প্যাকেজিং কোম্পানিতে চাকরির আশ্বাসে ১২ লাখ টাকায় রাশিয়ায় যান টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার নাজির উদ্দিন (৩৭)। প্রথম কিছুদিন সব ঠিকই ছিল। কিন্তু কয়েক দিন পর তাঁকে পাঠানো হয় সামরিক প্রশিক্ষণে। এরপর রণাঙ্গনে। এখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ভারী অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধে নাজির। দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নাজিরের মা, বাবা ও স্ত্রীর।

ঘাটাইলের দীঘলকান্দি ইউনিয়নের কুরমুশী গ্রামের ফয়েজ উদ্দিন ও নূরজাহান বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান নাজির উদ্দিন। তাঁর স্ত্রী ও তিন বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সংসারে সচ্ছলতা আনতে ২০১৭ সালে ইরাকে গিয়েছিলেন নাজির। তিন বছর সেখানে থেকে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেন; কিন্তু সফল হননি। পরে আবার বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যোগাযোগ করেন ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। ওই প্রতিষ্ঠানের মামুন মিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। এ জন্য গুনতে হয় ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা। 

ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘চড়া সুদে ১২ লাখ টাকা ঋণ করে ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমার ছেলেকে রাশিয়া পাঠাই। তাকে প্যাকেজিং কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়। কিছুদিন ভালোই চলছিল। এর মধ্যে মাসখানেক আগে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় নাজির। গত ১৬ এপ্রিল সকালে হঠাৎ সে ফোন করে বলে, তোমাদের সঙ্গে আমার আর দেখা নাও হতে পারে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমাকে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে নেওয়া হচ্ছে। ১৪ দিনের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব কিছু করা হয়েছে জোর করে।’ 
এটাই ছিল ছেলের সঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফয়েজ উদ্দিনের শেষ কথা। এরপর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘সরকার যেন আমার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। যারা মিথ্যা আশ্বাসে তাকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিচার চাই।’
নাজিরের মা নূরজাহান বেগম মানসিক প্রতিবন্ধী। ছেলে যে কঠিন বিপদে আছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। এদিকে নাজিরের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী কুলসুম বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে– কিছুই জানি না। মেয়েটা সারাক্ষণ বাবা বাবা করে। প্রতিদিন বাবার আশায় মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সরকারের প্রতি অনুরোধ, আমার স্বামীকে যেন ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়।’
এর আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তিন বাংলাদেশি নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ইয়াসিন মিয়া শেখ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আকরাম হোসেন। সারাদেশে আরও কয়েকজনের খবর পাওয়া গেছে, যারা এখন রাশিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম