃদ্ধি ও গ্যাস সরবরাহ উন্নয়নে ৬৪ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের পর্ষদ। দুটি প্রকল্পের মধ্যে জ্বালানি খাত নিরাপত্তা জোরদারে ৩৫ কোটি এবং বায়ুমান উন্নয়ন প্রকল্পে ২৯ কোটি ডলার দেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুর মান উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্যাস সরবরাহের সংকট এবং শহর এলাকায় বায়ুদূষণের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের লক্ষ্যে এ দুই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গতকাল এডিবি আলাদা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৯০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা অনুমোদনের তথ্য জানিয়েছে। গতকাল ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবির সদরদপ্তরে পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদ বাংলাদেশের জন্য ব্যাংক খাত সংস্কারে ৫০ কোটি ডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ৪০ কোটি ডলার অনুমোদন করেছে। চলতি মাসের মধ্যেই এই অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে বলে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব কৌশিককে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যার মধ্যে আছে সম্পদের দুর্বল গুণমান, তারল্য সংকট এবং দুর্বল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ। এডিবির অর্থায়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যাংক খাতের মূলধন কাঠামো শক্তিশালী করা হবে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে অর্থায়নের সুযোগ বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে মোট ১০০ ডলার দেওয়ার কথা। ৬৪ কোটি ডলার অনুমোদনের পর বাকি ৩৬ কোটি ডলারও শিগগিরই হয়তো পাওয়া যাবে। আর আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার আগামী সোমবারের পর্ষদ সভায় হয়তো অনুমোদন হয়ে যাবে। এর বাইরে এআইআইবি থেকে ৪৪ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে যা হয়তো পাওয়া যাবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে যা সহায়ক হবে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর পেরিয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। এরপর থেকে প্রতি মাসে কমতে কমতে গত জুলাই শেষে ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে নেমেছিল। অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে এখন আবার রিজার্ভ বাড়ছে। টানা ২০ মাস পর গত এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। অবশ্য এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মার্চ-এপ্রিল সময়ের জন্য ১৮৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর তা ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। এরপর আবার বেড়ে বর্তমানে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। চলতি মাসে বড় অঙ্কের ঋণ যোগ হওয়ার পর রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে বলে তাদের ধারণা।
আইএমএফের শর্ত মেনে গত মে মাসের মাঝামাঝি ডলারের দর বাজারভিত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রিজার্ভের মোটামুটি শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ডলারের দরে তেমন হেরফের হয়নি। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১২২ থেকে ১২৩ টাকা দরে ডলার বেচাকেনা করছে। দীর্ঘদিন ধরে যা ১২২ টাকার মধ্যে ছিল।