আজ ৮ মে, বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। সেখানে থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন রক্তরোগবিশেষজ্ঞ ও মুগদা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। পরবর্তী প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়া থেকে বাঁচাতে যা করণীয়, সেসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনেছি তাঁর থেকেই।

থ্যালাসেমিয়া কী

থ্যালাসেমিয়া বংশগত রোগ। এ রোগে রক্তের হিমোগ্লোবিনের গঠন নির্ধারণকারী জিন ত্রুটিযুক্ত হয়। হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকার একটি প্রোটিন, যা ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন বহন করে; আবার কার্বন ডাই–অক্সাইডকে ফুসফুসে ফিরিয়ে আনে, যাতে আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তা বের করে দিতে পারি।

মানবদেহে হিমোগ্লোবিনের গঠন নির্ধারণকারী জিন দুই ধরনের প্রোটিন চেইন থেকে তৈরি হয়। সেসব হলো আলফা গ্লোবিন ও বিটা গ্লোবিন। মানবদেহের দুটি ক্রোমোজম–১৬-তে দুটি করে মোট চারটি আলফা ও দুটি ক্রোমোজম–১১-তে একটি করে মোট দুটি বিটা জিন থাকে। এসব জিনের মধ্যে কারও একটি জিন ত্রুটিযুক্ত, কিন্তু অন্যগুলো স্বাভাবিক হলে তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক। অন্যদিকে যেকোনো দুটি বা এর চেয়ে বেশি জিন ত্রুটিযুক্ত হলে তিনিও থ্যালাসেমিয়ার রোগী।

থ্যালাসেমিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে দুটি আলফা গ্লোবিন বা দুটি বিটা গ্লোবিন অথবা একাধিক আলফা ও বিটা গ্লোবিন জিন ত্রুটিযুক্ত হয়। ফলে শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে কম হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৮ থেকে ১০ গ্রাম/ডেসিলিটারের কম হলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। উল্লেখ্য, থ্যালাসেমিয়ার বাহক মানেই থ্যালাসেমিয়ার রোগী নন। তাঁদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার কোনো লক্ষণ না–ও থাকতে পারে। তবে কারও কারও হালকা রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। তাই তাঁদের চিকিৎসার নিতে হয় না।

আরও পড়ুনথ্যালাসেমিয়া হলে কী করবেন১৮ ঘণ্টা আগেপ্রকারভেদ

থ্যালাসেমিয়া তিন ধরনের—

থ্যালাসেমিয়া মাইনর/ট্রেইট: এটি বাহকের হয়। সাধারণত উপসর্গহীন।

থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া: মাঝারি রক্তাল্পতা দেখা দেয়। নিয়মিত ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত নেওয়ার প্রয়োজন না–ও হতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া মেজর: তীব্র রক্তাল্পতা দেখা দেয়। ২–৪ সপ্তাহ পরপর রোগীকে রক্ত নিতে হয়।

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ

মাঝারি থেকে তীব্র অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা।

শরীর ফ্যাকাশে হওয়া।

দুর্বলতা।

জন্ডিস।

শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া।

পেটের প্লীহা ফুলে পেট বড় হওয়া।

রুচি না থাকা এবং ওজন না বাড়া।

থ্যালাসেমিয়া যেভাবে হয়

স্বামী-স্ত্রী দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, কেবল তখনই তাঁদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাতে পারে। বাহক মা–বাবার থেকে দুটি বা তার অধিক ক্রটিযুক্ত জিন সন্তানের শরীরে এলে শিশুটি থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।

মা–বাবা দুজনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মায়। ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দুজন বাহকের সন্তানও তার মা-বাবার মতো থ্যালাসেমিয়ার বাহক হতে পারে। আর বাকি ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাহক দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মায় না।

থ্যালাসেমিয়া যেভাবে হয় না

মা–বাবার মধ্যে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর অন্যজন বাহক না হলে শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। বাহক ও অ-বাহকের সন্তান ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়ে জন্মাতে পারে। কিন্তু শিশুটি কখনোই গুরুতর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাবে না, অর্থাৎ শিশুটি অসুস্থ হবে না।

আরও পড়ুনথ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে যা জরুরি১২ মে ২০২২স্বামী-স্ত্রী দুজনই যখন বাহক

স্বামী- স্ত্রী দুজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক সন্তান নিতে চাইলে তাঁদের নিয়মিত প্রি-ন্যাটাল বা প্রসব–পূর্ব পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। গর্ভধারণের ১২–১৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশুর থ্যালাসেমিয়া আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। গর্ভের শিশু থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে পৃথিবীতে আনা বা না আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শিশুর থ্যালাসেমিয়া হলে

শিশুর জন্মের এক–দুই বছরের মধ্যেই থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ সময়ের মধ্যে শিশুর বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) করে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব। তবে এর জন্য নিখুঁত ডোনারের প্রয়োজন হয়। ডোনার খুঁজে না পাওয়া এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় এটি সব সময় করা সম্ভব হয় না। তবে নিয়মিত রক্ত দিলে ও পরিপূর্ণ চিকিৎসা নিলে শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং স্বাভাবিকের কাছাকাছি জীবন যাপন করতে পারে।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে হবে

থ্যালাসেমিয়ার বাহককে জানতে হবে, তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক। বাহক শনাক্ত করতে যেসব পরীক্ষা করতে হবে—

রক্তের সিবিসি টেস্ট বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট টেস্ট।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বিশ্লেষণ পরীক্ষা।

ডিএনএ বা জেনেটিক পরীক্ষা।

কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তিনি এমন একজনকে বিয়ে করবেন, যিনি বাহক নন। বাহক ও অ-বাহকের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মানোর সুযোগ নেই। তাই বিয়ের আগে হবু স্বামী–স্ত্রী দুজনকেই রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে তাঁদের দুজনের একজন অন্তত থ্যালাসেমিয়ার বাহক নন।

পরিবারের কারও থ্যালাসেমিয়া থাকলে পুরো পরিবারকে রক্ত পরীক্ষা করে বাহক শনাক্ত করতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হতে হবে। তাহলেই পরের প্রজন্ম রক্ষা পাবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন যেভাবে এতটা আস্থা অর্জন করল১৬ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: থ য ল স ম য় র ব হক পর ক ষ ব হক র

এছাড়াও পড়ুন:

আঙুল হঠাৎ ‘লক’ হয় কেন, হলে কী করবেন

আঙুল সোজা করতে গিয়ে হঠাৎ বেঁকে বা লক হয়ে যেতে পারে। এটাকে বলা হয় ট্রিগার ফিঙ্গার। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যার নাম স্টেনোসিং টেনোসিনোভাইটিস।

আমাদের আঙুল বাঁকা বা সোজা করার কাজটি হয় টেনডন বা রশির মতো একটি বস্তুর মাধ্যমে। হাড়ের সঙ্গে ঘর্ষণ কমাতে কিছু ‘পুলি’–এর মধ্য দিয়ে চলে। এর একটি ‘এ ওয়ান’ পুলি। এটি ফুলে বা আঁটসাঁট হয়ে গেলে টেনডন সহজে নড়ানো যায় না।

এর ফলে আঙুল বাঁকানোর সময় আটকে যায় বা হঠাৎ ক্লিক দিয়ে সোজা হয়। এটাকেই বলা হয় ট্রিগার ফিঙ্গার।

কেন হয়, লক্ষণ

দীর্ঘদিন কারও ডায়াবেটিস থাকলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা (হাইপোথাইরয়ডিজম), হাতের অতিরিক্ত ব্যবহার—যেমন গ্রিপ করে কাজ করা, হাতুড়ি, কাঁচি ইত্যাদির কারণে এটা হয়ে থাকে। এটি বেশি হয় নারীদের। সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সে এটা বেশি হতে দেখা যায়।

সকালের দিকে আঙুল শক্ত হয়ে থাকা বা সোজা হতে না চাইলে বুঝবেন ট্রিগার ফিঙ্গার হয়েছে। এ ছাড়া আঙুল বাঁকিয়ে ছেড়ে দিলে আটকে যায় বা ক্লিক শব্দ দিয়ে সোজা হওয়া, আঙুলের নিচের তালুর গোড়ার দিকে ব্যথা, আবার কখনো কখনো আঙুল একদম ‘লক’ হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন৮ বছর আগে যেমন ছিল সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র, দেখুন ২০টি ছবি৭ ঘণ্টা আগেকরণীয় ও চিকিৎসা

বারবার শক্তভাবে কিছু ধরা বা চেপে ধরার মতো কাজ কমাতে হবে।

ভারী জিনিস তোলা, ঝাড়ু দেওয়া, হাতুড়ি ব্যবহার সীমিত করতে হবে।

একটানা কোনো কাজ না করে মাঝেমধ্যে হাত বিশ্রামে রাখা।

ঘুমের সময় হাত মোড়ানো অবস্থায় না রেখে খোলা রাখতে চেষ্টা করা।

কলম বা হাতলের ওপর হালকা গ্রিপ ব্যবহার করা।

আরও পড়ুনআইপিএস ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার ৫টি কার্যকর উপায়৫ ঘণ্টা আগে

আঙুল সোজা করে রাখার জন্য ফিঙ্গার স্প্লিন্ট বা ওভাল ৮ স্প্লিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে টেনডনে চাপ কমে এবং বেশ আরামও পাওয়া যায়। এ ছাড়া ফিজিক্যাল থেরাপি বা মেশিন থেরাপি দেওয়া যায়। যেমন প্রদাহ কমাতে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, ব্যথা কমাতে টেনস থেরাপি এবং প্রদাহ–ব্যথা কমাতে  ক্রায়োথেরাপি অর্থাৎ বরফ সেঁক বেশ কার্যকর।

ব্যথানাশক ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। যদি ওপরের সব ব্যবস্থা তিন থেকে ছয় মাসে কাজে না আসে, তখন পারকিউটেনিয়াস রিলিজ বা ওপেন সার্জারির মাধ্যমে ‘এ ওয়ান’ পুলি কেটে দেওয়া হয়।

আঙুলের ব্যায়াম

আঙুলের ব্যায়াম বেশ কার্যকর। থেরাপিস্টের মাধ্যমে বা নিজে নিজে ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন ধীরে ধীরে আঙুল নাড়ানো, টেনডন গ্লাইডিং, থেরাপিউটিক পুটি বা বল ব্যবহার করে গ্রিপ শক্তিশালী করা, ব্যথা না বাড়লে ধীরে ধীরে ফ্লেক্সন-এক্সটেনশন ব্যায়াম শুরু করা যায়।

ডা. সাকিব আল নাহিয়ান, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনসারা টেন্ডুলকারই কি ভাই অর্জুনের বিয়ের ঘটক? বিস্তারিত জানুন ছবিতে ছবিতে১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ